শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্ম দর্শন

প্রশ্ন: ওজনে কম দেয়া কি কবিরা গুনাহ?

| প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৯, ১২:০১ এএম

উত্তর : আল্লাহ বলেন, ‘তিনি আকাশকে করেছেন সমুন্নত এবং স্থাপন করেছেন দাঁড়িপাল্লা। যাতে তোমরা সীমা লঙ্ঘন না কর দাঁড়িপাল্লায়। তোমরা সঠিক ওজন কায়েম কর এবং ওজনে কম দিও না।’ (সূরা আর-রহমান, আয়াত : ৭-৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা মাপ ও ওজন পূর্ণ করে দাও ন্যায়নিষ্ঠার সাথে। আমরা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত কষ্ট দিই না।’ (সূরা আনআম, আয়াত : ১৫২)।

ব্যবসায়-বাণিজ্য ও লেনদেনের ক্ষেত্রে পরিমাণ এব ওজনে কমবেশি করা বা ঠকানোর মাধ্যমে জীবিকা উপার্জন একটি জঘন্য অপরাধ। মানুষ মাত্রাতিরিক্ত লোভ ও অল্পে তুষ্ট না হওয়ার কারণেই অবৈধ পন্থায় উপার্জনের পেছনে ছুটে থাকে। পবিত্র কুরআন ও হাদিসে এধরণের কাজকে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, নিন্দনীয় ও পরকালীন দুর্ভোগের কারণ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা মাপে কম দেয়, তাদের জন্য দুর্ভোগ। এরা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণমাত্রায় নেয় এবং যখন মানুষকে মেপে দেয় তখন কম করে দেয়। তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে? সেই মহা দিবসে যেদিন মানুষ দাঁড়াবে বিশ্ব প্রতিপালকের সামনে।’ (সূরা মুতাফফিফিন, আয়াত : ১-৬)।

ব্যবসা একটি পবিত্র পেশা। পবিত্রতা ও সততার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালিত হলে সেখানে অন্যায়-অনিয়ম ঠাঁই পেতে পারে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ঠকবে না সৎভাবে ব্যাসা করলে। কিন্তু ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে সেই সততা ও পবিত্রতার ঘাটতি বর্তমানে ব্যাপকহােের পরিলক্ষিত হচ্ছে। ঠকবাজি ও জুয়াচুরির মাধ্যমে ওজনে কম দেয়া বা বেশি নেয়া মাত্রারিক্ত হারে বেড়ে চলছে। ওজনে বা মাপে কম দেওয়ার ব্যাপারে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখনই কোনো জনগোষ্ঠী মাপ ও ওজনে কম দেয়, তখনই তাদেরকে দুর্ভিক্ষ, খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি ও অত্যাচারী শাসকের মাধ্যমে শাস্তি দেয়া হয়।’ (বুখারি)। রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, ‘পাঁচটি বস্তু পাঁচটি বস্তুর কারণে হয়ে থাকে’। ১. কোনো জাতি চুক্তিভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপরে তাদের শত্রুকে বিজয়ী করে দেন। ২. কেউ আল্লাহর নাজিলকৃত বিধানের বাইরে বিধান দিলে তাদের মধ্যে দারিদ্র ছড়িয়ে পড়ে। ৩. কোনো স¤প্রদায়ের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে মহামারি ছড়িয়ে পড়ে। ৪. কেউ মাপে বা ওজনে কম দিলে তাদের জন্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হয় এবং দুর্ভিক্ষ তাদের গ্রাস করে। ৫. কেউ জাকাত দেয়া বন্ধ করলে তাদের থেকে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হয়।’ (সুনানে দায়লামি ও তাফসিরে কুরতুবি)। অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে জাতির মধ্যে খেয়ানত অর্থাৎ আত্মসাতের ব্যাধি আধিক্য লাভ করে, সে জাতির অন্তরে আল্লাহ শত্রুর ভয় সৃষ্টি করে দেন। যে জাতির মধ্যে যেনা-ব্যভিচার বিস্তার লাভ করে, সে জাতির মধ্যে মৃত্যুহার বেড়ে যায়। যে জাতি মাপে ও ওজনে কম দেয়, তাদের রিজিক উঠিয়ে নেয়া হয়। যে জাতি অন্যায় বিচার করে, তাদের মধ্যে খুন-খারাবি ব্যাপক হয়। যে জাতি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদের ওপর শত্রæকে চাপিয়ে দেয়া হয়।’ (মুওয়াত্তা মালেক ও মিশকাত)।

মাপে কম দেওয়াসহ নানান অপরাধের সঙ্গে ব্যবসায়ীরা জড়িত থাকে। তবে যারা আল্লাহকে ভয় করে চলেন, তাদের কথা ভিন্ন। রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা কিয়ামতের দিন উপস্থিত হবে পাপাচারী হিসেবে। কেবল সেই সব ব্যবসায়ী ব্যতীত, যারা আল্লাহভীরু, সৎকর্মশীল ও সত্যবাদী।’ (তিরমিজি ও ইবনে মাজাহ) । হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) যখন বাজারে যেতেন, তখন বিক্রেতাদের উদ্দেশ্যে রাসূল (সা:) এর হাদিস শুনিয়ে বলতেন, ‘আল্লাহকে ভয় কর। কেননা, মাপে কমদানকারীগণ কিয়ামতের দিন দাঁড়িয়ে থাকবে এমন অবস্থায় যে, ঘামে তাদের কানের অর্ধেক পর্যন্ত ডুবে যাবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)। মাপে কম দেওয়ার কারণে অতীতে অনেক জনগোষ্ঠীকে আল্লাহ তায়ালা ধ্বংস করে দিয়েছেন। হজরত শোয়াইব (আ.) এর জাতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তারা অন্যান্য পাপের সাথে ওজনে কম দেওয়ার পাপে সীমা ছাড়িয়ে গেলে আল্লাহ তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দেন। সূরা আ’রাফে এ ঘটনা বিস্তারিতভাবে এসেছে। সুতরাং লোভের বশবর্তী হয়ে ওজনে কম দেওয়ার মত কবিরা গোনাহর সঙ্গে জড়িয়ে পড়া থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমিন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন