গ্যাস সিলিন্ডার ও রিফুয়েলিং নিয়ে কুমিল্লায় চলছে ভয়াবহ অনিয়ম। সংযোজনের পাঁচ বছরের মাথায় সিলিন্ডার রি-টেস্ট বাধ্যতামূলক হলেও বাস্তবে প্রতিফলন নেই। একইভাবে ফিলিং স্টেশনে রিফুয়েলিংয়ের আগে সিলিন্ডার মেয়াদোত্তীর্ণ যাচাইয়ের কথা থাকলেও কেউ তা না মানায় দিন দিন মৃত্যু ঝুঁকি বেড়েই চলছে।
গত সোমবার কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে খোরশেদ আলম নামের এক পাম্প কর্মচারী নিহত হয়েছেন। সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৭জন। দুপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার বেলতলী এলাকার রিভারভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। নিহত খোরশেদ আলমের বাড়ি জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলার ল²ীপুর গ্রামে।
জানা যায়, যমুনা পরিবহনের একটি বাস রিভারভিউ সিএনজি ফিলিং স্টেশনে গিয়ে গ্যাস নিচ্ছিল। এ সময় সিলিন্ডারটি বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে ৮জন আহত হন। আহতদের মধ্যে ৬জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে খোরশেদ আলমকে (২৭) আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পর সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।
সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি মামুনুর রশীদ জানান, আহতদের উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং সিলিন্ডার বিস্ফোরিত বাসটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস, ট্রাক, অটোটেম্পো, বাস-মিনিবাস, হিউম্যানহলার ও ডেলিভারি ভ্যানসহ বেশিরভাগ গাড়ি সিএনজিতে কনভারশন করা। জ্বালানি তেলের চেয়ে খরচ কম ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় গাড়িগুলো সিএনজিতে কনভারশন করা হয়।
এমনকি নামসর্বস্ব অনেক কনভারশন কারখানায় অক্সিজেন সিলিন্ডারকে সিএনজি সিলিন্ডার বানানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে অনিয়মের সুযোগে কুমিল্লায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার গাড়ি মেয়াদোত্তীর্ণ এবং বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে চলাচল করছে বলে জানা গেছে। সিএনজি নিয়ে অনিয়ম চললেও দেখভালের দায়িত্বে থাকা বিস্ফোরক অধিদপ্তর অনেকটাই নির্বিকার। এক বছর ধরে নকল সিলিন্ডারের বিরুদ্ধে কুমিল্লায় কোনো অভিযানও হয়নি।
এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা আব্দুল হাকিম বলছেন, সিএনজি গাড়ির অনিয়মের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস লিমিটেডের (আরপিজিসিএল)। কিন্তু সবাই দায় চাপায় বিস্ফোরক অধিদপ্তরের ওপর। তবে লোকবল সঙ্কটের কারণে অনেকদিন অভিযান চালানো যায়নি বলেও বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন।
বিস্ফোরক অধিদপ্তর সূত্রে আরো জানা গেছে, কুমিল্লা চলছে ১৫ হাজারের মত। এর মধ্যে বেশিরভাগই সিএনজি, ট্যাক্সি ও প্রাইভেট কার। ডিজেল ও পেট্রোলের ওপর চাপ কমাতে ২০০২ সাল থেকে জ্বালানি সিএনজির ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, সিএনজিতে রূপান্তরিত এসব গাড়ির পাঁচ বছরের প্রাথমিক মেয়াদ অতিক্রম হয়ে গেছে। শতকরা একভাগ গাড়িও রি-টেস্টের জন্য আসেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন