এবার আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ উঠলো বাংলাদেশ স্কোয়াশ অ্যান্ড র্যাকেটস ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হামিদ সোহেলের (সোহেল হামিদ) বিরুদ্ধে। আর এই অভিযোগ তুললেন স্বয়ং ফেডারেশনের সদস্য হেদায়েত উল্লাহ তুর্কী। সোহেলকে দূর্নীতির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে তুর্কী বুধবার মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে নানা ফিরিস্তি তুলে ধরেন। এদিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি) প্রদত্ত অর্থ ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাত করেছেন সোহেল হামিদ। এনএসসি থেকে বছরে চার লাখ টাকা অনুদান পেলেও ফেডারেশনের অফিস প্রায় সব সময়ই বন্ধ থাকে। অফিস পিয়ন গোপালকে নিজের পারিবারিক কাজে ব্যবহার করেন সোহেল।’ সাধারণ সম্পাদকের আর্থিক অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে শুধু তুর্কীই নন, এখন অনেকেই সোচ্চার। স্কোয়াশের সাবেক চ্যাম্পিয়ন ভোলা লাল চৌহান, কমান্ডার (অব.) এমএ গণি ও গুলশান ক্লাবের সহ-সভাপতি জোবায়ের আহমেদও অভিযোগ তুলেছেন সোহেল হামিদের বিরুদ্ধে। তারা সোহেলকে তার পদ থেকে সরিয়ে ফেলার দাবী জানিয়ে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে আসল সত্য খুঁজে বের করে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে শান্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন এনএসসি’র কাছে।
দেশে স্কোয়াশ ফেডারেশন প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ১৬ বছর ধরে ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদকের চেয়ার বসে আছেন সোহেল হামিদ। এই সময়ের মধ্যে তিনি আর্থিক অনিয়ম ও দূর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুর্কী’র। তার কথায়, ‘২০১৬ সালে এনএসসি থেকে ১২ লাখ টাকা প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের জন্য দেয়া হয়। কিন্তু কুমিল্লা, যশোর, রংপুর ও ঘাটাইলে দু’তিনদিনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন সোহেল। আর প্রশিক্ষক স্বপন পারভেজ ও বিষুকে দিন প্রতি পনেশ’ টাকা দিয়েছেন। বাকি অর্থের কোন হিসাব আমরা পাইনি। কারণ খেলোয়াড়দের আবাসন ব্যবস্থা করা হয়েছিল ক্যান্টনমেন্টেই। তারপরও আবাসন, খাওয়া ও যাতায়াত বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে। এই অনৈতিক কাজকে সমর্থন দিয়েছেন এনএসসি’র বাজেট অফিসার তাইজুল ইসলাম।’ তুর্কী আরো বলেন, ‘২০১৯ সালে ঝিনাইদহ ও ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজে দু’দিনের প্রশিক্ষণ করিয়ে এনএসসি’তে ভুয়া বিল-ভাউচার দেয়া হয়েছে। খেলোয়াড়দের নামের তালিকা এবং সই জাল করে এ ভাউচার তৈরী করা হয়। এ কাজে সোহেল’কে সহযোগিতা করে তাইজুল ইসলাম দেড় লাখ টাকা পকেটে পুরেন। যা ওইদিনের আমার, সোহেল হামিদ ও তাইজুলের মোবাইল কল রেকর্ড শুনলেই সত্যতার প্রমাণ মিলবে।’
নেপাল এসএ গেমসের ক্যাম্প নিয়ে তুর্কী বলেন, ‘অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন থেকে খেলোয়াড়দের দৈনিক ভাতা বাবদ ছয়শ’ এবং খাবার বাবদ দু’শ ৭৫ টাকা করে দেয়া হয়। অথচ খেলোয়াড়দের সর্বসাকুল্যে চারশ’ টাকা দিয়েও সেখান থেকে খাবার ও স্কোয়াশের বল বাবদ টাকা কেটে রাখা হয়। যা অত্যন্ত গর্হিত কাজ।’
সাবেক জাতীয় চ্যাম্পিয়ন ভোলা লাল চৌহান বলেন, ‘১৯৮৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত আমি খেলেছি। কিন্তু সোহেল ভাইয়ের কাছ থেকে কখনো সম্মান পাইনি। একজন সাবেক খেলোয়াড় হিসেবে যা খুবই হতাশাজনক।’
অভিযোগ অস্বীকার করে সোহেল হামিদ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে আনা এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক। কারণ যে প্রতিভা অন্বেষনের কথা বলা হয়েছে, তা এখনো চলমান। ফলে এনএসসি’তে কোন বিল ভাউচার দেয়া হয়নি। তাছাড়া ক্যাম্পের বয়স এখন মাত্র দু’সপ্তাহ। তাই খেলোয়াড়দের কাছ থেকে টাকা কেটে রাখার কোন প্রশ্নই ওঠে না।’ তিনি যোগ করেন, ‘আমি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি ২০১১ সালে। কেউ জোর করে পদে থাকতে পারেন না। আমিও চাই তদন্ত হোক।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন