রাজধানীর হাতিরঝিলে নির্মিত বিজিএমইএ ভবন ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১৫ তলা এই ভবন প্রথম দিকে ডিনামাইট পদ্ধতি ব্যবহার করে ভাঙার কথা শুনা গেলেও শেষ পর্যন্ত তা সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙা হচ্ছে।
মঙ্গলবার দুপুরে এসব তথ্য জানান রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ.এস.এম রায়হানুল ফেরদৌস ।
তিনি জানান, ভবনটিতে বিজিএমই-এর যেটুকু মালামাল অবশিষ্ট ছিল, তা সোমবার সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। এতে সাতদিন সময় লাগবে। তারপরই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে
বাংলাদেশে এর আগে কখনও এত বড় ভবন ভাঙা হয়নি। এক দশক আগে তেজগাঁওয়ের র্যাংগস ভবন ভাঙা হয়েছিল, তা বিজিএমইএ ভবনের চেয়ে ছোট ছিল।
তিনি বলেন, এখন বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ এখানে থাকা কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যাচ্ছে, বিল্ডিংটা ফ্রি করা হচ্ছে। এটা করতে সাতদিনের মতো লাগবে। এরপর থেকেই মূল কাঠামো ভাঙার কাজ শুরু হবে।
পুরো ভবন ভাঙতে কতদিন সময় লাগতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল ফেরদৌস বলেন, মালামাল সরিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়েই আসলে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়ে গেছে। এ কাজ করতে আমাদের ৬ মাস সময় দেয়া হয়েছে। এখন দেখা যাক কতটুকু সময় লাগে।’
ডিনামাইট পদ্ধতি ব্যবহারের কথা শুনা গেলেও এখন সনাতন পদ্ধতিতে কেন ভাঙা হচ্ছে-জানতে চাইলে রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী বলেন, আসলে ডিনামাইট পদ্ধতিতে ভবন ভাঙা ব্যয়বহুল। এজন্য সনাতন পদ্ধতিতেই ভাঙার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর এই ভবন থেকে যাবতীয় কার্যক্রম এবছরের শুরুতে ঢাকার উত্তরায় নতুন ভবনে সরিয়ে নিয়েছিল বিজিএমইএ।
১৯৯৮ সালে সরকারের কাছ থেকে জমি পেয়ে কারওয়ান বাজারের হাতিরঝিলে ভবন গড়ে তুলেছিল বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ।
জলাধার আইন লঙ্ঘন করে ভবনটি তোলায় ২০১১ সালে তা ভেঙে ফেলার রায় আসে হাই কোর্ট থেকে। পরে আপিল বিভাগও সে রায় বহাল রাখে।
বিজিএমইএ ভবনটিকে সৌন্দর্যমণ্ডিত হাতিরঝিলের ‘ক্যান্সার’ আখ্যায়িত করেছিল হাই কোর্ট।
রায়ে বলা হয়েছিল, “একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা হিসেবে বিজিএমইএর আইনের প্রতি আরও বেশি শ্রদ্ধাশীল হওয়া বাঞ্ছনীয় ছিল। তারা তা না করে আইনকে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করেছে।”
আদালতের রায়ের পর ভবন খালি করতে কয়েক দফা সময় নিয়েছিল বিজিএমএইএ; এরপর গত এপ্রিলে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয়।
গত এপ্রিলে বিজিএমইএ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউকগত এপ্রিলে বিজিএমইএ ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক
এরই মধ্যে ভবনটি ভাঙার এবং ব্যবহারযোগ্য মালামাল কিনতে আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে দরপত্র আহ্বান করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। আগ্রহীদের ২৪ এপ্রিল বিকাল ৪টার মধ্যে রাজউক চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করতে বলা হয়।
তিন মাসের মধ্যে ভবন ভাঙার শর্ত দিয়ে ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগ্রহী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে বহুতল ভবন ভাঙার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। ভাঙার ব্যাপারে ক্রেতাকে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
রাজউকের ওই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর পাঁচটি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব জমা দেয়।
এর মধ্যে মেসার্স সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স এক কোটি ৭০ লাখ টাকা, পিএনএস এন্টারপ্রাইজ ৫৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা, মেসার্স চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ এক কোটি টাকা, ফোর স্টার এক কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা এবং মেসার্স সামিরা এন্টারপ্রাইজ ৩০ লাখ টাকা দর প্রস্তাব করে।
রাজউকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সবকিছু যাচাইবাছাই শেষে ফোর স্টার নামে প্রতিষ্ঠানটিকে বিজিএমইএ ভবন ভাঙার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
রাজউকের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ভবন ভাঙার জন্য আলাদা কোনো অর্থ পাবে না। দুটি বেইজমেন্টসহ ১৫ তলা বিজিএমইএ ভবন ভাঙার পর ব্যবহারযোগ্য মালামাল বিক্রি করে তারা তাদের খরচ ও লাভ উঠিয়ে নেবে।
ধ্বংসাবশেষ বিক্রির টাকায় ভাঙার খরচ না উঠলে বিজিএমইএর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হবে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন