শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে বিপর্যস্ত বাংলাদেশ -রিজভী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৩ পিএম

বর্তমান মিডনাইটভোট ও বিনাভোটের সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতিতে বাংলাদেশ বিপর্যস্ত বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, শেয়ারবাজার, ব্যাংক, কয়লা,পাথর,পর্দা, বালিশ, টিন, বই, চা, চেয়ার,টেবিল-সবকিছুতেই দুর্নীতি গিজগিজ করছে। হঠাৎ বিস্ময়কর অভিযানে আবিষ্কার হলো শত শত কোটি টাকা, ক্যাসিনো, মদ ও জুয়ার আসরের খবর। শত শত বছরের মসজিদের শহর ঢাকা এখন ক্যাসিনোর শহরে উন্নতি লাভ করেছে শেখ হাসিনার উন্নয়নের সরকারের বদৌলতে।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, চারদিক ডুবে গেছে লুটপাট,খুন,ধর্ষণ,মদ,জুয়া,ক্যাসিনো,চাঁদাবাজি,অনাচারে। ক্ষমতাসীন সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ,টেন্ডারবাজদের
হরিলুটে গোটা দেশটা ফাঁপা ফোঁকলা হয়ে গেছে। ব্যাংকে টাকা না থাকায় এখন সরকারি, আধাসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তহবিলে হাত দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় একটি ইতিবাচক আলোচনায় থাকতে দুর্নীতি-অনাচারের বিরুদ্ধে আকস্মিক অভিযান আইওয়াশ কিনা এ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কারণ লোক দেখানো এ অভিযানে অধরাই থেকে যাচ্ছেন মাদক ও দুর্নীতিবাজদের গডফাদাররা। কারণ এবারের আওয়ামী আমলে সমগ্র বাংলাদেশটাই ডন গডফাদারদের কব্জায়।
বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো সব দেউলিয়া করে আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতাদের ঘরে ঘরে এখন ব্যাংক, টাকশাল বানানো হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, বিদেশে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করছে, পাচারের পর উদ্বৃত্ত টাকা থেকে যাচ্ছে ঘরে। দেশটাই দেউলিয়া করে দিচ্ছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পিতার আক্ষেপের সেই ‘চাটার দল’। সরকারী দলের অঙ্গসংগঠনের চুনোপুঁটি নেতারা আঙ্গুল ফুলে একেকটা বটগাছ হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন যুবলীগের নেতারা ঢাকায় চালাচ্ছে ৬০টি ক্যাসিনো, ঢাকার বাইরেও রয়েছে আরও অসংখ্য ক্যাসিনো। যেখানে প্রতিরাতে শত শত কোটি টাকা উড়ছে জুয়ার টেবিলে। মাদকের ব্যবসা চলছে দেদারছে। এর পাশাপাশি অবৈধ নাইট ক্লাব, পানশালা, বাগানবাড়ি, এমনকি তাদের ঘরে ঘরে জুয়া ও মাদকের আসর বসছে।
ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাবগুলো দখল করে ক্ষমতাসীন রাঘববোয়াল এমপি-মন্ত্রীরা জুয়া আর ক্যাসিনো ক্লাবে পরিণত করেছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, এসব জুয়ার ক্লাব থেকে আয়ের একটা অংশ চলে যায় নানান হাত ঘুরে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে। পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী একেকটি স্পটে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩ কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়। সে হিসাবে রাজধানীর জুয়ার স্পটগুলোতে দৈনিক ৩০০ কোটি টাকা উড়ছে। এ টাকার একটি বড় অংশ হুন্ডির মাধ্যমে চলে যায় বিদেশে। এছাড়া পাড়ায় পাড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা টর্চার সেল তৈরি করে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের ধরে নিয়ে আদায় করে মোটা অংকের টাকা।
বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামীলীগ -যুবলীগের দুর্নীতি,লুটপাট ,অবৈধ অস্ত্র, সন্ত্রাস, টর্চার সেল,নির্যাতন, দখল, চাঁদাবাজি, ক্যাসিনোসহ গুরুতর সব অপরাধের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসার কারনে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়েছেন ওবায়দুল কাদের, মাহবুবুল আলম হানিফ আর হাছান মাহমুদ সাহেবরা।তারা বলছেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নাকী দেশে প্রথম জুয়া চালু করেছেন। আর ঢাকাকে ক্যাসিনোর শহর বানিয়েছে নাকী বিএনপি!! তাদের বক্তব্য শুনে একটি প্রবাদের কথা মনে হচ্ছে: “দুর্জনের ছলের প্রয়োজন হয়, দুর্বৃত্তের প্রয়োজন হয় মিথ্যার।”
তিনি বলেন, দেশে ক্ষমতাসীনরা কোন কেলেংকারী করলে যখন আর সামাল দিতে পারে না তখন তারা জনগনের দৃষ্টি ভিন্নখাতে নিতে দোষ উদর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপায়। তারা ফেঁসে গেলে সব দোষ বিএনপির। গণতন্ত্রে জবাবদিহীতা থাকে সুতরাং দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা জারি থাকলে বর্তমান সময়ের মতো লুটপাটের অলম্পিক উৎসব চলতো না। জিয়াউর রহমান এদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রর্বতক, আর আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করে একদলীয় বাকশালের প্রর্বতক। সুতরাং শহীদ জিয়ার আমলে ক্যাসিনো ও মাদকের নামই মানুষ জানত না। আর একদলীয় শাসনে জবাবদিহীতা থাকে না বলেই মাদক, ক্যাসিনো আর দুর্নীতি মহা ধুমধামে চলতে থাকে। বর্তমানেই তাই চলছে। দুর্নীতির ডাক নাম এখন আওয়ামী লীগ।
আজ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অবস্থা ৭৪ এর বাকশালের চেয়েও লুটপাট দূর্নীতি অপকর্মের রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে। আপনারা দেখেছেন,যুবলীগের ছোট নেতা জিকে শামীমের যে লোমহর্ষক কাহিনী বেরিয়ে এসেছে তাতে গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী তার অর্থ দিয়ে জোগান দেয়া যায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের অর্ধেক মূলধন। ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঈদ সালামীর দাবী যদি ৮৬ কোটি টাকা হয়! যুবলীগের শামীমের অফিস থেকে যদি প্রায় দুইশত কোটি টাকা নগদ এবং এফডিআর পাওয়া যায় তাহলে ‘বড়লীগদের’ অবস্থা কি হতে পারে! ভাবা যায় ? বাকী রইল ‘আরো কতলীগ!’ প্রশ্ন হলো, অঙ্গসংগঠনের চুনোপুঁটি শামীম যদি ৯ হাজার কোটি টাকার সরকারী কাজ করে, অফিসে পাওয়া যায় শত শত কোটি টাকা, তবে মূল সংগঠনের নেতাদের অবস্থা কি? বড় বড় রুই কাতলা মৃগেলদের কি দশা? মন্ত্রী ও তার উপরে কি অবস্থা? রাষ্ট্র কি আসলে আছে?
যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বলেছেন ‘আটক হওয়া জিকে শামীম যুবলীগের কেউ নয়।’পরে দেখা গেল খোদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শামীমের ছবি। সুতরাং শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যাবে?
গত একদশকে বাংলাদেশ থেকে ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার হয়েছে অভিযোগ করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ২০১৮ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা টাকার পরিমান ৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা। সারাদেশে ঋণখেলাপির পরিমান ১ লাখ ১০ হাজার ৮৭৪ কোটি টাকা। দেশের ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার সংকট, টাকার খোঁজে সরকার। মূলধন সংকটে দেশের ১১টি ব্যাংক। এগুলো হলো রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক; বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, বিদেশি ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান। বিশেষায়িত কৃষি ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে আটশো ১০ কোটি টাকা লোপাট হয়েছে।নানান ভাবে একেক জন লুটেরা হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়ে ব্যাংকগুলো ফাঁকা করেছে।
রিজভী আহমেদ বলেন, ৯টি ব্যাংক ইতোমধ্যে অচল হয়ে গেছে, ৫টি ব্যাংকের এলসি নিচ্ছে না বিদেশীরা।উন্নয়নের নামে সরকারী প্রজেক্ট নেয়া হয় ৫-১০ গুণ খরচে প্রাক্কলন করে। সরকারী দলের সাধারণ সম্পাদকের মন্ত্রণালয়ে চলছে মহাদুর্নীতি। যেখানে ফোর লেইন রাস্তান নির্মানে বিশ্বের কোথাও প্রতি কিলোমিটারে ২৮কোটি টাকার বেশী খরচ হয় না, সেখানে ওবায়দুল কাদের সাহেব এক কিলোমিটারে খরচ করছেন ২০০ কোটি টাকা। এই একটি মাত্র নম্বরই বলে দিচ্ছে রাঘব বোয়ালদের লুটপাট হচ্ছে কি মাত্রায়। এইসব লুটপাটের টাকা পাচার হয়ে যায় বিদেশে।আর ঘরের টাকশালে থাকে উপচে পড়া সিকি আধুলি। চুনোপুটিরা লুটপাটের ছিটেফোঁটা পেয়ে যদি শত শত কোটি টাকার মালিক হয় তবে বড় নেতারা যে লুটের টাকার কুমির তা বুঝতে আর দেশবাসীর বাকি নেই।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন