সিলেটের ওসমানীনগরে অজ্ঞাত তরুণী হত্যার ঘটনায় জড়িত তার স্বামী মুজাম্মিল (২৪) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সে উপজেলার দক্ষিণ কলারাই গ্রামের জিলু মিয়ার ছেলে। তরুণীর নাম হচ্ছে শাহনাজ বেগম (২০)। তার বাড়ি বরিশাল জেলায়। গত মঙ্গলবার মুজাম্মিলকে গ্রেফতারের পর পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যার দায় স্বীকার করে মুজাম্মিল। ওই রাতে তাকে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়ারল আদালতে হাজির করা হলে বিচারকের সামনেও ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। গত ২ ডিসেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ৮ টার দিকে উপজেলার বুরঙ্গা ইউপির জুগিরঘর বিল থেকে মস্তকবহীন এক তরুণীর বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার এবং এক সপ্তাহ পর (০৯ ডিসেম্বর) সোমবার দুপুরে তার বিচ্ছিন্ন মস্তক উদ্ধার করে পুলিশ। বিরুদ্ধে ওসমানীনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে নিহত শাহনাজের পরিবারের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। তাই পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত শাহনাজের পরিবারের খোঁজ দিতে আহ্বান করা হয়েছে।
জানা যায়, এ ঘটনার বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিলেট জেলার পুলিশ সুপার মোহম্মদ ফরিদ উদ্দিন পিপিএম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ওসমানীনগর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সিলেটের মো. লুৎফর রহমানের সমন্বয়ে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা প্রদান করেন।
ওসমানীনগর থানা পুলিশের প্রচেষ্টায় উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে গত ১৬ ডিসেম্বর রাত ১১ টা ৫৫ মিনিটে ওসমানীনগরের বুরুঙ্গা এলাকা হতে হত্যাকান্ডে জড়িত ওসমানীনগরের দক্ষিণ কলারাই (গোয়ালাবাজার) গ্রামের জিলু মিয়ার ছেলে মো. মোজাম্মেল মিয়াকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে মোজাম্মেল অজ্ঞাতনামা নারীকে তার স্ত্রী শাহনাজ হিসেবে শনাক্তপূর্বক হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার লোমহর্ষক বর্ণনা প্রদান করে।
ঘাতক মোজাম্মেল জানায়, গত ৫/৬ বছর যাবৎ রাজ মিস্ত্রির কাজ করতেন। আর শাহনাজ খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করায় তাকে পরিবার হতে বের করে দেয়। শাহনাজের আচার ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে এবং পরকালের কথা ভেবে মোজাম্মেলর মা ও আত্মীয় স্বজন মোজাম্মেল মিয়াকে শাহনাজকে বিয়ে করতে বললে সে রাজি হয়ে যায়। তাদের বিয়ের পর কিছুদিন শান্তিতে সংসার চলছিল। বিয়ের কিছুদিন পর শাহনাজের আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করেন। শাহনাজের পরকীয়ার বিষয়টি মোজাম্মেল জানতে পারেন।
গত ৩০ নভেম্বর দুপুর ১ টায় তারা দুজনে সিএনজি যোগে চন্ডীপুল হতে গোয়ালাবাজার এবং সেখান থেকে উনিশমাইল যেতে থাকেন। দুজনে উনিশমাইলের একটু আগে শাটকিলা এলাকায় নেমে ধানী জমির মধ্য দিয়ে উনিশমাইলে মোজাম্মেলর বড় খালা ফুলমতির বাসায় যাওয়ার জন্য রওয়ানা দেন।
দুইজন অপেক্ষা করার সময় অন্ধকারে বন্দে মোজাম্মেলের স্ত্রী শাহনাজ তাকে দৈহিক মিলন করতে বলে। এসময় সে রাজি না হলে মোজাম্মেল তার স্ত্রী শাহনাজকে ধমক দেন। তখন শাহনাজ মোজাম্মেলকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় গালাগালি করেন। শাহনাজ তার স্বামী মোজাম্মেলকে বলেন যে, বাসায় গেলে মোহনকে বিয়ে করবেন এবং মোজাম্মেলকে তার স্ত্রী শাহনাজ আম্মা ডাকাতে বলেন। এতে মোজাম্মেলের রক্ত উঠে যায়। রাত অনুমান দেড় টায় বন্দের আইল দিয়ে শাহনাজ মোজাম্মেলর সামনে হাঁটার সময় মোজাম্মেল তার স্ত্রী শাহনাজের গলায় প্যাঁচানো ওড়না জোর করে পিছন দিকে থেকে টানতে থাকেন। শাহনাজের গলা থেকে গোঙ্গানির শব্দ বের হয়। মোজাম্মেল তখন পুনরায় ওড়নাকে আরও একবার প্যাঁচ দিয়ে শাহনাজের গলায় গিট দিয়ে পিছন দিক থেকে শ্বাসরোধ করার জন্য জোরে টানতে থাকে। কিছুক্ষণ পর শাহনাজের হাত, পা ছুঁড়ে নিস্তেজ হয়ে যান। মোজাম্মেল দেখতে পান তার স্ত্রী শাহনাজ মারা গেছেন। মোজাম্মেল তার শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে সন্ধ্যার দেহ থেকে মাথা বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা করেন। কিছুক্ষণ পর শাহনাজ এর মাথাটি আলাদা হয়ে যায়। মোজাম্মেল শাহনাজের মাথাটি নিয়ে নাক ও দুটি কান কেটে পৃথক করে তা অনেক দুরে ছুঁড়ে মারেন। শাহনাজের মাথাটি অনুমান দশ হাত দূরে কাদার মধ্যে গর্ত করে তাতে চাপা দিয়ে উপরে মাটি দিয়ে দেন। এরপর মোজাম্মেল তার স্ত্রী শাহনাজ এর দুটি স্তন কেটে তা দূরে ফেলেন এবং উরুর মধ্যে চাকু দিয়ে অনেকবার কোপ দেন, চাকু দিয়ে শাহনাজ এর পেটে অনেকবার কোপ ও ঘাই দেন।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার ওসি (তদন্ত) এসএম মাইন উদ্দিন বলেন, মোজাম্মেলকে আদালতে সোপর্দ করলে মোজাম্মেল আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন