শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

হজ : মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের নিশানা

আতিকুর রহমান নগরী | প্রকাশের সময় : ১৮ জুলাই, ২০১৯, ৮:৪৫ পিএম

দুই

ইমাম শাফি ও ইমাম মালিক (রহ.)’র মতে ইফরাদ হচ্ছে সর্বোত্তম। এরপর তামাত্তু, তারপর ক্বেরান। এখানে ইমামে আযম (রহ.) এর মতটিই গ্রহনযোগ্য। ক্বেরান হজ্বের প্রথম কাজঃ ক্বেরানের মধ্যে সর্বপ্রথম ওমরার কাজ সম্পন্ন করে দিতে হবে, তারপর হজ্বের কাজ শুরু করতে হবে। এ কারণে কোন ব্যক্তি প্রথমে হজ্বের নিয়তে তাওয়াফ করলেও উমরার তাওয়াফই হবে।
ক্বেরানকারির ক্বোরবানির বিধানঃ ক্বেরানকারিগন ক্বোরবানির দিবসে হজ্ব ও ওমরা উভয়ের জন্য ক্বোরবানি করবে। কেননা আল্লাহতা’লা তাকে একই সময়ে একই ইহরামে হজ্ব ও ওমরা দুটিই আদায় করার সুযোগ দিয়েছেন। আই আল্লাহর শুকরিয়া হিসেবে তার উপর একটি ক্বোরবানি ওয়াজিব হবে। আর যদি ক্বোরবানির সামর্থ না থাকে তাহলে দশটি রোযা রাখতে হবে। এগুলোর মধ্যে তিনটি হজ্বের দিন সমূহে তথা সাত, আট ও নয় তারিখে রাখতে হবে। পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ হয়েছে “ফামান তামাত্তাআ বিল ওমরাতি ইলাল হাজ্বি ফামাস তাইসারা মিনাল হাদয়ি ফামাল লাম ইয়াজিদ ফা সিয়ামু সালাসাতি আইয়্যামিন ফিল হাজ্বি ওয়াসাব আতিন ইলা রাজা’তুম তিলকা আশারাতুন কামিলাহ”। অর্থাৎ “যে ব্যক্তি হজ্বের সাথে ওমরাকে একত্রিত করে উপহবে হবে সে তার সাধ্যানুযায়ি ক্বোরবানি দেবে। আর যে ব্যক্তি ক্বোরবানি দিতে অক্ষম হবে সে হজ্বের সময় তিনদিন রোযা রাখবে আর যখন তোমরা হজ্ব হতে প্রত্যাবর্তন করবে তখন আরও সাতটি রোযা রাখবে।
ক্বেরান নিয়তকারি ওমরা ছেড়ে দিলে তার হুকুমঃ ক্বেরান পালনকারি যদি মআয় প্রবেশ না করে সোজা আরাফায় চলে যায় তবে তার ওমরা বাতিল ও মুফরিদ হিসেবে গন্য হবে। এ ওমরা ছেড়ে দেয়ার কারণে তার উপর একটি দম ও পূনরায় ক্বাযা ওয়াজিব হবে। কেননা সে নিয়তের মাধ্যমে তার উপর ওয়াজিব করে নিয়েছিল আর ওয়াজিব পরিত্যাগের জন্য ক্বাযা ওয়াযিব হয়েছে। আর যদি মক্কায় দাখিল হয়ে ওমরার অধিকাংশ কাজ করার পূর্বেই আরাফায় চলে আসে তাহলে উপরোক্ত হুকুম প্রযোজ্য হবে, তবে ওমরার তাওয়াফের অধিকাংশ যেমনঃ সাত চক্করের স্থলে চার চক্করের পর আরাফায় চলে গেলে তার ওমরা বাতিল হবে না। বরং ক্বোরবানির দিবসে তা পূরন করে দিবে।
হজ্বে তামাত্তুর পরিচয়ঃ তামাত্তুর আভিধানিক অর্থ উপকৃত হওয়া বা লাভবান হওয়া। শরিয়তের দৃষ্টিতে তামাত্তু বলা হয় হজ্বের মাসসমূহে তথা শাওয়াল, যিলক্বদ ও যিলহজ্ব মাসে মিক্বাত হতে শুধু ওমরার ইহরাম বেধে ওমরার কার্যাবলি সম্পাদন করে হালাল হয়ে যাওয়া। এরপর যিলহজ্ব মাসের আট তারিখে পূনরায় ইহরাম বেধে হজ্ব সমাপন করা।
তামাত্তুকারি তাওয়াফের সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবেঃ তামাত্তু আদায়কারি হাজ্রে আসওয়াদ চুম্বনের পর ওমরার তাওয়াফ শুরু করার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে। মহানবী (সা.) হতে অনুরুপ বর্ণিত আছে। ইমাম (রহ.) বলেনঃ ‘বাইতুল্লাহ শরিফের প্রতি দৃষ্টি পড়ার সাথে সাথে তালবিয়া পাঠ বন্ধ করে দেবে।
দমের হুকুমঃ তামাত্তু আদায়কারির উপর শুকরিয়া স্বরুপ ক্বিরান আদায়কারির ন্যায় একটি ক্বোরবানি করা ওয়াযিব। যদি সে ক্বোরবানি করতে অক্ষম হয় তাহলে ক্বোরবানির দিনের পূর্বে তিনটি এবং বাকি সাতটি রোযা পরে রাখতে হবে।
আইয়্যামে হজ্বের বিভিন্ন নামসমূহঃ ১. যিলহজ্বের আট তারিখকে ‘ইয়াউমুত তারউইয়্যাহ’। ২.নয় তারিখকে ‘ইয়াউমুল আরাফাহ’। ৩. দশ তারিখকে ‘ইয়াউমুন নাহ্র’। ৪. এগারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল ওকুফ’। ৫. বারো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিল আওয়াল’ এবং ৬. তেরো তারিখকে ‘ইয়াউমুল নাফরিস সানি’ বলে।
হজ্বে তামাত্তু বাতিল হওয়ার কারণঃ তামাত্তুকারি হাদি প্রেরন না করে হজ্বের মাসে ওমরার কাজ সমাপন করে নিজ দেশে ফিরে গেলে তার তামাত্তু বাতিল হবে। আর যদি হাদির জানোয়ার প্রেরন করে তাহলে ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ (রহ.)’র মতে তার তামাত্তু বাতিল বলে গণ্য হবে।
হজ্বের মাসের পূর্বে ওমরার কাজ আংশিক করলে হজ্বে তামাত্তু হবে কিনাঃ কোন ব্যক্তি যদি হজ্বের মাসের পূর্বে ওমরার উহরাম করে চার চক্করের কম তাওয়াফ করে এরপর বাকি তাওয়াফ হজ্বের মাসে করে তাহলে তার তামাত্তু হবে না। বরং সে তামাত্তুকারি হিসেবে পরিগনিত হবে।
পরিশেষে, আমি মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে প্রার্থনা করি তিনি যেন বিশ্বের সকল মুসলমানকে হজ্ব সংক্রান্ত মাসআলা অবগত হয়ে শরিয়তের নির্ধারিত পদ্ধতিতে সঠিকভাবে হজ্ব পালন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন