ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন : আজ খুব ভোরেই ঘুম ভেঙ্গেছে কুসুমের। তীব্র শীতের ভিতর কাঁথাটা মুড়ি দিয়েই জানালা খুলে বাহিরে তাকিয়ে দেখে ঘন কুয়াশায় চারদিকটা যেন হিমসাগরে ডুবে গেছে। বাহিরের কোন দৃশ্যই স্পষ্ট চোখে দেখা যাচ্ছে না। অঝরে ঝরতে থাকা টুপটাপ শিশিরগুলি কেবল টিনের চালে বৃষ্টির মতো ঝরে পড়ছে। হাত পায়ে মোজা লাগিয়ে বাহিরের বারান্দায় এসে দাঁড়ায় কুসুম। তখন পরিচিত এক হিম শির শির ঠা-া বাতাস তার গাটাকে পুরু কাঁপিয়ে দিয়ে গেল। বারান্দার বাইরে উঠোনের এক কোণে বেশ কতকগুলো খড়কুটোর স্তূপ দেখে মাথায় ছোট্ট একটা বুদ্ধি খেলা করে উঠল ওর। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে একটা দিয়াশলাই এনে খড়কুটোগুলো জ্বালিয়ে দিতেই আগুনের তাপ ছড়িয়ে পড়ল চারদিক।‘বাহ্ কি সুন্দর আগুনের তাপ!’-মনে মনে কয়েকবার বলে ফেলল সে। গতকালকে হঠাৎ তার মায়ের পিঠা বানানোর কথা মনে পড়তেই দৌড়ে ঘর থেকে কয়েকটা পুলি পিঠা এনে খাওয়া শুরু করে দেয় কুসুম। খেতে খেতে হঠাৎ একবার আগুনের পাশে তাকিয়ে দেখে ছোট্ট একটা গঙ্গাফড়িং। আগুনের তাপ পেয়ে আরামে ডিগবাজি খেতে খেতে লাফাচ্ছে সেটি। একবার লাফ দিয়ে সোজা কুসুমের পিঠে এসে পড়তেই কুসুম ভয়ে তাকে দুরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। কুসুমের ছুঁড়া দেখে গঙ্গাফড়িংটা তার লাফানো বন্ধ করে দিল। অভিমানে আগুনের পাশটা ছেড়ে একটু দূরে একটা স্বর্ণলতার গায়ে গিয়ে বসল। ঠা-ায় পুরু শরীরটা তার কাঁপছে। এদিকে খড়কুটোগুলো সব পুড়ে আগুন নিভে যাওয়ার মতো অবস্থা। কুসুম সেই গঙ্গাফড়িংটার দিকে অনেকক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে একটা মায়ার বলয় তার হৃদয়ে এঁকে ফেলল। দৌড়ে রান্নাঘর থেকে শুকনো কতকগুলো পাতা এনে আবার আগুন জ্বালিয়ে দেয় সে। তবুও ফড়িংটা আগুনের কাছে আসছে না দেখে কুসুম সেই স্বর্ণলতার কাছে গিয়ে দুহাত দিয়ে গঙ্গাফড়িংটার গায়ে আলতো করে ছুঁতেই ফড়িংটা লাফ দিয়ে কুসুমের হাতে চলে এলো। এবার কুসুম কয়েকটা লকলকে সবুজ ঘাস উঠোনের এক কোনা থেকে তুলে ফড়িংটার মুখের কাছে আনতেই আনন্দে লাফালাফি করে খেতে লাগল সেটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালো বন্ধুত্বে জড়িয়ে পড়ল দুজন। গঙ্গাফড়িংটার এক পায়ে ছোট করে একটা লাল সুতা বেঁধে দিল কুসুম। তারপর থেকে প্রত্যেকদিন খেলার সময়, ঘুমানোর সময় এমনকি স্কুলে যাওয়ার সময়ও একসাথেই থাকতে লাগলো তারা।
একদিন কুসুমের স্কুলে একটা ঘটনা ঘটে গেল। বাংলা স্যারের ক্লাস চলাকালীন কে যেন পিছন থেকে ভাঁজ করা একটা কাগজ খুব জোরে স্যারের মাথায় ছুঁড়ে মেরেছে। এতে বাংলা স্যার খুব ক্ষেপে গিয়ে অন্য সব স্যারদেরকেও ডেকে বসল। কিন্তু অনেক চেষ্টার পরও কাগজটা ছুঁড়ে মারার অপরাধীকে ঠিক খুঁজে পাওয়া গেল না। অবশেষে সেই গঙ্গাফড়িংটা বাহিরের জানালা থেকে লাফ দিয়ে পিছনে বসা শিমুলের মাথার উপর গিয়ে বসল। এবার আর কারও বুঝতে বাকি রইল না যে দুষ্টুমির কাজটা সেই দুষ্টু শিমুলেরই কাজ। পরবর্তীতে ব্যাপারটার জন্য প্রিন্সিপ্যাল স্যার যদিও শিমুলকে হালকা শাস্তি দিয়েই ছেড়ে দিয়েছিল তবুও শিমুলের ক্ষোভটা কুসুমের বন্ধু গঙ্গাফড়িংটার উপর থেকে একটুও যায়নি।
পরদিন কুসুম সকাল বেলা স্কুলে যাওয়ার পথে হঠাৎ তার ডান কাধের উপর তাকিয়ে দেখে গঙ্গাফড়িংটা নেই। পাগলের মতো এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করতে থাকে সে। রাস্তার পাশে যেদিকে ঘাস আছে,পাতার উপর এমনকি ঝোপঝাড় কিছুই বাদ রাখলো না সে।অবশেষে ছোট্র একটা জবাফুল গাছের মাথায় চোখটা পড়তেই তাকিয়ে দেখে দুষ্টু শিমুলের পোষা টিয়ে পাখিটা কি যেন ধরে খাচ্ছে। পাখিটার বাঁকানো ঠোঁটে লাল আকৃতির সুতাটা তখনও ঝুলছিল...!
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন