এবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলায় ‘ছেলেধরা’ সন্দেহে চার যুবককে গণপিটুনি দিয়েছে স্থানীয় জনতা। খবর পেয়ে স্থানীয় দুর্গাহাটা ইউনিয়নের (ইউপি) চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাদের উদ্ধার করে নিজ অফিসে নেয়ার পর বিক্ষুদ্ধ জনতা পরিষদ ভবন ঘেরাও করে। এসময় ওই চার যুবককে ছেড়ে দিতে চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠুকেও অবরুদ্ধ করে রাখে জনতা।
এদিকে খবর পেয়ে অবরুদ্ধ চেয়ারম্যানসহ সন্দেহভাজন যুবকদের নিজেদের হাতে তুলে নিতে জনতা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। জনতা ওই চার যুবকের ব্যবহৃত একটি পিকআপ আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এরপর বাড়তি পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরে চার যুবককে উদ্ধার করে গাবতলী মডেল থানায় নিয়ে যায়।
সোমবার (২২ জুলাই) বিকেল ৪টা থেকে শুরু করে দিনগত রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার দুর্গাহাটা ইউনিয়ন বাজার ও বৈঠাভাঙা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
‘ছেড়েধরা’ সন্দেহে আটকরা হলেন, গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের কর্ণিপাড়া গ্রামের হজরত আলী প্রামাণিকের ছেলে ফাহিম প্রামাণিক (২৪), পার ধুনট মধ্যপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের ছেলে লুৎফর রহমান (৩৫), ধুনট জোড়শিমুল গ্রামের নজির হোসেনের ছেলে দুলাল হোসেন (২২) ও তার ভাই নিয়ামুল হোসেন (৩৬)।
এদিকে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ১২জনকে আটক করেছে পুলিশ। তবে তাদের নাম পরিচয় জানা যায়নি।
রাতে উপজেলার দুর্গহাটা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন মিঠু জানান, বিকেল অনুমানিক ৪টার দিকে ওই চার যুবক একটি পিকআপ ভ্যান (ঢাকা মেট্রো-ন-১৩-৩৮৪৯) নিয়ে বৈঠাভাঙা গ্রামের দিকে ঘোরাঘুরি করছিলো। এসময় পিকআপের ভেতরে ধারালো চাকু দেখার পর গ্রামবাসীর সন্দেহ হয়। এরপর তাদের পরিচয় ও বৈঠাভাঙা গ্রামে আসার কারণ জানতে চাইলে ওই চার যুবক অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে শুরু করে।
এতে গ্রামবাসীর সন্দেহ বাড়তে থাকে। এরই একপর্যায়ে ওই চার যুবককে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করে স্থানীয় জনতা। ঘটনা জানার পর তিনি গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে ওই চার যুবককে উদ্ধার করে পরিষদ ভবনে রাখেন। পরে গাবতলী থানায় খবর দেওয়া হয়।
কিন্তু পুলিশ আসার আগেই সেখানে জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে শত শত জনতা ওই চার যুবককে তাদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানাতে থাকে। তাদের দাবি না মানায় তারা চেয়ারম্যানকেও অবরুদ্ধ করে ফেলে।
খবর পেয়ে গাবতলী থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গেলে জনতা তাদের লক্ষ করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পরে গাবতলী সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার (এএসপি) সাবিনা ইয়াসমিন ও গাবতলী মডেল থানার ওসি সেলিম হোসেনের নেতৃত্বে বাড়তি পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। আটক চার যুবককে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
গাবতলী মডেল থানার ওসি সেলিম হোসেন জানান, পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় ১২জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের ব্যাপারে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া সন্দেহভাজন চার ব্যক্তির ব্যাপারেও খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। তথ্য উপাত্ত যাচাইবাছাই শেষে আইন অনুযায়ি পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন