সিনথিয়া পারভীন কাকলী
২৮ মে ছিলো “নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস”। ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক সমাবেশে সারাদেশে দিবসটি পালনের ঘোষণা দেন এবং ২০১৫ সালের মধ্যে মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন। এরপর সরকারের নেয়া যথাযথ পদক্ষেপের ফলে ২০০১ সালে যেখানে প্রতি লাখে মাতৃ-মৃত্যুহার ছিল ৩২২ জন সেটি ২০১০ সালে কমে এসে দাঁড়ায় ১৯৪ জনে। ২০১৫ সালের শেষে এটি কমে ১৪৩ জনে দাঁড়াবে বলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর আশা করে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ জাতিসংঘ ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এমডিজি পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০১১ সালে এই সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ বাংলাদেশ সাউথ-সাউথ পুরস্কার লাভ করে। এত সাফল্যের পরও সচেতনতার অভাবে অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু বন্ধ হচ্ছে না। এখনো বাংলাদেশে প্রতিদিন ২০ জন মা’র অনাকাক্সিক্ষত মৃত্যু হয়।
সিডিও সনদের ১২ ধারায় বলা হয়েছে- “১. পুরুষ ও নারীর সমতার ভিত্তিতে পরিবার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীক রাষ্ট্রসমূহ, স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করার জন্য সকল উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।” “২. এই ধারার অনুচ্ছদ ১-এর বিধান ছাড়াও শরীক রাষ্ট্রসমূহ প্রয়োজনের বিনামূল্যে সার্ভিস প্রদান করবে, সেই সাথে গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে মায়ের দুগ্ধদানকালে পর্যাপ্ত পুষ্টির ব্যবস্থা করে গর্ভকাল, সন্তান জন্মদানের ঠিক আগে এবং সন্তান জন্মদানের পরে নারীদের উপযুক্ত সেবা প্রদান করবে।” বাংলাদেশ সিডিও সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও সেই সেবা এখনো সম্পূর্ণ নিশ্চিত করতে পারেনি। গর্ভবতী মায়ের যতœ নিতে নির্দেশ দিয়ে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “আর সন্তানের পিতার দায়িত্ব হলো মাতার খাওয়া-পরার উত্তম ব্যবস্থা করা” (সূরা বাকারা-২৩৩) কেননা এ খাবারে একটি নয় দুটি প্রাণ বাঁচে। গর্ভকালীন এবং শিশুকে দুগ্ধ দানকালে বেশি সতর্ক দৃষ্টি রাখা দরকার। তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে হাদিসে এসেছে- “নিশ্চয় আল্লাহ রোগ এবং দাওয়া (ওষুধ) দুটিই পাঠিয়েছেন এবং প্রতিটি রোগেরই ওষুধ প্রেরণ করেছেন। সুতারাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ করো।” কুরআনে আরো এসেছে- “আমি মানুষকে তার পিতা মাতার প্রতি সদ্ব্যবহারের জোর নির্দেশ দিয়েছি। তার মাতা তাকে কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। দুই বছর তাকে দুধ খাইয়েছে। (সূরা লোকমান) শুধু ইসলাম কেন প্রতিটি ধর্মই মাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। মায়ের প্রতি যতœ নেয়ার তাগিদ দিয়েছে। একটা মানুষের মধ্যে আরেকটা মানুষের বেড়ে ওঠা কম কথা নয়। যার শরীরের মধ্যে শিশুটি গড়ে উঠছে, তার উপরই নির্ভর করে সুষ্ঠু-সুন্দর আগামী প্রজন্ম। মা সুস্থ থাকলে সন্তান সুস্থ থাকবে। সুস্থ সন্তানই আগামীতে সুস্থ জাতি গড়বে। তাই সন্তান মায়ের গর্ভে আসার পর থেকেই মায়ের প্রতি সহানুভূতি ভালবাসার হাত সম্প্রসারিত করা উচিত। পুষ্টিহীন অস্বাভাবিক শিশু, মায়ের অকাল মৃত্যু এগুলোর কোনটাই আমাদের কাম্য হতে পারে না। তাই প্রতিটি মায়ের নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
য় লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন