বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

সত্যালোকের সন্ধানে - ইসলামে আত্মিক ইবাদতের গুরুত্ব

প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ. কে. এম. ফজলুর রহমান মুন্্শী
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
আত্মিক ইবাদতের অন্যতম পঞ্চম উপসর্গ হচ্ছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। প্রকৃতপক্ষে মানব জীবনে যে গুণটি মানুষকে প্রকৃত মানুষ হওয়ার দুয়ার প্রান্তে উপনীত করে এবং তার স্বার্থকতার পথ সুগম করে তোলে তাহলো উপকারীর উপকার স্বীকার করা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। আল-কোরআনে বার বার কৃতজ্ঞ হওয়ার তাগিদ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও।” (সূরা আরাফ : রুকু-১৭)
আরবি ভাষায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশের প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘শোকর’। এর আভিধানিক অর্থ হলো, ‘জন্তু জানোয়ার সামান্য ঘাস-পাতা খেয়ে তরতাজা থাকা এবং বেশি পরিমাণে দুধ দেয়া।” আর মানুষের ব্যবহারিক পরিভাষায় শোকর-এর অর্থ হচ্ছে “যদি কেউ কারো সামান্য কাজও করে দেয় তবে দ্বিতীয়জন এর পূর্ণ মর্যাদা ও সম্মান প্রদান করা।” সুতরাং এই মর্যাদা ও সম্মান প্রদর্শন তিনভাবে হতে পারে। যথাÑ অন্তর দ্বারা, রসনা দ্বারা ও হাত-পা দ্বারা। অর্থাৎ অন্তরে যখন উপকারীর মঙ্গল কাজের প্রতি সম্মানবোধ জেগে ওঠে তখন রসনা দ্বারা এসব কাজের স্বীকৃতি প্রদান করা এবং হাত-পা দ্বারা এসব কাজের এমন প্রতিদান দেয়া যাতে করে উপকারীর কাজের মর্যাদা সমুন্নত হয় এবং এর সম্মান বৃদ্ধি পায়।
আল-কোরআনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশকে যেমন বান্দাহদের প্রতি সম্পর্কযুক্ত করা হয়েছে, তেমনি একে আল্লাহর প্রতিও সম্বন্ধযুক্ত করা হয়েছে। তবে এর অর্থ হচ্ছে এই যে, আল্লাহপাক বান্দাদের সামান্যতম মঙ্গল কাজও সম্মানের চোখে দেখেন এবং তাদের কৃতকর্মের পরিপূর্ণ বিনিময় প্রদান করেন।
শোকর-এর বিপরীত হচ্ছে কুফর। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে লুকিয়ে রাখা, গোপন করা। আর ব্যবহারিক দিক থেকে কুফর হলো কোনো কাজ কিংবা ইহসানের ওপর প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা, মনে ও মুখে এর স্বীকৃতি আদায় না করা এবং কার্যক্ষেত্রে তা বাস্তবে রূপায়িত না করা। এর কারণেই ‘কুফরানে নেয়ামত’ নেয়ামতের না-শোকরী কথাটা বহুলভাবে প্রযোজ্য হয়ে থাকে।
ইসলামী অভিধানে কুফর হতে নিকৃষ্টতম কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া যায় না। আল্লাহপাকের নেয়ামত রাজি এবং অনুগ্রহকে বিস্মৃত হয়ে অকৃতজ্ঞ হওয়া এবং মুখে কৃতজ্ঞতার স্বীকৃতি প্রকাশ না করা এমনকি আল্লাহর আনুগত্য ও ফরমাবরদারি প্রকাশ না করার নামই কুফর। এই শ্রেণীর লোককে আল-কোরআনে কাফের রূপে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কুফর যেমন নিকৃষ্ট স্বভাব, তেমনি এর বিপরীতে শোকর হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট প্রশংসনীয় গুণ। আল-কোরআনে এই দুটি শব্দকে একটি অন্যটির বিপরীত বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “অবশ্যই আমি মানুষকে পথ দেখিয়ে দিয়েছি (এখন সে) চাই কৃতজ্ঞ হোক কিংবা না-শোকর বা কাফের হোক।” (সূরা দাহার : রুকু-১) অপর এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, “যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তাহলে তোমাদের বর্ধিত হারে (বিনিময়) প্রদান করব আর যদি তোমরা কৃতঘœ হও (কুফরি কর) তাহলে  (জেনে রেখ যে) আমার শাস্তি খুবই কঠিন।” (সূরা ইব্রাহীম : রুকু-২০)
সুতরাং এই তুলনামূলক আলোচনার দ্বারা এ কথা স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহপাকের ইহসান ও নেয়ামতের অবমূল্যায়নসহ নাফরমানি করাকেই কুফর বলা হয়। তাই এর বিপরীতে শোকর হলো আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত রাজি ও ইহসানের মর্যাদা সমুন্নত রেখে তার প্রতি পূর্ণ আনুগত্য প্রদর্শন করা এবং অন্তরের দ্বারা এ স্বীকৃতি দান করা। এ ব্যাপারে হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে আল্লাহপাক সাক্ষ্য দিচ্ছেন। ইরশাদ হচ্ছে ,“মূলত ইব্রাহীম (আ.) ছিলেন ধর্মের পথিকৃৎ, আল্লাহর প্রতি অনুগত, নির্দেশ পালনকারী ও আত্মনিবেদনকারী। তিনি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। বরং তিনি ছিলেন কৃতজ্ঞ ও অনুগত। এতে করে আল্লাহপাক তাকে মনোনীত করলেন এবং সরল পথ প্রদর্শন করলেন।” (সূরা নহল : রুকু-১৬)
এই আয়াতের দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহপাকের ইহসান ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হলে ইসলাম ধর্মের ছায়াতলে আল্লাহর নির্দেশ পালন করতে হবে এবং অংশীবাদিতা পরিহার করতে হবে। এর ফলে আল্লাহপাক আমাদেরকে কবুল করবেন এবং আমাদের কাজে ও কথায় সোজা পথ প্রদর্শন করবেন।
বস্তুত কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হচ্ছে ঈমানের মূল, দ্বীনের মৌল উপাদান এবং আল্লাহর আনুগত্যের বুনিয়াদ। এটা এমন এক অনুপ্রেরণা যার দরুন অন্তরে আল্লাহপাকের শ্রেষ্ঠত্ব ও মহব্বত প্রকাশের নামই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা এবং ঈমান আনয়ন করা। তাহলে আল্লাহপাক তোমাদের শাস্তি দেবেন কেন? “আল্লাহপাক প্রকৃতই মর্যাদা সম্পর্কে পরিজ্ঞাত ও মহাজ্ঞানী।” (সূরা নিসা :  রুকু-২১)
আল্লাহপাক বান্দাদের নিকট হতে দুটি জিনিস চান। অর্থাৎ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও ঈমান। আল্লাহর নির্দেশ পালনের ভিত্তিতে যে শরিয়ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এর সবকিছুই কৃতজ্ঞতার সাথে সম্পৃক্ত। সকল প্রকার ইবাদত, মানুষের সাথে সদ্ব্যবহার, মঙ্গলময় পদচারণা সবকিছুই কৃতজ্ঞতার বহিঃপ্রকাশ। যদি বিত্তবান ব্যক্তি অর্জিত ধন-সম্পদের কিয়দংশ আল্লাহর পথে ব্যয় করেন তাহলে এটা হবে ধন-দৌলতের দ্বারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ। আর জ্ঞানবান বান্দা যদি স্বীয় জ্ঞান দ্বারা মানুষের উপকার সাধন করেন, তাহলে সেটা হবে জ্ঞান নামক নেয়ামতের শোকরজারী। অনুরূপভাবে শক্তিমান যদি দুর্বলকে সাহায্য ও সহানুভূতি করে, সেটা হবে শক্তিমানের শোকরগুজারী। মোটকথা, শরিয়তের সকল কর্মকা-েই কৃতজ্ঞতার বিস্তৃত রূপ বিধৃত আছে। এ কারণেই শয়তান যখন আল্লাহর সামনে এই যুক্তি পেশ করল যে, অধিকাংশ বান্দাই আপনার প্রতি কৃতঘœ হবে, তখন আল্লাহ পাক প্রত্যুত্তরে ইরশাদ করলেন, “অবশ্যই কৃতজ্ঞ বান্দাদের বিনিময় প্রদান করব।” (সূরা আলে ইমরান)
শুধু তা-ই নয়, আল্লাহপাক আরও ঘোষণা করলেনÑ “তোমরা কেবলমাত্র আল্লাহপাকের বন্দেগী কর এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার : ৬)
পার্থিব জীবনে এই কৃতজ্ঞতাকে কখনো আমরা কথার দ্বারা আদায় করি, কখনো হাত-পায়ের দ্বারা পরিপূরণ করি এবং কখনো এর বিনিময় প্রদান করে এই ঋণ পরিশোধ করি। আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা রসনা দ্বারা আদায় করার নাম হচ্ছে ‘হামদ’ বা আল্লাহর প্রশংসা। এই প্রশংসা জ্ঞাপনের উপমা, উদাহরণ ও নির্দেশাবলী আল-কোরআনের সর্বত্র পরিদৃষ্ট হয়। এ কারণে আল্লাহর প্রশংসার মাঝে ওই সকল পরিপূর্ণ গুণাবলী, করুণা, দয়া অনুকম্পার উল্লেখ পাওয়া যায়, যা সকল ইহসান ও নেয়ামতরাজির মূল প্রতিধ্বনি। তাই একথা স্পষ্টতই বলা যায় যে, সূরা ফাতিহা যেমন আল-কোরআনের একান্ত নির্যাস, তেমনি সূরা ফাতিহার নির্যাস হচ্ছে আল্লাহর হামদ বা প্রশংসাÑ এ কারণেই আল-কোরআনের শুরু সূরা ফাতিহা দ্বারা এবং সূরা ফাতিহার শুরু হামদ বা প্রশংসা দ্বারা। ইরশাদ হচ্ছে, “সকল প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহর জন্য নিবেদিত।” (সূরা ফাতিহা : রুকু-১) এই পৃথিবী এবং এর-বৈচিত্র্যময় বস্তুরাজির জীবন, প্রতিপালন, স্থিতিশীলতা ও রং-রূপ গন্ধ স্পর্শের অবিচ্ছেদ্য চঞ্চল প্রবাহ কেবল একটি কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। আর তা হলো কৃতজ্ঞতার মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করা, যা বহুরূপী দুনিয়ার মূল প্রবাহর সাথেই সর্বাংশে জড়িত। কেননা, এই পৃথিবী যখন জীবনের ঘাঁটিসমূহ অতিক্রম করে লয় হয়ে যাবে, বর্তমান দুনিয়ার এই জমিন ও আসমান স্বীয় করণীয় কর্তব্য ও পালনীয় দায়িত্ব শেষ করে এক নতুন বিশ্বের রূপ পরিগ্রহ করবে, তখন প্রথম দুনিয়ার কর্মানুষ্ঠানের ভিত্তিতেই সকল মানুষ নতুন দুনিয়ায় বিনিময় লাভে ধন্য হবে। পুণ্যবানরা পুণ্যের বিনিময় এবং পাপীরা পাপের সাজা লাভ করবে। এমনকি জান্নাতিরা জান্নাতে এবং জাহান্নামিরা জাহান্নামে গমন করবে। এ অবস্থা তখনই দেখা দেবে যখন দুনিয়ার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশের আর সুযোগ থাকবে না। তখন সব সৃষ্টির আনাচ-কানাচ হতে এই ধ্বনিই উত্থিত হবে, “ঘোষণা করা হয়েছে যে, সারা জাহানের প্রতিপালকের প্রতি যাবতীয় কৃতজ্ঞতাসুলভ প্রশংসা নিবেদিত।” (সূরা যুমার : রুকু-৮) আল্লাহপাক আমাদেরকেই বহু শারীরিক নেয়ামত দান করেছেন। এসবের কৃতজ্ঞতা এই যে, স্বীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর কৃতজ্ঞতার পথে সংযুক্ত রাখা এবং ওই সকল ব্যক্তির প্রতি সাহায্য ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা, যারা এ সকল নেয়ামত হতে বঞ্চিত। ধন-সম্পদের কৃতজ্ঞতা এই যে, প্রয়োজনীয় সম্পদের অতিরিক্ত অংশ দ্বারা গরিব, দুস্থ, রুগ্ন ও জ্ঞানহীনদের সাহায্য ও জ্ঞানদানে এগিয়ে আসা। তাই আমরা দেখতে পাই যে, আল-কোরআনে উল্লিখিত সকল নেয়ামতের সাথেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশের তাম্বিহ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “তোমরা এ সকল জন্তু-জানোয়ারের গোশত ভক্ষণ কর এবং অন্যান্যকেও ভক্ষণ করাও, যারা একান্ত দুস্থ ও অসহায়। এভাবেই আমি এ সকল জানোয়ারকে তোমাদের অধীনস্থ করে দিয়েছি যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা হজ : রুকু-৫) অপর এক আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে,
“এবং আল্লাহপাকই তোমাদেরকে মায়েদের পেট হতে বহির্গত করেছেন, যা সম্বন্ধে তোমরা কিছুই জানতে না এবং তোমাদের কান, চোখ ও অন্তর দিয়েছেন, যাতে করে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর।” (সূরা নহল : রুকু-১১) চলমান দুনিয়ায় দেখা যায় অনেকেই মৌখিক শোকরিয়া কিংবা আলহামদুলিল্লাহ বলেই কৃতজ্ঞতার দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে গেছে বলে মনে করেন। কিন্তু এটা একটা ভুল ধারণা। কেননা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পূর্ণাঙ্গ ধারা মনে, মুখে ও কর্ম প্রবাহের ভিতর দিয়ে একসাথে প্রবাহিত হলেই তাকে কৃতজ্ঞতা বলে আখ্যায়িত করা যায়, অন্যথায় নয়।
হামদ ও প্রশংসায় উক্ত সুউচ্চ ধ্বনি বর্তমান বিশ্বের প্রতিটি ধুলি-বালি হতে আজও বুলন্দ হয়ে চলেছে, আল-কোরআনে ঘোষণা করা হয়েছে, “তাঁরই প্রশংসা নভোম-লে ও ভূম-লে বিস্তৃত।” (সূরা রুম : রুকু-২)
ফেরেশতা কুলও এই হামদে মশগুল রয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে, “যারা আরশকে উত্তোলন করে আছে এবং যারা এর চারপাশে রয়েছে, তারা সবাই স্বীয় প্রতিপালকের প্রশংসাসুলভ পবিত্রতা বর্ণনা করেছে।” ইরশাদ হচ্ছে, “এমন কোনো বস্তু নেই যা আল্লাহর প্রশংসাসুলভ পবিত্রতা বর্ণনা করে না।” (সূরা বনী ইসরাঈল : রুকু-৫) এই কৃতজ্ঞতাসুলভ হামদ ও তাসবিহের তাকিদ মানুষের প্রতিও প্রযোজ্য। ইরশাদ হচ্ছে, “স্বীয় প্রতিপালকের পবিত্রতাসুলভ প্রশংসা কর।” (সূরা ফুরকান)
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুনান ও শামায়েলে সকল সময় প্রত্যেক মুহূর্তে অধিক হারে দোয়া পাঠ করার বিবরণ আছে। যেমন আহার গ্রহণ করা, নতুন কাপড় পরা, নিদ্রা যাওয়া, নতুন ফল খাওয়া ইত্যাদির দোয়াসমূহ। এ সকল দোয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহপাকের নেয়ামতসমূহের শোকরিয়া আদায় করা। তবে এই শোকরিয়া আদায়ের মাঝে আন্তরিক একাত্মতাও অত্যন্ত জরুরি।
আল্লাহপাক আমাদেরকে যেসব দৈহিক নেয়ামত প্রদান করেছেন, এগুলোর শোকরগুজারী এই যে, এর যাবতীয় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহপাকের নির্দেশ পালনে ব্রতী রাখা। একই সাথে যারা দৈহিক অসুবিধা ও ত্রুটি-বিচ্যুতির শিকার তাদেরকে প্রাণপণ সেবা-যতœ করা। কেননা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতরাজিকে আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুর কল্যাণে নিয়োজিত করাও শোকরগুজারীর উত্তম পন্থা। আর মাল-সম্পদভিত্তিক নেয়ামতসমূহের শোকর হচ্ছে এই যে, নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ দ্বারা অপেক্ষাকৃত অসহায় ও দুরবস্থায় নিপতিত লোকদের সাহায্য ও সহানুভূতি করা। খাদ্য, পানীয় বস্তু ও ব্যবহারিক তৈজসপত্রের দ্বারা যে সাহায্য করা হয়ে থাকে তা এরই মাঝে অন্তর্ভুক্ত আছে।
কোরআনুল কারীমে বিভিন্ন প্রকার নেয়ামত উপভোগ করার পর শোকর আদায় করার তাগিদ এসেছে। তাই দেখা যায় নেয়ামতের পর্যায়, শ্রেণী-ভেদ ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে শোকর আদায় করাটাই যথার্থ বিবেচনার কাজ। এক স্থানে ইরশাদ হয়েছে, “তিনিই বৃহত্তর বরকতের অধিকারী, যিনি আকাশম-লকে বিভিন্ন কক্ষে বিন্যস্ত করেছেন এবং এর মাঝে রেখেছেন, সূর্য ও চন্দ্র। তিনিই রাতকে দিনের পরে অবর্তিত করেন, ওই ব্যক্তির জন্য যে শোকর আদায় করার স্মরণে ব্যাপৃত। (সূরা ফুরকান : রুকু-৬) এই আয়াতে আল্লাহপাকের কুদরতী নেয়ামতরাজির শোকর আদায় করার হেদায়েত করা হয়েছে। এগুলোর শোকর এভাবেও আদায় করা যায় যে, প্রাকৃতিক বস্তুনিচয়ের পরিক্রমাকে সেগুলোর নিরিখেই স্বীকার করে নেয়া। সূর্যের কিরণ ও চাঁদের আলোতে অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য নিষ্পন্ন করা এবং প্রতিটি ফরজকে যথার্থভাবে আদায় করা। (অসমাপ্ত)  

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন