শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সাগর-মহাসাগর অপার সম্ভাবনার উৎস

ব্লু-ইকোনমি মিনিস্টারিয়েল কনফারেন্সে শেখ হাসিনা

কূটনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:০৬ এএম | আপডেট : ১২:৫২ পিএম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাগর-মহাসাগর হলো মানবজাতির জন্য অবারিত সম্পদ ও অপার সম্ভাবনার উৎস। এর অনেকটাই এখন অনাবিষ্কৃত রয়েছে। সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্প বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা শিল্পগুলো যেমন- পণ্য পরিবহন, মৎস্য শিল্প, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, সমুদ্র বন্দর, পর্যটন, মেরিন জেনেটিক রিসোর্সেস, মেরিন বায়োটেকনোলজি ইত্যাদি বর্তমানে বিশ্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে অবদান রাখছে। বৈশ্বিক বাণিজ্যের ৯০ শতাংশ ও তেল পরিবহনের ৬০ শতাংশ এই সাগর-মহাসাগর দিয়েই হচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে সমুদ্র বাণিজ্যের পরিমাণ ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২০ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। গতকাল রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে তৃতীয় ইন্ডিয়ান ওশেন রিম অ্যাসোসিয়েশন (আইওআরএ) বøু-ইকোনমি মিনিস্টারিয়েল কনফারেন্সের (সুনীল অর্থনীতি সম্মেলন) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, শান্তি, নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের মধ্যে একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করতে গিয়ে যেন সমুদ্রের সুস্থ পরিবেশ বিঘিœত না হয়। এজন্য সমুদ্র সংরক্ষণ নীতিনির্ধারণ ও সে অনুযায়ী কর্মকাÐ পরিচালনা করতে হবে।

তিনি বলেন, সমুদ্রকে কেন্দ্র করে সংঘটিত সকল প্রকার অপরাধমূলক কর্মকাÐ সম্পর্কে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের বুঝতে হবে মহাসাগর ও বিপুল সম্পদ সংরক্ষণে আমরা যত বেশি বিনিয়োগ করব, যত বেশি পদক্ষেপ নেব তা সামগ্রিকভাবে দীর্ঘমেয়াদি সুফল বয়ে আনবে। শেখ হাসিনা বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্যি মনুষ্য সৃষ্ট সমস্যার কারণে আমাদের সাগর আজ ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন। মাত্রাতিরিক্ত সম্পদ আহরণ, পরিবেশ দূষণ, তেল নিঃসরণ, প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বারা দূষণ, শব্দ দূষণ এবং সর্বোপরি জলবায়ু পরিবর্তন এসবের অন্যতম কারণ। এর ফলে উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে আইওআরএ সদস্যভুক্ত দেশগুলো সুনামি ও সাইক্লোনের ন্যায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণায়ন উদ্ভিদ ও প্রাণিজগৎকে বিপদগ্রস্ত করে তুলছে এবং মানবজাতিকে ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আসন্ন বিপর্যয় মোকাবিলায় সবাই মিলে কাজ করার আহŸান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাগর ও মহাসাগর গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রায় ৩০ শতাংশ এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে সৃষ্ট অতিরিক্ত তাপের প্রায় ৯০ শতাংশই শোষণ করে। সমুদ্র বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হলে মানবজাতির অস্তিত্বও হুমকির মুখে পড়বে।

ক্ষতিকর উপায়ে সমুদ্র সম্পদ আহরণে বাংলাদেশের নেয়া ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সমুদ্রের জৈবসম্পদ সংরক্ষণে বাংলাদেশ সরকার মৎস্য আহরণের সব ধরনের ক্ষতিকারক পদ্ধতি ও উপায়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। সন্ত্রাসের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে এবং অন্যান্য অপরাধ দমনেও কার্যকর আইন প্রণয়ন করেছে।

সম্মেলনের সফলতা কামনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে একজোট হয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন যাতে এই অঞ্চলে একটি অভিন্ন টেকসই সুনীল অর্থনৈতিক বেষ্টনী গড়ে ওঠে।

তিনি বলেন, আমি আশাবাদী যে, এ সম্মেলন শেষে ‘ঢাকা ঘোষণা’ হিসেবে যা গ্রহণ করা হবে সেটি ভবিষ্যতে আমাদের সহযোগিতা ও সমন্বয়ের মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে। আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে নতুন প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারব।

একীভূত টেকসই সুনীল অর্থনীতির সর্বোচ্চ সুফল পেতে অংশীজনদের মধ্যে সহযোগিতা ও সমন্বয়ের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনীল অর্থনীতিকে সামনে রেখে সমুদ্রে অব্যবহৃত ও এর তলদেশে অ-উন্মোচিত সম্পদের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে এ অঞ্চলে যার যার টেকসই উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে আরো ত্বরান্বিত করার সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র সম্পদ ব্যবহার করে আমরা দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তাসহ বিপুল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারি।

বাংলাদেশ আগামী ১ অক্টোবর দু’বছরের জন্য আইওআরএ’র সহ-সভাপতি এবং ১ অক্টোবর ২০২১ পরবর্তী দু’বছরের জন্য সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করবে। বাংলাদেশের এই দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা চান প্রধানমন্ত্রী।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, আইওআরএ চেয়ার এবং দক্ষিণ আফ্রিকান পরিবেশ, বন ও মৎস্য বিষয়ক উপমন্ত্রী মাখোটসো ম্যাগডলিন সোতিয়ু, আইওআরএ মহাসচিব রাষ্ট্রদূত ড. নমভুয়িও এন নকউই, আন্তর্জাতিক সামুদ্রিক কর্তৃপক্ষ (আএসএ) মহাসচিব মাইকেল ডবøুউ লজ, পররাষ্ট্র সচিব (সমুদ্রবিষয়ক ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশীদ আলম স্বাগত বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আইওআরএ সদস্য দেশগুলোর মন্ত্রীসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (6)
Syed Hoque ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৬ এএম says : 0
Thanks for being with me
Total Reply(0)
Naimul Islam ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৩৯ এএম says : 0
Right, Ei Sujog kaje na lagate parle egano jabe na
Total Reply(0)
MHossain ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৩ এএম says : 0
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের একটা পর্দা কিনতে যদি সাতত্রিশ লাখ ৫০ হাজার লাগে, তাহলে সম্ভাবনা কাদের দিয়ে কাজে লাগাবেন।
Total Reply(0)
সাইফুল ইসলাম ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৪ এএম says : 0
আলহামদুলিল্লাহ। এটা বাংলাদেশের প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত, এটাকে কাজে লাগাতে হবে।
Total Reply(0)
মমিন উদ্দীন ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য। তিনিই মানুষের রিজিকের জন্য কত দরজা খুলে রেখেছেন, অথচ মানুষ তা মূল্যায়ন করতে পারে না।
Total Reply(0)
কাইয়ুম সরকার ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
ধন্যবাদ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আশা করি আপনার নেতৃত্বে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানো হবে।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন