‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ বলার পর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান। গত বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এক অনুষ্ঠানে ভিসি এম আব্দুস সোবহান ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দিলে ‘থ’ বনে যান অনুষ্ঠানে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তবে ভিসি এ ধরণের বক্তব্য দেয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি না হলেও মিডিয়ায় প্রকাশিত হয় বিষয়টি। এরপর থেকেই চলছে সমালোচনার ঝড়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা এই স্লোগানকে দেশের সার্বভৌমত্বের হুমকি স্বরুপ উল্লেখ করে তাকে অতিদ্রুত পদত্যাগ এবং ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়াও ভিসিকে দ্রুত ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিশ^বিদ্যালয়ের বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী শিক্ষকদের গ্রুপ সাদা দল। একই সঙ্গে এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা। ‘জয় হিন্দ’ স্লোগানের বিষয়ে সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী ইনকিলাবকে এব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন। দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বিশ^বিদ্যালয়ের একজন ভিসি এরুপ স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য দেয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে নানান ধরণের প্রতিক্রয়া।
গতকাল রোববার সাদা দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোহা. এনামুল হক স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ দাবি জানানো হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ধৃষ্টতা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল। এর মধ্যে দিয়ে তিনি (ভিসি) তার পদের চরম অবমাননা ঘটিয়েছেন এবং ওই পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। সুতরাং অবিলেম্ব তাকে জাতির সামনে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই সঙ্গে আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকা-ের জন্য তার যথাযথ শাস্তির দাবি জানান।
এছাড়াও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, আমরা অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি কীভাবে আধিপত্যবাদী একটি দেশের জয়ধ্বনি দিতে পারেন! এটা দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম অবমাননাকর। এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় তিনি বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব এবং রাষ্ট্রীয় সত্ত্বাবিরোধী ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে মিলে দেশবিরোধী চক্রান্তে লিপ্ত হয়েছেন। যাতে অখ- ভারতের স্লোগান দিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা সা¤্রাজ্যবাদী শক্তির গোলাম হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ক্ষমা না চাইলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার তার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির এক নেতা জানান, যেহেতু বিষয়টি নিয়ে এখনও সমিতিতে আলোচনা হয়নি; তাই সমিতির পক্ষ থেকে আমি কোনও মন্তব্য করবো না। তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, স্বাধীন দেশের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়ে অন্য একটি দেশের স্লোগান তিনি দিতে পারেন না। কোন প্রেক্ষাপটে তিনি এ ধরনের স্লোগান দিলেন, আমার বোধগম্য নয়। মানসিকভাবে অসুস্থ না হলে এ ধরনের স্লোগান দেওয়ার কথা না।
বিষয়টি নিয়ে নানান প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতারা। তারা বলছেন, এ ধরনের স্লোগান স্বাধীনতাবিরোধী, দেশকে সংকটের মুখে ফেলে দেয়ার একটা ষড়যন্ত্র।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মাসুদ মোন্নাফ ইনকিলাবকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বলা হয় জাতির পথপ্রদর্শক। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ভিসি যখন অন্য একটি দেশের স্লোগান দেন, তখন তিনি এই পদে থাকার নৈতিকতা হারান। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা হওয়া উচিত।
প্রগতিশীল ছাত্রজোটের রাবি শাখার সাবেক আহ্বায়ক ও ছাত্রমৈত্রীর সাধারণ সম্পাদক রঞ্জু হাসান জানান, এ ধরনের স্লোগান আমাদের সংবিধান পরিপন্থী। এ বক্তব্য ও সাম্প্রতিক কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে আমরা ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করেছি। সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা যুগ্ম-সম্পাদক সানিন চৌধুরী বলেন, একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির এমন স্লোগান দেওয়া দূর্ভাগ্যজনক। আমরা অনতিবিলম্বে তার অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
এ বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। তবে ভিসি দফতরে দফতরের সহকারী রেজিস্ট্রার নারায়ণ চন্দ্র বর্মণ ভিসি এব্যাপারে অবগত আছেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহীদুল্লাহ, রাজশাহীতে নিযুক্ত সহকারী ভারতীয় হাইকমিশনার সঞ্জীব ভাট্টি, দুই প্রো-ভিসি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা ও অধ্যাপক চৌধুরী মো. জাকারিয়া’র উপস্থিতিতে ইতিহাস বিভাগ ও জন-ইতিহাস চর্চা কেন্দ্রের যৌথ আয়োজনে ‘কালচার, পিস অ্যান্ড এডুকেশন ফ্রম দ্য পারস্পেকটিভ অব পিপলস হিস্ট্রি’ শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের শেষ মুহূর্তে ‘জয় বাংলা’র পর ‘জয় হিন্দ’ স্লোগান দেন ভিসি এম আব্দুস সোবহান। বিষয়টি মিডিয়ায় আসার পর এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন