দেশের শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে এবার এইচএসসির ফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে ৭৭.৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়ে দেশ সেরা হলেও বোর্ডের আওতাধীন ৬টি জেলার ফল বিশ্লেষণে জেলার অবস্থান দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। এছাড়া সরকারী সকল সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কুমিল্লা শহরের নামীদামী কলেজগুলোতে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করার পরও শতভাগ উত্তীর্ণসহ কাঙ্ক্ষিত ফল অর্জন না করতে পারায় হতাশ অভিভাবকরা। অপরদিকে ঝরেপড়াসহ অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি করিয়ে গ্রামের কলেজগুলোতে এবার ভাল ফল অর্জিত হয়েছে। বোর্ডের আওতাধীন ৬টি জেলায় শতভাগ উত্তীর্ণ ৩১ কলেজের মধ্যে ২০টি কলেজ কুমিল্লা জেলায় হলেও সব কলেজই গ্রামে। জানা গেছে, এবার কুমিল্লা জেলার ১৭টি উপজেলার ১৫০টি কলেজ থেকে ৭৫টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৩১ হাজার ৭৩ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২৫ হাজার ৭৬১ জন উত্তীর্ণ হয়। এ জেলায় পাসের হার ৮২.৯০ শতাংশ। বোর্ডে এ জেলার অবস্থান দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে রয়েছে চাঁদপুর জেলা। এ জেলায় পাসের হার ৮৬.৮৭ শতাংশ। সূত্র মতে, এবার কুমিল্লা বোর্ডে শতভাগ উত্তীর্ণ ৩১টি কলেজের মধ্যে ২০টি কলেজের অবস্থান কুমিল্লা জেলায়। তবে জেলার নামীদামী সরকারী সব সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন কুমিল্লা সরকারী ভিক্টোরিয়া কলেজ, কুমিল্লা সরকারী কলেজ, কুমিল্লা সরকারী মহিলা কলেজ, কুমিল্লা সরকারী সিটি কলেজ, কুমিল্লা সরকারী শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজের অবস্থান কুমিল্লা জেলা শহরে। শহরের এসব কলেজে এসএসসিতে জিপিএ-৫ প্রাপ্তসহ মেধাবী ছাত্রদের এইচএসসিতে ভর্তি করা হয়। তবে এ বছর এ ৫টি কলেজের কোনটিতেই শতভাগ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে পারেনি এবং কাঙ্ক্ষিত জিপিএ-৫ অর্জিত হয়নি। ফল বিশ্লেষণে দেখা যায় শিক্ষার্থী শতভাগ উত্তীর্ণসহ ভাল ফল করা কলেজগুলোর অবস্থান গ্রামে।
গ্রামের শতভাগ উত্তীর্ণ এসব কলেজ হচ্ছে- দাউদকান্দির জুরানপুর আদর্শ কলেজ। এ কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১২৯ জন। বুড়িচংয়ের সোনার বাংলা কলেজ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১০৪ জন। বুড়িচংয়ের পারুয়ারা আবদুল মতিন খসরু কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৫১ জন। ব্রাহ্মণপাড়ার মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী ডিগ্রী কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১৬ জন। বরুড়ার আগানগর আদর্শ কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ জন। লাকসামের মুদাফফরগঞ্জ এএন হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ জন। বরুড়ার ছোট তুলাগাঁও মহিলা কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ জন। ব্রাহ্মণপাড়ার বঙ্গবন্ধু সরকারী কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন। একই উপজেলার আবদুল মতিন খসরু মহিলা কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ জন এবং গোপালনগর আদর্শ কলেজ। নাঙ্গলকোটের ডাঃ যোবায়দা হান্নান হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। দেবিদ্বার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কলেজ। দাউদকান্দির বেগম রাবেয়া গার্লস কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ জন। সদর দক্ষিণের কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৮ জন। দেবিদ্বারের এলাহাবাদ কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। তিতাসের ইঞ্জিনিয়ার হারুন অর রশিদ গার্লস কলেজ। চৌদ্দগ্রাম মডেল কলেজ, জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ জন। একই উপজেলার ধর্মপুর নাজিম আলী হাইস্কুল এ্যান্ড কলেজ। ব্রাহ্মণপাড়ার অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ দেওয়ান কলেজ। সদর দক্ষিণের সিসিএন মডেল কলেজ।
এক্ষেত্রে কুমিল্লা জেলা সদরে পাসের হার ৭৯.০৯ শতাংশ। গ্রাম পর্যায়ে বাকি উপজেলাগুলোর পাসের হার ৮৭.৬৮ শতাংশ। শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, শহরের কলেজগুলোতে মেধাবী ছাত্রদের ভর্তি করার পর কোচিং নির্ভর শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের ক্লাসের প্রতি মনোযোগী না হয়ে মোবাইল ও ইন্টারনেটের প্রতি আকৃষ্ট থাকা, কোন কোন কলেজে অভিভাবক সমাবেশ না হওয়াসহ তদারকির অভাবে কাংথিক্ষত ফল অর্জিত না হওয়ার কারণ হতে পারে। অপরদিকে গ্রাম পর্যায়ে কলেজগুলোতে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ভর্তি হলেও শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সচেতনতাবোধ থেকে কাক্সিক্ষত ফল অর্জিত হয়েছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুস ছালাম জানান, বোর্ডের বিগত বছরগুলোর ফল মূল্যায়নের মাধ্যমে দুর্বলতাসমূহ খুঁজে বের করা হয়।
সেই অনুযায়ী সমস্যা চিহ্নিত করে মাঠ পর্যায়ে প্রতিটি জেলায় তদারকি বৃদ্ধি করা হয়। এছাড়া আইসিটি, গণিত ও ইংরেজিসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো শিক্ষকদের নিয়ে সমাবেশ করে তাদের প্রস্তাবনাসমূহ কাজে লাগিয়ে শিক্ষক-ছাত্র-অভিভাবক ও বোর্ডের সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় এবার দেশ সেরা এ ভাল ফল অর্জন সম্ভব হয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন