বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

তিন সপ্তাহ ধরে যুবলীগ চেয়ারম্যান কার্যালয়ে যান না

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ অক্টোবর, ২০১৯, ৪:৫৭ পিএম

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চলমান অভিযানকে ‘শুদ্ধি অভিযান’ নাম দিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সন্ত্রাস, চাঁদবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের ভাসানচরে পাঠানো হবে।
ক্যাসিনো ব্যবসায় যুবলীগ নেতাদের মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর বিরুদ্ধে। এরই মধ্যে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তলব করা হয়েছে ব্যাংক হিসাব।

এ অবস্থায় তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে দলীয় কার্যালয়ে যান না যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। যান না তার আড্ডার প্রিয় স্থান ধানমন্ডির যুব গবেষণা কেন্দ্রেও। বাসায় চার দেয়ালের মধ্যে গত ২২ দিন ধরে সময় কাটছে তার।

সর্বশেষ গত ২০ সেপ্টেম্বর উত্তরায় যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তরের একটি ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনে দেখা গিয়েছিল ওমর ফারুক চৌধুরীকে। এরপর থেকে কেটে গেছে ২৩ দিন। এই সময়ে তার দেখা পাননি নেতাকর্মীরা। শুক্রবার যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ প্রেসিডিয়াম সভায়ও হাজির হননি ওমর ফারুক চৌধুরী। কাউন্সিলের আগে অনুষ্ঠিত রুদ্ধদ্বার ওই বৈঠকে তার অনুপস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।

গত বুধবার যুবলীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। ২৩ নভেম্বর যুবলীগের ৭ম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। কংগ্রেসের তারিখ ঘোষণার পর চাঙাভাব দেখা দিয়েছে যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে। পদপ্রত্যাশীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। নেতা-কর্মীদের অনেকে ধারণা করেছিলেন, ওমর ফারুক চৌধুরী সংগঠনের কার্যালয়ে আসবেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অসংখ্য নেতা-কর্মী অপেক্ষা করেও তার দেখা পাননি। ফোনেও তাকে পাচ্ছেন না তারা।

ব্যাংক হিসাব তলব ও অনুমতি ছাড়া বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওমর ফারুক চৌধুরী প্রকাশ্যে আসছেন না।

ধানমন্ডির ৫ নম্বর সড়কে তার প্রতিষ্ঠিত যুব গবেষণা কেন্দ্রের কার্যালয়ে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। ধানমন্ডির ৮/এ সড়কে তার বাসায় অবস্থান করছেন।

ওমর ফারুক চৌধুরী যে বাসায় থাকেন, ‘ইস্টার্ন হেরিটেজ’ নামের সেই বাসার দারোয়ান মেহেদি বলেন, গণমাধ্যমকর্মী বা দলীয় নেতাকর্মী কারোরই ভেতরে যাওয়ার অনুমতি নেই। ওমর ফারুক চৌধুরী বাসায় আছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা তো আমি বলতে পারব না।’

এদিকে ওই বাসার আশপাশের বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগে সেখানে প্রায়ই নেতাকর্মীদের লাইন লেগে থাকত। অভিযান শুরুর পর প্রথম দিকে অনেক নেতাকর্মী যুবলীগ চেয়ারম্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সেখানে গিয়েছেন। কিন্তু কয়েক দিন হল সেখানে কারও দেখা মিলছে না।

যুবলীগের ইতিহাসে ৫০ বছরের বেশি বয়সী কেউ চেয়ারম্যান হননি। ১৯৭২ সালের নভেম্বরে শেখ ফজুলল হক মণি যখন যুবলীগ প্রতিষ্ঠা করেন, তখন তার বয়স ছিল ৩২ বছর। আর ওমর ফারুক চৌধুরী যখন চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান, তখন তার বয়স ৬৪ বছর। ৭ বছর ধরে চেয়ারম্যানের পদে রয়েছেন তিনি। এই সময়টায় আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায়।

জানা গেছে, তামাকের বিকল্প ‘টেন্ডু পাতা’ বিক্রির মাধ্যমে তার পেশাগত জীবন শুরু হয়। বিড়ি শ্রমিক লীগ, জাতীয় পার্টির অঙ্গসংগঠন যুব সংহতির রাজনীতি করে আসা ওমর ফারুক ২০০৯ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হন। ২০১২ সালে যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটি নয়, সব বিষয়ে তার সিদ্ধান্তই শেষ কথা হয়ে দাঁড়ায়। তার দাপটে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতারাও টু শব্দটি পর্যন্ত করার সাহস পাননি।

অভিযোগ রয়েছে যুবলীগের চেয়ারম্যান হওয়ার পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান। ঢাকা মহানগর ও দেশব্যাপী জেলা কমিটিগুলোও হয়েছেন তার পকেটের লোক দিয়ে।

ক্যাসিনোসহ নানা অভিযোগে সংগঠনের বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হন। বাংলাদেশ ব্যাংক তার সম্পদের হিসাব তলব করে। এরই মধ্যে গ্রেফতার হন যুবলীগের আরেক শীর্ষ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট।

এর আগে ওমর ফারুক চৌধুরীর দেশত্যাগের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এ বিষয়ে বিমানবন্দর ও স্থলবন্দরগুলোয় সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়। নেয়া হয় বাড়তি সতর্কতা।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংক হিসাব তলবের পর নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ধানমণ্ডির বাসভবনে আছেন ওমর ফারুক চৌধুরী।

পাশের ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকেও জুয়ার সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এ ক্লাব পরিচালনার নেতৃত্বে ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসার। এর পর ধানমণ্ডির কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে অভিযান চালিয়েও ক্যাসিনো চালানোর প্রমাণ পায় র্যা ব। অস্ত্র-গুলি ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয় ক্লাবের সভাপতি কৃষক লীগের সহসভাপতি শফিকুল আলম ফিরোজকে।

এর মধ্যে যুবলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে ঠিকাদারি করা গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জিকে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। পরে গ্রেফতার করা হয় মোহামেডান ক্লাবের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বিসিবির পরিচালক লোকমান ভূঁইয়াকে।

দুবাই থেকে গ্রেফতার করা হয় শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসানকে। পরে গ্রেফতার করা হয়েছে ক্যাসিনো সম্রাট যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
সচেতন জনতা ১৪ অক্টোবর, ২০১৯, ২:১১ পিএম says : 0
সে মদতদাতা ?তা হলে তার বিরুদ্ধে কোন এ্যাকশন নেওয়া হচ্চেনা কেন? পত্রপত্রিকার খবরে যা দেখতে পেয়েছি , তাতে সে যে ধোয়াঁতুলশি পাতা নন তা বুঝাই যাচ্চে।
Total Reply(0)
হারুন ১৬ অক্টোবর, ২০১৯, ৯:২৯ পিএম says : 0
ওমর ফারুক গলাবাজি অনেক দিন চলেছে পালাবে কোথায় ?
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন