বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

জাপানে সউদী যুবরাজের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্কের নতুন পর্যায়

নিউ ইয়র্ক টাইমস | প্রকাশের সময় : ১ জুলাই, ২০১৯, ১২:০৫ এএম

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও তিনি ছিলেন এক চিহ্নিত ব্যক্তি। সাম্প্রতিক বছরগুলোর অত্যন্ত নিষ্ঠুর ও সংবেদনশীল এক হত্যাকান্ডের পিছনের সম্ভাব্য নাটের গুরু হিসেবে তার দিকে আঙ্গুল তুলেছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
তবে সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে (এমবিএস) গত ২৮ ও ২৯ জুন জাপানে বিশ্বমঞ্চের চারপাশে ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীদের সাথে তার দহরম-মহরম এমন ছিল যেন তিনিও অর্থনীতি ও জ্বালানি বিষয়ে বক্তৃতা করতে আসা আরেকজন নেতা।

সউদী সাংবাদিক জামাল খাশোগির নির্মম হত্যাকান্ড ও লাশ টুকরো টুকরো করার পর তাদের কার্যত শাসককে পুনর্বাসনের জন্য প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চেয়ে আর কেউ বেশি গুরুত্বপূর্ণ নন। গত শুক্রবার ওসাকায় এক ফটো সেশনে ট্রাম্প যুবরাজের সাথে হাসি-কৌতুক করেন। গত শনিবার সকালে তিনি তার জন্য ব্যক্তিগত সকালের নাশতার আয়োজন করেন। এ সময় ট্রাম্প তার সমাজকে উন্মুক্তকারী সংস্কারক হিসেবে সউদী যুবরাজের প্রশংসা করেন।

ট্রাম্প মোহাম্মদ বিন সালমানকে বলেন, এটা অত্যন্ত ইতিবাচক পন্থায় একটি বিপ্লব। আমি বহু মানুষের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই এবং আমি আপনাকে অভিনন্দন জানাতে চাই। আপনি আসলেই একটা দেখার মত কাজ করেছেন। ট্রাম্প মহিলাদের গাড়ি চালানোর অধিকার প্রদান ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশেষ করে যুবরাজের প্রশংসা করেন।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খাশোগির মৃত্যু ও তাতে যুবরাজের সম্ভাব্য ভূমিকা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্ন এড়িয়ে যান। তিনি মহিলা অধিকার কর্মীদের বিচার এবং দ্বৈত আমেরিকান নাগরিকত্ব থাকা দুই ব্যক্তিসহ সাম্প্রতিক বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিক গ্রেফতারসহ ভিন্ন মতাবলম্বীদের উপর সউদী সরকারের দমনের কোনো উল্লেখ করেননি। সকালের নাশতা গ্রহণের পর ট্রাম্প মহিলাদের ক্ষমতায়ন বিষয়ক এক অধিবেশনে যোগদান করেন।

অন্যায় কিছু নয়- এমন মনোভাবে যুবরাজ মোহাম্মদের সাথে কথা বলার ট্রাম্পের আগ্রহ বিশে^র আর সবার কাছে এক শক্তিশালী সঙ্কেত পাঠিয়েছে। সে সাথে এটা ঠান্ডা চোখের হিসেবের প্রতিনিধিত্ব যে খাশোগির মৃত্যুর চেয়েও সউদী আরবের সাথে আমেরিকার সম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

গত নভেম্বরে আর্জেন্টিনার বুয়েনোস আয়ারসে আরেকটি সম্মেলনের ফাঁকে ট্রাম্প সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য যুবরাজ মোহাম্মদের সাথে কথা বলেছিলেন। খাশোগি হত্যাকান্ডের পর সেটাই ছিল তাদের মধ্যে প্রথম বৈঠক। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার টিম ওসাকায় অবস্থানকালে ট্রাম্পের সাথে পৃথক খাবার গ্রহণে দুইজন বিশ্বনেতাকে আমন্ত্রণ জানান। তাদের মধ্যে যুবরাজ মোহাম্মদ একজন এবং সে জন্য ট্রাম্প ও তার টিম কোনো ইতস্তত করেননি।

ট্রাম্পের নিজের সি.আই.এ বহুদিন আগেই সিদ্ধান্তে আসে যে যুবরাজ মোহাম্মদই খাশোগি হত্যার নির্দেশ দেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার তদন্তকারীও গত সপ্তাহে বলেন যে হত্যার পর সাক্ষ্যপ্রমাণ সরিয়ে ফেলা যুবরাজের অবগতি ছাড়া হতে পারে না। তদন্তে তার সংশ্লিষ্টতার কথা বলা হয়েছে।

ওসাকায় জি-২০ শীর্ষ বৈঠকের দুই দিন আগে বিচার বহির্ভূত হত্যা বিষয়ে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞ খাশোগির মৃত্যু বিষয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তের আহ্বান জানান। সউদী কর্মকর্তারা এ হত্যাকান্ডের সাথে যুবরাজের কোনো সম্পৃক্ততা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন। ট্রাম্প তাদের কথাকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছেন।

বর্তমানে ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনে কর্মরত এবং সউদী ও আমেরিকান নেতাদের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ে ‘কিংস অ্যান্ড প্রেসিডেন্টস’ বইয়ের লেখক সাবেক সিআইএ কর্মকর্তা ব্রুস রিডেল বলেন, প্রেসিডেন্ট সউদী ইতিহাসের সবচেয়ে বেপরোয়া ও স্বৈরশাসককে আলিঙ্গন করছেন। তিনি সউদীদের সাথে সম্পর্ককে একটি দলীয় রাজনৈতিক বিষয়ে পরিণত করেছেন। ২০২০ সালে যদি ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হয় তাহলে আমরা খাশোগি ও ইয়েমেন সম্পর্কে অস্তিত্বগত সংকটের সম্মুখীন হতে পারি।

মানবাধিকার ও সাংবাদিকতা অ্যাডভোকেসি গ্রুপগুলো বলে, যুবরাজ মোহাম্মদের সাথে ট্রাম্পের সকালের নাশতা গ্রহণ বিশ^ব্যাপী স্বৈরাচারীদের সাহস যোগাবে। তাদের কাছে স্পষ্ট করবে যে দমন এবং এমনকি সাংবাদিকদের হত্যা করতে পারে যাতে তাদের কিছু হবে না এবং যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক তারা জবাবদিহিতার শিকার হবে না।
কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট-এর নির্বাহী পরিচালক জোয়েল সাইমন বলেন, বরং খাশোগি হত্যাকে এড়ানো এবং তার তদন্ত নিরুৎসাহিত করার ট্রাস্পের চেষ্টা তাকে সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা ঘৃণ্য অপরাধের একজন সহায়ক করেছে।
কিন্তু ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তার ধারণায় কোনো একক ঘটনার চেয়ে সম্পর্ক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। গত সপ্তাহে তিনি এনবিসি নিউজকে বলেন, খাশোগির মৃত্যুর ব্যাপারে কথা বলে তিনি সউদী আরবে লাভজনক অস্ত্র বিক্রি ব্যাহত করতে চাননি।

কিছু পররাষ্ট্র নীতি বিশেষজ্ঞ বলেন যে এটা হচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিস্বাদ বাস্তবতা। তারা বলেন, আমেরিকার প্রেসিডেন্টদের যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৃহৎ লক্ষ্য অর্জনের স্বার্থে কোনো কোনো সসময় ঘৃণ্য ব্যক্তিদের সাথেও মিথষ্ক্রিয়া করতে হয়। তারা বলেন, সউদী আরব হচ্ছে বহু দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন প্রভাব ও জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।

হাডসন ইনস্টিটিউটে সিনিয়র ফেলো মাইকেল ডোরান বলেন, এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে প্রেসিডেন্ট সউদী আরবের কার্যত শাসকের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করেন এবং তাকে খোলাখুলি ও প্রত্যয়ী দেখা গেছে। সউদী আরব যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্র, ইরানকে নিবৃত্ত রাখতে ও পারমাণবিক শক্তিমুক্ত রাখার চেষ্টায় অবিচ্ছেদ্য অংশীদার এবং মুসলিম বিশে^ সবচেয়ে প্রভাবশালী একক অভিনেতা।

ওসাকায় যুবরাজ মোহাম্মদ একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন না। সেখানে ছিলেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যিনি রাশিয়াতে দমন অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কিছু সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিরোধীর মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করা হয়। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশে^র সবচেয়ে বড় দমনকারী রাষ্ট্র যে দেশটি লাখ লাখ উইঘুর মুসলিমকে বন্দি করে রেখেছে।

যুবরাজ মোহাম্মদ যখন তার সাদা আলখাল্লা উড়িয়ে ঐতিহ্যবাহী সউদী লাল ও সাদা চেকের কাফিয়ায় মাথা ঢেকে হাসিমুখে ট্রাম্প ও অন্যদের সাথে হাত মেলাচ্ছিলেন, রসিকতা-কৌতুকে অংশ নিচ্ছিলেন তা দেখা ছিল বিস্ময়কর। বুয়েনোস আয়ারসে তিনি বিশ্বনেতাদের আনুষ্ঠানিক পারিবারিক ফটোর একেবারে প্রান্তে ছিল তার অবস্থান, যাকে বলা যায় একপাশে। কিন্তু এ বছর তার অবস্থান ছিল সামনে ও মাঝে। ট্রাম্প ও শিনজো আবের ঠিক মাঝখানে।
খাশোগি গত অক্টোবরে ইস্তান্বুলে সউদী কনস্যুলেটে যান তার বিয়ে সংক্রান্ত কাগজপত্র আনার জন্য। সউদী আরব থেকে আসা ঘাতক দল সেখানে অপেক্ষা করছিল তার জন্য, যারা তাকে আখ্যায়িত করেছিল কোরবানির পশু হিসেবে। তারপর তাকে হত্যা করে দেহ করাত দিয়ে খন্ড খন্ড করা হয়।

সউদী সরকার প্রাথমিকভাবে এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে মিথ্যা কথা বলে। তারা জোর দিয়ে বলে খাশোগি কনস্যুলেট ছেড়ে চলে গেছেন। কিন্তু তুরস্ক এর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণ দেয়ার পর সউদীরা তার মৃত্যুর কথা স্বীকার করে এবং এ হত্যায় সন্দেহভাজনদের গ্রেফতার করে যাদের কারো কারো সম্পর্ক ছিল যুবরাজের সাথে।
কিন্তু সউদী আরব চেইন অব কমান্ড পরীক্ষার সব চেষ্টায় বাধা সৃষ্টি করে। জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থার বিচার বহির্ভূত প্রাণদন্ড বিষয়ক বিশেষ র‌্যাপোর্টিয়ার অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ দেখতে পান। আর তা যুবরাজসহ উচ্চ পর্যায়ের সউদী কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত দায়ের তদন্তকে যৌক্তিক প্রতিপন্ন করে।

কিন্তু এ তদন্ত হবে বলে মনে হয় না এবং মনে হচ্ছে যুবরাজ মেসাহাম্মদ কোনো তাৎপর্যপূর্ণ মাশুল দেয়া ছাড়াই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তার ভূমিকা পালন শুরু করতে পারেন। আগামী বছরের জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে তিনি নেতৃত্বের ভূমিকা পালনের আশ্বাস পেতে পারেন। যাই হোক না কেন, এক সময় তিনিও এ সম্মেলনের আয়োজক হবেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
M nasiruddin shah ১ জুলাই, ২০১৯, ১:৩৫ এএম says : 0
যুবরাজ সালমান আমেরিকার ফাদে পুরোপুরিভাবে আটকে গেছেন। ইসরাইলের কৌশলের কাছে সৌদি আরব প্ররাজিত। ইসলামের বিশ্ব মুসলমানদের আশা ভরসার শেষ ঠিকানা ছিল। বিশ্বের কোন মুসলিম দেশ আক্রান্ত হলে। সৌদি আরব ছিল প্রকৃত অর্থে গার্জিয়ান মুরুব্বী। বর্তমানে মধ্যপ্রার্চের শাসকগন ইরাক সিরিয়া লিবিয়া মিসর গোটা মধ্যপ্রার্চের টালমাটাল অবস্থায় ক্ষমতায় টিকে থাকতে আমেরিকার জালে আটকে গেছেন। দিশেহারা পথ হারা ইসলামের আদশ্য হারা শাসকগন ইহুদি কাফের দের বিশ্বাস করতে শুরু করছে। মহান আল্লাহ তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে মানা করছেন। এরা ইসলামের চরম শক্র। এই কথা গুলো সৌদিতে লিখলে। সন্ধ্যায় তরবারি নিছে গদ্ধান যাবে। আল্লাহ আমরা পথ হারা ঈমান আক্বিদা হারিয়ে জাহান্নামের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। আপনি আমাদের রক্ষা করুন।
Total Reply(0)
Saiful Islam ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:২৬ এএম says : 0
ট্রাম্পের সাথে কখনই মুসলমানদের ভালো সম্পর্ক হওয়ার কথা নয়
Total Reply(0)
Niloy Khan ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:২৭ এএম says : 0
সউদী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উচিত মুসলীম বিশ্বের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধি করা।
Total Reply(0)
Kamal ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:২৯ এএম says : 0
এই সম্পর্ক কি আদৌ মুসলমানদের জন্য কল্যাণকর ?
Total Reply(0)
Harunur Rashid ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
হে আল্লাহ, সারা বিশ্বের মুসলমান নেতাদেরকে তুমি ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তৌফিক দান করো।
Total Reply(0)
Golam Rabbani ১ জুলাই, ২০১৯, ১০:৩০ এএম says : 0
kisu bolar nai
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন