শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

ছোটদের বিদ্রোহী কবি নজরুল

প্রকাশের সময় : ৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইমরান সোহেল
ছোটবেলায় তার নাম রাখা হয়েছিল দুখু মিয়া। তার জীবনের সঙ্গেও এই নামটি মিলে গেল। সেই ছোট্ট দুখু মিয়া বড় হয়ে অনেক বড় কবি হয়েছিলেন। তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বিদ্রোহী এই কবি ১৮৯৯ সালের ২৫ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফকির আহমদ এবং মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
নজরুল শুধু কবি ছিলেন না একই সঙ্গে তিনি গীতিকার, সুরকার, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, সৈনিক, দার্শনিকও ছিলেন। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশ দুই বাংলাতেই তার কবিতা ও গান সমানভাবে সমাদৃত। তার কবিতায় বিদ্রোহী কারণে তাকে বিদ্রোহী কবি বলা হয়। তার কবিতা ও গানে এই মনোভাব প্রতিফলিত হয়েছে সবসময়। কবির লড়াইয়ের কথা আমরা হয়তো অনেকেই শুনেছি। ঢাল-তলোয়ার নিয়ে লড়াই নয়। এ লড়াই ছন্দ ও উপস্থিত বুদ্ধি নিয়ে। অনেক আগে গ্রামে এমন লড়াই হতো। দিনক্ষণ ঠিক করে একটা অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয় দু’জন কবিকে। দুই কবি সেই অনুষ্ঠানে মুখে মুখে কবিতা রচনা করে একে অপরকে হারানোর চেষ্টা করেন। এখানে গায়ের জোরের চেয়ে বুদ্ধি আর মেধার জোরই বেশি প্রয়োজন। যেমন দরকার উপস্থিত বুদ্ধি, তেমনি দরকার ভাষাজ্ঞান, ছন্দজ্ঞান আর কবিতার মিল দেয়ার ক্ষমতা। কিন্তু সেই সময়ে বারো বছরের এক ছেলে এই নিয়ম উল্টে দিয়েছিল। কারণ বয়স কম হলেও সেই ছেলেটির ধর্ম, ইতিহাস, ভাষা, ছন্দ আর কবিতায় মিল দেয়া সম্পর্কে ছিল পাক্কা ধারণা। কবিদের কঠিন লড়াইয়ে নামতে একেবারেই ভয় ছিল না তার। সেই ছোটবেলা তার মধ্যে ভয় বলে কোনো শব্দ ছিল না। ব্রিটিশ আমলে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে কথা বলতে ভয় পেত না এমন লোক খুব কমই ছিল। কিন্তু নজরুল ছিল তার উল্টো। ব্রিটিশদের মুখের ওপর কথা বলতে ভয় পেত না। খুব মেধাবী ছাত্র ছিলেন। যে ক্লাসে পড়ত সেই ক্লাসের ছাত্রদের অনায়াসে পড়াতে পারত। হাতের লেখা যেমন সুন্দর, তেমনি সুন্দর তার পড়ার ভঙ্গি। যেমন সুন্দর করে সে বাংলা পড়ত, ঠিক তেমনি সুন্দর করে পড়ত আরবি। গ্রামের অনেকেই তাকে খুদে প-িত ভাবতেন। দুনিয়াকে জানার তার দারুণ কৌতূহল। তার মধ্যে ছিল এক বিরাট কাব্যসংগীত প্রতিভা।
নজরুল প্রতিভার একটি বিশেষ অভিব্যক্তি তার শিশুসাহিত্য। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যকে প্রথাগত প্রবণতা থেকে মুক্তি দিয়ে বাস্তবমুখী চেতনার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। নজরুলের এ অবদান নিঃসন্দেহে তাৎপর্যময়। ছোটদের প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত দরদ আর দায়বদ্ধতা থাকলেই সফল শিশুসাহিত্য রচনা করা যায়, যা আমরা নজরুলের মধ্যে লক্ষ্য করি। ‘শিশু যাদুকর’ কবিতায় শিশুর প্রতি নজরুলের মমত্ববোধের পরিচয় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ‘খুকি ও কাঠবিড়ালী’ শিশুর মনোজগতে অনুরোধ, প্রত্যাশা ও অভিমান মিশ্রিত এক ভালোলাগার পরিবেশ তৈরি করে। কবিতাটিই কাঠবিড়ালীকে উদ্দেশ্য করে খুকির সংলাপে রচিত। একটি পেয়ারার জন্য খুকির আগ্রহ, তার আবেগানুভূতির বিচিত্র ওঠানামা রচনাটিকে নাটকীয় করে তুলেছে। প্রথমে কাঠবিড়ালীর সঙ্গে বন্ধুতার আয়োজন, তারপর তাকে খুশি করে তার কাছ থেকে পেয়ারা পাওয়ার চেষ্টা এবং শেষে প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় রাগের প্রকাশ। ছোটদের জন্য তার বিখ্যাত লেখাগুলো হলো- ভোর হলো দোর খোল, খুকি ও কাঠবিড়ালী, খোকার সাধ, সংকল্প, লিচু চোর ইত্যাদি। বাংলাদেশের জাতীয় এই কবি মারা যান ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন