শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে ষড়যন্ত্র খুঁজবেন না : ডাকসু ভিপি
২০০৭ সালের ঘটনায় সেনাবাহিনী নয় কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে ঘাটতি ছিলো বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান। গতকাল শুক্রবার ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ‘কালো দিবস’ উপলক্ষ্যে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। একই সভায় ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর শিক্ষার্থীদের ন্যায়সঙ্গত আন্দোলনে ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘বিরিয়ানী তত্ত¡’ না খুঁজতে প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, সেদিনের নির্যাতিত ছাত্র জাহিদুল ইসলাম বিপ্লব প্রমূখ। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো: এনামউজ্জামান।
ঢাবি ভিসি বলেন, ‘২০০৭ সালে যে সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় ছিল সেটি গণতান্ত্রিক সরকার নয় এবং তাদের ব্যর্থতা ও ভুল সিন্ধান্তের কারণেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩ আগস্ট এই অমানবিক ও অনাকাঙ্খিত নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল। সেসময় সরকারের যদি ভাল ব্যবস্থাপনা ও ভাল দৃষ্টিভঙ্গি থাকত তাহলে এই অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটত না।’
তিনি আরও বলেন, ‘সেসময় নির্যাতিত শিক্ষার্থীরা যে দাবি তুলেছিল তা ছিল ন্যায়সংগত। ঢাবির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিয়মতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সবসময় যে কোন অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে থাকেন এবং এসব ন্যায়সংগত আন্দোলন বিশ্ববিদ্যালয়ের গৌরবময় ইতিহাসের অংশ।’
ঘটনায় নির্যাতিত ও নিপীড়িত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ভবিষ্যতে এই ধরনের যে কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি এড়াতে আমরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে প্রত্যেকেই ঘটনার যথাযথ মূল্যায়ন ও বিশ্লেষন করে সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করব এটিই হোক আজকের দিনে আমাদের সকলের প্রত্যয়।’
ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলনে আপনারা ‘ষড়যন্ত্র’ বা ‘বিরিয়ানি তত্ত¡’ খুঁজবেন না। আপনারা ছাত্রদের অভিভাবক, ছাত্রদেও সমস্যা সমাধানে তাদের সাথে বসে কথা বলুন।
মানববন্ধন ও কালো ব্যাজ ধারণ
দিবসটি উপলক্ষ্যে সকালে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ঢাকা বিশ্ববিদালয় সচেতন ছাত্র-শিক্ষকবৃন্দের আয়োজনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. সাদেকা হালিম, প্রফেসর ড. এম এম আকাশ এবং প্রফেসর ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। এছাড়া, কালো দিবস উপলক্ষ্যে ঢাবির শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও ছাত্র-ছাত্রীরা কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
২৩ আগস্টের ঘটনায় কারা নির্যাতিত শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম সুজন স্মৃতিচারণ করে ইনকিলাবকে বলেন, আমি তখন ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলাম। কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে আন্ত:বিভাগ ফুটবল খেলায় দর্শক সারিতে সাদা পোষাকধারী সেনা সদস্যের সাথে শিক্ষার্থীদের কথা কাটাকাটি হয়। সেটা পরবর্তিতে বাকবিতন্ডায় রূপ লাভ করে এবং ঘোটা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নামলে তাদের উপর নেমে আসে নির্যাতন। আমি সেদিনের ঘটনায় জড়িতদের বিচার দাবি করছি।
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের ২০-২৩ আগস্ট ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীর উপর সংঘটিত অমানবিক, বেদনার্ত ও নিন্দনীয় ঘটনার স্মরণে প্রতিবছর ঢাবিতে ২৩ আগস্ট এই দিবসটি পালন করা হয়ে থাকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন