পেঁয়াজ, চাল ও লবণের মূল্য বৃদ্ধির কারণ জানতে চেয়ে সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, আমি হয়তো বড় গলা করে বলতে পারি আমি পেঁয়াজ খাবো না। কিন্তু তাতে কোন বাহাদুরি নেই। আমি পেঁয়াজ খাবো না এই কথার সত্যিকার অর্থ হচ্ছে- বাংলাদেশের মানুষের আজ আর পেঁয়াজ কেনার সামর্থ্য নাই। আমি পেঁয়াজ খাবো না অর্থ হচ্ছে- পেঁয়াজের মূল্য আমি নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, পেঁয়াজের মূল্য আমি সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে রাখতে পারিনি সেই ব্যর্থতাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করা। মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে নয়াপল্টনে ভাসানী ভবনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত দরিদ্র মানুষের মধ্যে পেঁয়াজ, চাল ও শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. মঈন খান দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধির সমালোচনা করে বলেন, পেঁয়াজের মূল্য মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ১০-১১ গুণ বৃদ্ধি হয়েছে। শুধু পেঁয়াজ নয়, ইতোমধ্যে খুচরা এবং পাইকারি বাজারে চালের দামও বেড়েছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে কেন আজকে পেঁয়াজ, চাল, লবণের দাম বেড়েছে? সেই প্রশ্নের জবাব আমরা চাই। বর্ধিত মূল্যের কারণে যে, শত শত কোটি টাকা দেশের সাধারণ মানুষের পকেট কেটে লুট করা হচ্ছে সেই টাকা কার পকেটে গিয়েছে তার জবাব সরকারকে দিতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা জানি সরকারের কোষাগার শূণ্য, এজন্য তারা পাগল হয়ে গেছে, হন্যে হয়ে অর্থ সংস্থান করার চেষ্টা করছে। এজন্য তারা মানুষের ওপর করের বোঝা চাপিয়েছে। সাধারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর ওপরও হাজার হাজার টাকার কর আরোপ করা হয়েছে, যে টাকা দেয়ার সামর্থ্য তাদের নেই। সরকার এটা করছে কারণ তারা তাদের খাজান্তিখানা লোপাট করে দিয়েছে। মেগা মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে মেগা দুর্নীতি করে। কিন্তু দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে যে, শত শত কোটি টাকা লোপাট হয়েছে তা তো সরকারি খাজান্তিখানায় যায় নাই, সেটা গেছে সরকারের আশীর্বাদপুষ্ট কয়েকজন মানুষের পকেটে। তাহলে কেন এই দেশের মানুষ তাদের রক্ত পানি করা টাকা গুটিকয়েক মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য দেবে। এই প্রশ্নের উত্তর সরকারকে দিতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে মঈন খান বলেন, আপনাদের কি ২৩০ টাকায় পেঁয়াজ, ১০০ টাকায় লবণ কেনার সামর্থ্য আছে? আজকে চালের মূল্য মণ প্রতি ৫০০-৭০০ বেড়েছে। তাই আসুন আমরা আমাদের অধিকারের কথা বলি, গণতন্ত্র কায়েম করি। আজকে প্রমাণিত হয়েছে, দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, জবাবদিহিতা না থাকে, সুশাসন না থাকে, সুবিচার না থাকে তাহলে কোন দেশের উন্নয়ন হতে পারে না। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হয়েছে সেটি কসমেটিক উন্নয়ন। এই সরকারের অধীনে দেশের মানুষের সত্যিকার কোন উন্নয়ন হয়নি, হবে না।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশের দরিদ্র ও শান্তিপ্রিয় মানুষ। শান্তিতে দু বেলা খেয়ে বাঁচতে চাই। অথচ সরকার যদি সেটা না দেয় তাহলে দেশের মানুষ কোথায় যাবে? ধনীর প্রাসাদ দেখে তো গরিবের পেট ভরবেনা। আসুন আমরা গণতন্ত্র কায়েম করি। কারণ এটা প্রমাণিত যে, দেশে যদি গণতন্ত্র না থাকে, জবাবদিহিতা না থাকে, সুশাসন-সুবিচার না থাকে তাহলে কোনো দেশ উন্নত হতে পারেনা। আজকে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন চলছে এটা হচ্ছে কসমেটিক উন্নয়ন। সত্যিকারার্থে দেশে কোনো উন্নয়ন নেই। আসুন আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদ জিয়াকে মুক্ত করে জনগণের কাতারে নিয়ে আসি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রামে-গঞ্জে, হাটে বাজারে গিয়ে দরিদ্র মানুষের সেবা করবো। আমাদের ক্ষমতার প্রয়োজন নেই। রাজনীতি করলে যে শুধু ক্ষমতায় যেতে হবে এই নীতিতে আমি বিশ্বাসী নই। কিন্তু যারা বিনা নির্বাচনে বিনা ভোটে জনগণের ভোট ডাকাতি করে রাতের অন্ধকারে ক্ষমতা দখল করেছে তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নাই। আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের যোগ্য নেতৃত্বে দেশের মানুষের হাতে বহুদলীয় গণতন্ত্র তুলে দিই।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, তারেক রহমান তৃণমূল রাজনীতির সূচনা করেছিলেন। তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে ছুটে গেছেন, জাতীয়তাবাদী দলকে তিনি সংগঠিত ও উজ্জীবিত করেছেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেল, বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি গোলাম সারোয়ার, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদির ভুইয়া জুয়েল, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মহানগর উত্তরের সভাপতি ফখরুল ইসলাম রবিন।ঢাকা দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনা করে সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন