টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে দুই দফায় বন্যার পানিতে ডুবে রংপুরের পীরগাছা উপজেলায় রোপনকৃত আউশ ধান ও আমন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জমিতে আমন ধানের চারা রোপণ করতে পারছেন না। আমন চারার তীব্র সংকটের কারণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, সম্প্রতি টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা ও ঘাঘট নদীর পানি অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে বেশীর ভাগ নি¤œাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়ে। দুই দফায় বন্যায় সদ্য রোপনকৃত আউশ ধানের চারা ও আমন বীজতলা ১০ থেকে ১৫ দিন পানির নিচে ডুবে থাকে। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপজেলার তাম্বুলপুর ও ছাওলা ইউনিয়নে কৃষকরা। বন্যায় বাড়িঘর ও রাস্তাঘাটের ক্ষয়-ক্ষতির চেয়েও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি হয়।
বন্যার পানি নেমে গেলে দেখা যায় দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকায় আমন বীজতলায় পচন ধরেছে। প্রায় ২০ হেক্টর বীজতলা, ৩০ হেক্টরের আউশ ও পঞ্চাশ হেক্টরের সবজি খেত পুরোপুরি বিনষ্ট হয়েছে। আমন ও বিভিন্ন রবি শস্যের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কৃষকরা বিকল্প চারা না পেয়ে অনেকেই হতাশ হয়ে পড়েছেন।
তাম্বুলপুর ইউনিয়নের কৃষক ফজলুর রহমান জানান, ১০ থেকে ১৫ দিন আমনের বীজতলা পানির নিচে ডুবে থাকায় সবগুলো ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন হন্যে হয়ে খুঁজেও আমন ধানের চারা সংগ্রহ করা যাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। সরকারিভাবে কৃষকদের সহযোগীতা করা না হলে শুধু কৃষকরাই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না সেই সাথে লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে।
ছাওলা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল হাকিম বলেন, বন্যায় আউশ খেত, আমনের বীজতলা, বেগুন, ঢ্যাঁড়শ ও লাউসহ সবজি খেত বিনষ্ট হওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বন্যা শেষ হওয়ার প্রায় এক মাস পেরিয়ে গেলেও পীরগাছায় উপজেলা কৃষি বিভাগ এখনো প্রকৃত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কৃষকদের পুনর্বাসনের তেমন কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হবে। তবে বেশি ক্ষয়-ক্ষতি দেখানোও আমাদের জন্য সমস্যা।
উপজেলা উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আব্দুল লতিব বলেন, এবারের বন্যায় ৩ হাজার ২০০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে একশ জন কৃষকের মাঝে ৫ কেজি করে আমন বীজ বিতরণ করা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমুর রহমান বীজতলা ও সবজির ক্ষয়-ক্ষতির সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কৃষকেরা নতুনভাবে বীজতলা তৈরি করে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন