মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

স্বাস্থ্য

শিশুদের হাঁপানি

ডা: মাও: লোকমান হেকিম | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:০৪ পিএম

অনেকে অবাক হন এতটুকু শিশুর হাঁপানি? কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এক বছর বয়সের শিশুরও হাঁপানি হয়। উন্নত বিশ্বের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, প্রায় শতকরা ১০-২০ ভাগ স্কুলবয়সী ছেলেমেয়েদের হাঁপানি রোগ আছে। আমাদের দেশের সঠিক তথ্য না থাকলেও শিশুদের পুরনো রোগব্যাধির মধ্যে হাঁপানি সবচেয়ে বেশি। আমাদের দেশের ৬০ লাখের মতো শিশু (শিশুদের ৭.৪%) হাঁপানি রোগে ভুগছে। যদিও শিশুদের হাঁপানি রোগ নির্ণয় হয় অনেক কম এবং আধুনিক চিকিৎসা নেয়ার হার আরো কম। এর সরল ব্যাখ্যা হচ্ছে, শিশুদের হাঁপানিকে সাধারণ ঠা-া, সর্দি-কাশি, ব্রংকাইটিস ও ব্রংকিওলাইটিস, হাঁপি-টানের দোষ, নিউমোনিয়া ইত্যাদি বলে অবজ্ঞা করা হয় এবং ধরে নেয়া হয় বড় হলে এটা সেরে যাবে। হ্যাঁ, বড় হলে শিশুদের হাঁপানি শতকরা ৬০-৮০ ভাগ সেরে যায় তা সত্য, কিন্তু তার জন্য তো শিশুকালে হাঁপানি বলে চিকিৎসা নিতে হবে। না হলে শিশুর বৃদ্ধি, লেখাপড়া, বুদ্ধিমত্তার ক্ষতিসহ ফুসফুসের আরো অনেক জটিলতা দেখা দিতে পারে। দুর্ভাগ্যবশত আমাদের শিশু হাঁপানি রোগীরা প্রায়ই সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পায় না। তাদের জন্য ও কেবল উপশমকারী ঔষধ নয়, প্রতিরোধকারী ওষুধও প্রযোজ্য এবং তা যথেষ্টই পাওয়া যায়। আবার অনেক ক্ষেত্রে চিকিৎসক সঠিক ব্যবস্থাপত্র দিলেও রোগীর অভিভাবকেরা ইনহেলার গ্রহণ করতে চান না। আবার শিশু-কিশোরদের হাঁপানি নির্ণয় করাও অনেক সময় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। তবে যেসব শিশুর বুকের ভেতর শাঁ-শাঁ শব্দ হয়, প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হবে এদের হাঁপানি রোগ আছে, যতক্ষণ অন্য কোনো কারণ প্রামাণিত না হয়। 

অ্যাজমার শিশুদের ৪০-৫০% এর বুকে বা গলায় এক বছর বয়সের মধ্যে শাঁ-শাঁ শব্দ শোনা যায় এবং শতকরা ৮০-৯০ ভাগ অ্যাজমা নির্ণয় হয় ছয় বছর বয়সের মধ্যে। শিশুদের হাঁপানির একটা বড় অংশ ১৪-১৫ বছর বয়সে উপসর্গমুক্ত হয়ে যায়। কিন্তু পরবর্তীকালে আবার শ্বাসকষ্ট বা কাশি দেখা দিতে পারে, যা নির্ভর করে পরিবেশের ওপর। তবে দীর্ঘমেয়াদি কাশির সাথে শ্বাসকষ্ট থাকলে বুকে শাঁ-শাঁ শব্দ থাক বা না থাক তা হাঁপানি রোগ হতে পারে। উপশমকারী ওষুধ প্রয়োগের আগে ও পরে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা পরীক্ষা করলেই রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। এর সাথে পরিবারের অ্যালার্জি বা হাঁপানির ইতিহাস থাকলে রোগ নির্ণয় আরো সহজ হয়। পাঁচ বছর বয়সের অধিক বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে পিক-ফ্লো মিটার ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে, শিশুদের এক আধটু হাঁচি-কাশি থাকেই এবং এর ভেতর দিয়েই এরা বড় হয়। যদিও এ ধারণা ঠিক নয় এবং এ জন্য বেশির ভাগ শিশুর হাঁপানির চিকিৎসা হয় না। অথচ সঠিকভাবে চিকিৎসা করা হলে শিশুদের হাঁপানির শতকরা ৬০-৮০ পর্যন্ত সম্পূর্ণ উপশম সম্ভব। শিশুদের হাঁপানি সাধারণত দুই বছর বয়সে শুরু হয় এবং বেশির ভাগ হাঁপানি রোগাক্রান্ত শিশু তাদের চার বছর বয়সের মধ্যেই হয়। তাদের চিকিৎসার জন্য বিশেষ ইনহেলার-জাতীয় ওষুধ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে সেই ইনহেলার ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা। শুধু প্রয়োজন রোগ সম্পর্কে অভিাবকদের সচেনতা, চিকিৎসার আগ্রহ ও সঠিক চিকিৎসা-তাহলেই শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটবে।

চিকিৎসক-কলামিস্ট

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন