ভারত অধিকৃত কাশ্মীরিদের জান-মাল রক্ষায় আরও জোরালো ভূমিকা গ্রহণ করতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আহ্বান জানিয়েছেন ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের সর্বদলীয় হুররিয়াত কনফারেন্সের(এপিএইচসি) প্রধান সাইয়েদ আলী গিলানি।
গত সোমবার গৃহবন্দি অবস্থা থেকে লেখা এক চিঠিতে পাক প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেন, হতে পারে আপনার সঙ্গে এটিই আমার শেষ যোগাযোগ। শারীরিক অসুস্থতা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে আপনাকে হয়তো বা আর চিঠি লেখা যাবে না। খবর জিয়ো নিউজ ও এক্সপ্রেস ট্রিবিউন উর্দূর।
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই ভাগ করে ফেলার পর থেকেই গৃহবন্দি অবস্থায় রয়েছেন হুররিয়ত নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানি।
প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সহায়তা চেয়ে সর্বদলীয় এ হুররিয়াত নেতা বলেন, স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর থেকে ভারত সরকার জোরপূর্বক আমাদের জায়গা-জমি ছিনিয়ে নিতে চাচ্ছে। জাতিসংঘ ঘোষিত নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কাশ্মীরি নারীদের প্রতিনিয়ত হেনস্তা করছে ভারতীয় বাহিনী।
ওই চিঠিতে সৈয়দ আলী গিলানি বলেন, কাশ্মীরকে ভারত সরকার অবরুদ্ধ করে একটি জেলখানায় পরিণত করেছে। সবধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরও কাশ্মীরের জনসাধারণ ভারতীয় জুলুমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে, ভারতীয় বাহিনীর গুলির মুখেও কাশ্মীরি জনগণ প্রতিবাদ করছে।
স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানের ব্যাপক সহায়তার প্রয়োজন উল্লেখ কাশ্মীরের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রবীণ এ নেতা বলেন, এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সন্ধিক্ষণ। সর্বদলীয় সংসদীয় বৈঠকের মাধ্যমে পাকিস্তানের উচিত একটি মৌলিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া।
ইমরান খানের উদ্দেশে লেখা চিঠিতে ভারতের সঙ্গে সবধরনের চুক্তি স্থগিত রাখারও আহ্বান জানান সৈয়দ আলী গিলানি।
ভারত অধিকৃত কাশ্মির ইস্যুটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন কাশ্মিরের হুররিয়াত কনফারেন্স নেতা সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি।
সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানির এই চিঠির একটি কপি হাতে পেয়েছে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। চিঠিতে ইমরান খানকে উদ্দেশ করে গিলানি বলেছেন, “জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনে কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের ব্যাপারে ভারত সরকারের অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে এবং জম্মু-কাশ্মিরের নির্যাতিত নিপীড়িত জনগণের পক্ষে আপনি যেভাবে কথা বলেছেন তা প্রশংসার দাবিদার। ১৯৪৭ সাল থেকেই ভারতীয় দখলদারিত্ব ও অন্যায় আচরণ হতে মুক্তি লাভের জন্য জনগণ বিভিন্ন পর্যায়ে সংগ্রাম করে এসেছেন। সেই থেকে কাশ্মিরের নারী, পুরুষ এবং শিশুরা সংগ্রামকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৮৮, ২০০৮, ২০১০ ও ২০১৬ সাল মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। দিন দিন স্বাধীনতার এ সংগ্রাম জোরদার হয়েছে যা ভারত নস্যাৎ করতে ব্যর্থ। ভারতের অবৈধ ইচ্ছা কাশ্মিরের জনগণের ওপর চাপিয়ে দিতে গিয়ে তারা ব্যাপকভাবে এ অঞ্চলে কারফিউ জারি করেছে। এজন্য তারা টেলিফোন এবং ইন্টারনেট-সহ সব ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দিয়েছে। হাজার হাজার শিশু, বৃদ্ধ, কিশোর, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, ছাত্র, ডাক্তার, হুররিয়াতের নেতা ও তাদের আত্মীয়-স্বজনকে আটক করা হয়েছে এবং ভারতের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। শত শত তরুণের উপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়েছে।”
সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি বলেন, “ভারতীয় সেনারা পিলেট গান ব্যবহার করছে এবং কাশ্মিরি তরুণদের অন্ধ করে দিচ্ছে। রাষ্ট্রীয় নীতির আওতায় কাশ্মিরের জনগণের ওপর নিগ্রহ করা হচ্ছে, যৌন হয়রানি, এমনকি পুরুষদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানো হচ্ছে। ভারতের দখলদার বাহিনী বাড়ি বাড়ি ঢুকে বাকবিতন্ডা করছে এবং নারীদের ওপর যৌন নির্যাতন চালাচ্ছে। মা-বাবার কাছে তাদের তরুণী মেয়েদের বয়স জানতে চাওয়া হচ্ছে। দখলদার বাহিনী জনগণের কাছে বলছে যে, তাদের আসল লক্ষ্য হচ্ছে কাশ্মিরের মুসলিম নারীদের অসম্মান করা। বহু মানুষকে হুমকি দেওয়া হয়েছে যে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হবে। বহু মানুষের ঘরবাড়ি কেড়ে নেওয়ার জন্য তাদেরকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে।”
চিঠিতে বলা হয়, “লাদাখের মুসলমানরাও বর্বর ভারতীয় বাহিনীর করুণার ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ ওই অঞ্চলের জনগণও ভারতের অবৈধ কর্মকান্ডের বিরোধিতা করছেন।”
গিলানি বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের যে প্রস্তাবে কাশ্মিরের জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দেওয়া হয়েছে ৫ আগস্টের সিদ্ধান্ত তার বিরোধী। যেভাবে ইহুদিবাদী ইসরায়েলের সেনারা ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে তাদের ভূমি জবর দখল করে নিচ্ছে এবং অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে, ঠিক একইভাবে ভারতের সেনারাও একই কাজ করছে। উন্নয়নের নামে কাশ্মিরের জমি ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এসব করা হচ্ছে কাশ্মিরের জনগণকে তাদের ভূমিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ে পরিণত করার জন্য। উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের নামে আমাদের সম্পদকে প্রতারণার মাধ্যমে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। দখলদারিত্বের মাধ্যমে কাশ্মিরি জনগণকে সেখানে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকে পরিণত করার চক্রান্ত করা হচ্ছে।
ইমরান খানকে বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সরকারি পর্যায়ে পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন সাইয়্যেদ আলী শাহ গিলানি। তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, জম্মু-কাশ্মিরের জনগণ যে কোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে। সূত্র: পার্স টুডে, এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন