আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে জুয়া, মাদক ও ক্যাসিনোর দেশে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলটির নেতারা এই সরকারকে মাদকাসক্ত, চাঁদাবাজ, গণবিরোধী ও ক্যাসিনো সরকার বলে আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন দলটির নেতারা। তারা বলেন, এই সরকার ও সংসদ অবৈধ, জুয়াড়িদের সরকার, গণতন্ত্রের বিরোধী সরকার। পুলিশ, বিজিবি ও প্রশাসনের ওপর ভর করে ২৯ ডিসেম্বর রাতে এই সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। তাই অবিলম্বে তারা সরকারকে পদত্যাগ করে নতুন নির্বাচনের দাবি জানান। অন্যত্থায় আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতনের হুমকি দেন নেতারা। বিএনপি নেতারা বলেন, সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। দেশ আজ ক্যাসিনো আর জুয়াড়িদের দখলে।
অবিলম্বে সরকারের উচিৎ হবে পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা। একই সমাবেশে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির দাবি জানান। গতকাল (মঙ্গলবার) বিকেলে সিলেটে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে দলটির নেতারা এই আহ্বান জানান। বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সিলেট মহানগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বিভাগীয় এই সমাবেশের আয়োজন করে সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপি। বিভাগীয় এই মহাসমাবেশ ঘিরে গত সোমবার রাত থেকেই শুরু হয় নানান নাটকীয়তা। পুলিশের অনুমতি দেয়া না দেয়া, মঞ্চ তৈরির পর তিনবার তা ভেঙে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তবে গতকাল সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি প্রদান করে বলে জানান বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার। সকালে পুনরায় সমাবেশের জন্য মঞ্চ তৈরি করা হয়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশের জন্য নির্ধারিত রেজিস্ট্রারি মাঠে জমায়েত হতে থাকে। দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সমাবেশ শুরু হওয়ার আগেই বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে ওই মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে আশপাশের সড়কগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীরা। এরপর সময় যতই গড়িয়েছে ততই বেড়েছে নেতাকর্মীদের ভিড়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপনারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কর্মসূচি আসবে। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জনগণ এতো ভালোবাসে কেনো? কারণ তিনি যখন মঞ্চে বসেন সেখান থেকে নূর বিচ্ছুরিত হয়। কিসের নূর? সেই নূর হচ্ছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের নূর। গণতন্ত্রের নূর ও ধর্মের প্রতি ভালোবাসার নূর। এগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রতীক। এই সরকার জনগণকে ভয় পায় ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না বলেই সভা করতে দেয়না। কারণ তারা রাতের বেলা ভোট ডাকাতি করেছে বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে। এজন্যই তারা অবৈধ সংসদ অবৈধ। আওয়ামী লীগ খুবই পরিকল্পিতভাবে দেশকে ধ্বংস করেছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণ করেছে সরকার। এখন তারা সেটাকে রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। প্রশাসন দলীয়করণ করেছে। তারা চোর ডাকাত গ্রেফতার করতে পারেনা। কিন্তু রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কাজ করছে। গত নির্বাচনে দেশের মানুষ ভোট দিতে পারেনি। আগের রাতেই তারা ভোট ডাকাতি করেছে। গণতন্ত্রের কথা বলে তারা জনগণের সাথে প্রতারণা করে। পূণ্যভূমি সিলেটে মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতি মরহুম এমএজি ওসমানী, সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ দলের কয়েকজন নেতার নাম স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সারা দেশে পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে এই সরকার। ২৬ লাখ নেতার নামে মামলা দিয়েছে। আসলে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কারো নিরাপত্তা থাকবে না। তারা আজকে ঘরে ঘরে ক্যাসিনো ব্যবসা করছে। জুয়ার আড্ডা বসিয়েছে। এই সরকার সত্যিকার অর্থেই গণবিরোধী এবং লুটেরা সরকার। তারা মেগা প্রজেক্টের নামে মেগা লুট করছে। আপনারা আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হোন। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কর্মসূচি আসবে।
রোহিঙ্গা ইস্যু প্রসঙ্গে বিএনপির অন্যতম এই শীর্ষ নেতা বলেন, রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে এই সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি সরকার। ১৯৭৮ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং ১৯৯৩ সালে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা দেশনেত্রীর মুক্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। ভূয়া মামলায় অপবাদ দিয়ে তাকে সাজানো রায়ে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। আওয়ামী লীগ বিএনপি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও বেগম খালেদা জিয়াকে ভয় পায়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র হত্যা করেছে। আর শহীদ জিয়া বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন। কিন্তু এই সরকার ২৯ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে তা আবারো ধ্বংস করেছে। তারা লুটেরা দুর্নীতিবাজ ও জুয়াড়িদের সরকার। আজকে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস। ব্যাংকগুলোতে টাকা নেই। গত কয়েকদিনে কয়েকটি ঘটনায় সরকারের থলের কালো বিড়াল বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ক্যাসিনো ও জুয়া চলতে পারেনা। আসুন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একসাথে রাজপথে নামি।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, এই সরকার অসাংবিধানিক। ক্ষমতায় থাকার তাদের অধিকার নেই। সংবিধান মোতাবেক দেশে নির্বাচন হয়নি। ২৯ ডিসেম্বর রাতে সিভিলিয়ান ক্যু হয়েছে। পুলিশ, প্রশাসন আর সরকারের লোকেরা মিলে সেটা করেছে। আজকে এজন্যই দেশে জবাবদিহিতা নেই। ছাত্রলীগের নেতারা ৮৬ কোটি টাকার চাঁদা দাবি করেছে। যুবলীগের এক নেতার বাড়িতে ২০০ কোটি টাকা। সবার আগে তো তাদের বিচার হওয়া উচিৎ। কিন্তু সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজানো রায়ে খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে। রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে হবে। কেননা গণতন্ত্র ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একাকার। আজ দুর্নীতি সকল পর্যায়ে। আদালতের বিচারক এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও দুর্নীতি করছেন। অথচ মানুষ তাদের কত সম্মান করতেন? আজকে সরকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। দেশ আজ ক্যাসিনো আর জুয়াড়িদের দখলে। অবিলম্বে সরকারের উচিত হবে পদত্যাগ করে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আজ বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে সর্বত্র আওয়াজ উঠেছে। প্রতিটি মানুষ তার মুক্তি চায়। বহু দাগী ও ফাঁসির আসামি জামিন পেলেও খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিচ্ছে না। আমি বলি- খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে। তবে তার আগে শেখ হাসিনার পতন হবে। অবিলম্বে জনগণের আওয়াজ উপলব্ধি করে অপরাধীদেরকে আইনের হাতে তুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার মদ ও জুয়ার আসর বসিয়েছে। ক্যাসিনো ব্যবসা করছে। উন্নয়নের নামে দেশের অর্থনীতি ধ্বংস। চলছে লুটপাট। মানুষ আজ অতীষ্ঠ। ১৯৭৪ সালে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন দেশ স্বাধীনের পর সবাই পায় সোনার খনি আমি পেলাম চোরের খনি। সম্প্রতি সরকারের এই শুদ্ধি অভিযান কি আওয়ামী লীগের না অন্য কারো?
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আবদুল মুক্তাদির বলেন, বর্তমান সরকার মাদকাসক্ত এবং জুয়াড়িদের সরকার। তাদের অবস্থান খুবই দুর্বল। অবিলম্বে তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে বাধ্য হবে ইনশাআল্লাহ। তিনি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে ঢাকা সহ সারাদেশে আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নেতাকর্মীরা নেত্রী মুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণা চান। বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া তারা ঘরে ফিরতে চান না।
এছাড়াও সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও সিলেট মহানগরের নেতৃবৃন্দ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান।
জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ ও মিফতাহ সিদ্দিকীর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, ডাঃ সাখাওয়াত হোসেন জীবন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কামরুজ্জামান রতন, দিলদার হোসেন সেলিম, কলিম উদ্দিন মিলন, জি কে গউছ, আব্দুর রাজ্জাক, সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসেন, ডাঃ শাহরিয়ার চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী, তাঁতী দলের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবুল কালাম আজাদ, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মোরতাজুল করীম বাদরু, মামুন হাসান, সিলেট জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কামরুল হুদা জায়গীরদার, সিলেটের স্থানীয় নেতা আব্দুল কাহির চৌধুরী, হাবিবুর রহমান, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবুল হাশেমসহ বিএনপি ও বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক আসপিয়া, ড. এনামুল হক চৌধুরী, এমএ হক, মীর মোহাম্মদ হেলাল, মজিবুর রহমান, ছাত্রদলের সাবেক নেতা মশিউর রহমান মিশু, কয়েস আহমেদ, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার, শায়রুল কবির খান ছাড়াও সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার জেলার হাজারো নেতাকর্মী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন