ফি বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করে সিরাজগঞ্জ অঞ্চলের মহাসড়ক মেরামত করা হলেও কোন কাজে আসছেনা। চলতি বছর ২৫ কোটি টাকার জোড়াতালিতেও রক্ষা হলো না সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক সংস্কার। এ টাকার অধিকাংশ লুটপাট হয়েছে বলে অভিযোগও রয়েছে। ফলে এ মহা সড়কে প্রায়শই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে, চরম দূর্ভোগে পড়ছে যাত্রী সাধারণ। এ থেকে পরিত্রাণের কি আর কোন পথ নেই?
মাস তিনেক আগে ঈদুল ফিতরে ২৫ কোটি টাকা খরচ করে মেরামত করা হয় সিরাজগঞ্জে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের হাটিকুমরুল-চান্দাইকোনা এবং ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কের খালকুলা মান্নাননগর অংশটুকু। এবার ঈদুল আজহার আগেও ফের মেরামত করা হয়েছে এসব, কিন্তু উন্নতি সামান্যই। মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ফের ভেঙ্গেছে সড়ক। প্রতি বছরই ঈদের আগে কোটি কোটি টাকা মহাসড়কগুলো মেরামতের জন্য বরাদ্দ আসলেও তার অধিকাংশ টাকাই লুটপাট হয়ে আসছে দীর্ঘদিন যাবত। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। চলতি বছর নামমাত্র কাজ করেই ২৫ কোটি টাকার অধিকাংশ লুটপাট হয়েছে বলেই দাবী স্থানীয়দের।
সরজমিনে দেখা গেছে দুই মহাসড়কের যেসব অংশ মেরামত করা হয়েছিল সেখানেও তীব্র যানজট। ভাঙ্গাচোরা সড়কে গাড়ী চলছে ধীরে ধীরে। মাস তিনেক আগেও করা জোড়াতালি মেরামত বৃষ্টির পানিতে ধুয়েমুছে গেছে। যেসব অংশে ইট বিছানো হয়েছিল, সেখানকার অবস্থা বেশী খারাপ। অথচ চার সপ্তাহ আগেই বিশেষ মেরামত করা হয়েছে এসব সড়ক।
সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রকৌশলীরা জানিয়েছেন বৃষ্টি ও যানবাহনের চাকার ঘর্ষণে সৃষ্ট খানা-খন্দ ও ফুলে ফেঁপে উঠা রাস্তা সারানো হয় পক্ষকাল ব্যাপী। মহাসড়কের দুপাশের খানা-খন্দ ও গর্ত ঢাকতে বিছানো হেরিংবন্ড বা ইট। তথ্যানুসারে জানাগেছে, ঢাকা থেকে যমুনা নদীর বঙ্গবন্ধু সেতু পেরুনোর পর নলকা সেতু। গত পনের দিন আগেও এ সেতুটি মেরামত করা হয়। কিন্তু দুই লেনের এই সরু সেতুটিতে যানজট কমেনি। কয়েকদিন যাবত তীব্র যানজট ছিল সেতুর পূর্ব প্রান্তে। সেতুর দুই পাশের সংযোগ সড়কে করা মেরামত ও টেকেনি। কয়েকদিনের বৃষ্টিতেই দেখা দিয়েছে খানা-খন্দক। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পারে হাটিকুমরুল মোরে গত ০৩ আগষ্ট সব মেরামত করা হয়। খানা-খন্দক ভরা হয় ইট বিছিয়ে। সাত দিন যেতে না যেতেই ফের বেহাল দশা এ সড়কের। অন্যদিকে হাটিকুমরুল মোড়ের পশ্চিমে নাটোর-বনপাড়া সড়কের জেলার তাড়াশ উপজেলার খালকুলার তিনটি অংশেও অস্থায়ী সংস্কার কাজ করা হয়। সেখানেও প্রায়শ যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ভাঙ্গা রাস্তার কারণে এখানে যানবাহন চলছে মন্থর গতীতে।
সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসাম জানান, ঈদুল ফিতরের আগে জেলার ৮৭ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে ২৮ কিলোমিটার ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মেরামত করা হয়। হাটিকুমরুল মোড় থেকে চান্দাইকোণা যেতে কিছু অংশ ঠিকাদার মেরামত না করেই চলে যান। পরে তা সওজ নিজস্ব জনবল দিয়ে মেরামত করে। কিন্তু বৃষ্টি ও গাড়ীর চাপে আবার রাস্তা ভেঙ্গে যায়। ঈদুল আযহার আগেও আবার ক্ষতিগ্রস্থ অংশ মেরামত করা হয়েছে।
বার বার মেরামতের পরেও নলকা সেতুতে ভোগান্তির কারন সম্পর্কে আশরাফুল ইসলাম বলেন নলকা সেতুর ঝূঁকিপূর্ণ। বার বার মেরামত করেও লাভ হচ্ছে না। এখানে নতুন সেতু নির্মাণ করা বিশেষ প্রয়োজন। তা না হলে এসমস্যা থেকেই যাবে। উল্লেখ্য এই সেতুর দুপাশ থেকে বালু দস্যুরা বালু উত্তোলণ করার পর থেকেই সেতুটি ডেবে যায়। ফলে বালূ উত্তোলণ বন্ধ করা হয়। বর্তমানে আবারও এই সেতুর পাশথেকে ড্রেজার দিয়ে বালূ উত্তোলণ করা হচ্ছে। ফলে সমস্যা দিন দিন ঘনিভূত হচ্ছে। বলা বাহুল্য বালূ উত্তোলণের জন্য ইতিপূর্বে জেল-জরিমানা করা হলেও পুনরায় সেই স্থানে আবারও বালু উত্তোলণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টি দেখেও না দেখার ভান করে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে সেতুতে যানজট শুধু নয় একসময় সেতুটি ভেঙ্গে পড়ে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের বগুড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল্লাহ জানিয়েছেন নলকা ও ইছামতি সেতুর কারনে প্রায়শ যানজট হচ্ছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন