শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জাতীয় সংবাদ

বিশ্ববিদ্যালয়ের অপ্রত্যাশিত ঘটনার দায় এড়াতে পারে না কর্তৃপক্ষ

ঢাবির ৫২তম সমাবর্তনে প্রেসিডেন্ট

নুর হোসেন ইমন | প্রকাশের সময় : ১০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য ভর্তি হয়, লাশ বা বহিষ্কার হয়ে বাড়ি ফেরার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব। তাই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এর দায় একেবারে এড়াতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চ্যান্সেলর আবদুল হামিদ। গতকাল সোমবার ঢাবির কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে দেশের সর্বোচ্চ এ বিদ্যাপীঠের ৫২তম সমাবর্তনে এসব কথা বলেন তিনি। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও গবেষকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন প্রেসিডেন্ট।
অনুষ্ঠানে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক এর রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. তাকাকি কাজিতা। তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি দেয়া হয়। এবারের সমাবর্তনে ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া এতে ৭৯ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ৯৮টি স্বর্ণপদক, ৫৭ জনকে পিএইচডি, ৬ জনকে ডিবিএ এবং ১৪ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হবে। অধিভুক্ত সাত কলেজের নিবন্ধনকৃত গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন। স¤প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা উল্লেখ করে প্রেসিডেন্ট বলেন, এসব ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমর্যাদা ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে। আমি আশা করব ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের মা-বাবা অনেক আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে তোমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করেন। এমন অনেক পরিবার আছেন যারা সর্বস্ব দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য ঢাবিসহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুন্ন হয়।
ডাকসু নেতাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড পছন্দ হয় না মন্তব্য করে প্রেসিডেন্ট বলেন, ডাকসু নির্বাচনের পর বিভিন্ন দাবি নিয়ে আমার কাছে এসেছে শিক্ষার্থীরা। এগুলো ডাকসু নেতাদের বলা উচিত ছিল। কিন্তু তারা এর মধ্যে নেই। তাদের ব্যাপারে এমন কথাগুলো শুনি যা আমার ভালো লাগে না। তাদের উচিত ছাত্রদের কল্যাণের কাজে প্রাধান্য দেয়া। এখন তাদের নিয়ে নানান কথা শোনা যাচ্ছে। এর বেশি কিছু বলে কাউকে হেয়প্রতিপন্ন করতে চাই না। ডাকসু নির্বাচনের নানান ত্রুটির কথা আমি শুনতে পেয়েছি। আশা করি, আগামীতে এ রকমের ভুলত্রুটি হবে না।
বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় অংকের টাকার বিনিময়ে সান্ধ্যকালীন কোর্স নিয়ে তীব্র সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। বিশ্বদ্যিালয়গুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। আবার কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে। সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের অনিয়ম তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট বলেন, আমি শুনেছি, তাদের একটা বিষয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। এতে তাদের ২২টা কোর্স। প্রতি কোর্সে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পায়, আর অর্ধেক বিভাগ পায়। বিভাগের টাকা কী হয় জানি না, কিন্তু শিক্ষকরা পাচ্ছে। আমি এটাও জানি, যাদের শুধু পিএইচডি আছে, শুধু তারাই ক্লাস নেয়। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য আহŸান জানান প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ।
প্রেসিডেন্ট বলেন, মেডিসিন বিদেশের জন্য একভাবে তৈরি করা হয়, ঢাকার জন্য একভাবে তৈরি করা হয়, গ্রামাঞ্চলের মানুষের জন্য আরেকভাবে তৈরি করা হয় ছাত্রসমাজকে বিষয়টি রুখে দাঁড়াতে হবে। ঢাবি চ্যান্সেলর বলেন, ঢাবি আর ১০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো কোনো শিক্ষালয় নয়। বাঙালির ইতিহাসের সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগ। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়ের ইতিহাসে ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬ এর ছয় দফা, ’৬৯ এর গণঅভ্যূত্থান, সর্বোপরি ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বিশেষ উল্লেখযাগ্য। প্রতিটি আন্দোলনের সূতিকাগার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। প্রেসিডেন্ট যেসব শিক্ষার্থী স্নাতকে ভূষিত হলেন এবং যারা গবেষকের স্বীকৃতি পেলেন তাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
ঢাবি ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেছেন, আমাদের সন্তানদের আমরা সেই শিক্ষা দানের চেষ্টা করি, যে শিক্ষা তাদের মধ্যে যুক্তিবাদিতা, বিবেক ও মানবতাবোধকে জাগ্রত করবে। ফলে তারা ভালো চিন্তা ও কাক্সিক্ষত মানবোচিত কাজের সঙ্গে যুক্ত হবে। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, মানুষ অন্ন বস্ত্র-বাসস্থানসহ তথাকথিত উন্নত জীবনের বস্তুগত সামগ্রী অর্জনের নিমিত্তে অধিক মুনাফা লাভের প্রয়োজনীয় বিদ্যালাভের পেছনে যতটা ছুটছে, মানবিকতা উন্নয়নমূলক শিক্ষা বিষয়ে ততটা নয়। আমাদের সামাজিক জীবনের যে অস্থিরতা, তরুণ সমাজের একাংশের যে বিপদগামিতার কথা আজ বলা হচ্ছে, এর অন্যতম কারণ এটি। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন