শোকাবহ আগস্টের শুরু আজ। বাঙালির হৃদয়ের রক্তক্ষরণের মাস আগস্ট। জাতির ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের সাক্ষী এ মাস। এ মাসে বাঙালি জাতি হারিয়েছিল তার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে ঘাতকচক্র। এছাড়া ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল বহু নেতাকর্মীকে।
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট নরপিশাচরূপী খুনিরা শুধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯৬ সালে জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এ বিচারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেন শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। বাঙালি জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যকে জয় করে বিশ্বসভায় একটি উন্নয়নশীল, মর্যাদাসম্পন্ন জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ। সারা বিশ্বে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের রোল মডেল।
১৫ আগস্ট ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকান্ডে বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, জাতির জনকের জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণীতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির জনকের ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত আবদুল্লাহ বাবু, ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত, আবদুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিহত হন।
আগস্ট মাস বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগসহ পুরো জাতি পালন করে শোকের মাস হিসেবে। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন উপলক্ষে প্রতিবারের মতো এবারও কেন্দ্রীয়ভাবে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মাসব্যাপী কর্মসূচিগুলো হলো- আজ ১ আগস্ট প্রথম প্রহর ১২টা ১ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নং সড়ক ধরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিল করবে সেচ্ছাসেবক লীগ। এছাড়া একই দিন বেলা ৩টায় কৃষক লীগের আয়োজনে স্বেচ্ছায় রক্তদান। ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হবে। ৩ আগস্ট বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদ ও সেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভা। ৪ আগস্ট বিকালে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের আলোচনা সভা।
৫ আগস্ট সকালে শেখ কামালের জন্মদিন উপলক্ষে ধানমন্ডি আবাহনী ক্লাব প্রাঙ্গণ ও বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, মিলাদ ও দোয়া। ৬ আগস্ট শ্রমিক লীগের আলোচনা সভা। ৮ আগস্ট সকালে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধার্ঘ্য অপর্ণ, কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। এছাড়া বিকালে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে মহিলা লীগের আয়োজনে মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। ৯ আগস্ট ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশল পরিষদের আলোচনা সভা। ১০ আগস্ট যুবলীগের আলোচনা। পবিত্র ঈদুল আজহার কারণে ১১ থেকে ১৪ আগস্ট কোনো কর্মসূচি নেই।
১৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার পালিত হবে জাতীয় শোক দিবস। এদিন সূর্যোদয়ের ক্ষণে বঙ্গবন্ধু ভবন এবং কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সংগঠনের সব স্তরের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ ও কালো পতাকা উত্তোলন, সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল। সকাল ১০টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ জোহর দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং সুবিধামতো সময়ে মন্দির, প্যাগোডা, গির্জা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা করা হবে। দুপুরে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে অসচ্ছল, এতিম ও দুস্থ মানুষের মধ্যে খাদ্য বিতরণ করা হবে। বাদ আসর মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ১৬ আগস্ট বিকালে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে শোক দিবসের আলোচনা সভা।
২১ আগস্ট সকালে কৃষিবিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষিবিদ পরিষদের আয়োজনে আলোচনা সভা। ২২ আগস্ট মহিলা লীগের ও ২৩ আগস্ট তাঁতি লীগের আলোচনা সভা। ২৪ আগস্ট প্রয়াত নারী নেত্রী বেগম আইভী রহমানের স্মরণে বনানী কবরস্থানে শ্রদ্ধা নিবেদন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। ২৫ আগস্ট কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের আলোচনা। ২৬ আগস্ট একই স্থানে আওয়ামী লীগের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনা সভা। ২৭ আগস্ট যুব মহিলা লীগ ও ২৮ আগস্ট কৃষক লীগের আলোচনা। ২৯ আগস্ট বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার দাবিতে মহিলা লীগের মানববন্ধন। ৩০ আগস্ট বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের আলোচনা এবং ৩১ আগস্ট বাংলাদেশ ছাত্রলীগের আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।
ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার দিনের এ ঘটনায় আহত-নিহতদের স্মরণ করা হবে। তাদের স্মরণে এদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করা হবে। ২৬ আগস্ট আওয়ামী লীগের আয়োজনে গ্রেনেড হামলা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। ২৯ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধন করবে মহিলা শ্রমিক লীগ। ৩০ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রে শোক দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ। ৩১ আগস্ট ছাত্রলীগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে শোকসভা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস যথাযোগ্য মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাগুলোর সবস্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সব শাখার নেতাকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি স্মরণ ও পালন করার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন