মাঝে মাঝেই উচ্ছেদ নাটক চললেও বগুড়া রেলের ২শ’ ৮৯ একর জমি জামায়াত, আওয়ামী লীগের কিছু নেতা ও প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের দখলেই রয়ে গেছে। বারংবার মহা শোরগোল তুলে পুর্বে ফতেহ আলী বাজার, রাজাবাজার থেকে পশ্চিমে ৩ মাথা রেলগেট এলাকার শতাধিক অস্থায়ী দোকান এবং হকার্স মার্কেট উচ্ছেদ করা হলেও কয়েকজন জামাত নেতার সমন্বয়ে গঠিত সিন্ডিকেটের তৈরি করা জামায়াত পল্লীখ্যাত জামিল নগর গোশালা এলাকার উচ্ছেদ কার্যক্রম থেমে আছে প্রায় ২ যুগ ধরে। জামায়াত পল্লীর অবৈধ দখলে জমির পরিমান ১৩ একর ! রেলের বগুড়া ও লালমনিরহাট ভূসম্পত্তি বিভাগ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ি বগুড়া রেলের মোট জমির পরিমাণ ১ হাজার ১শ’ ৩৬ একর। এর মধ্যে রেল বিভাগের অধীনে আছে ৪শ’ ৩৫ একর । কৃষি ও জলাশয় হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লীজ দেয়া হয়েছে ৪শ’ ১২ একর জমি। বাদ বাকি রয়েছে প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের দখলে।
বগুড়া রেলের অবৈধ দখলদারি সম্পর্কে বগুড়া ভূ-সম্পত্তি বিভাগে যোগাযোগ করা হলে কানুনগো গোলাম নবি এবং সহকারি আব্দুর রাজ্জাক জানান, রেলের অবৈধ দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান চলমান রয়েছে । বর্তমান সরকারের নীতি অনুযায়ি অবৈধ দখলদাররা প্রভাবশালী হলেও তারা রেহাই পাবেন না। বগুড়া সদরের সবচেয়ে দামি এলাকার মধ্যে কোথায় কোথায় অবৈধ দখল আছে জানতে চাইলে তারা ফাইল দেখে জানান, বগুড়া রেল ষ্টেশনের পশ্চিম প্রান্তে জামিল নগর এলাকায় সবচেয়ে বেশি ১৩ একর জমি বেদখল হয়ে আছে। উচ্ছেদ প্রক্রিয়া ঠেকাতে জামায়াত নেতা এ্যাড. জহুরুল ইসলাম ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন হাইকোর্টে একটি মামলা ঠুকে দিয়েছেন। ফলে ওখানে উচ্ছেদ বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া চাষী বাজার এলাকায় প্রায় ৩ একর, বগুড়া রেল ষ্টেশনের উত্তর পশ্চিম পাশে হাড্ডিপট্টি বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে নিশিন্দারা আর্মড ব্যাটেলিয়ন পর্যন্ত এলাকায় ২ দশমিক ৯২ একর, চক বৃন্দাবন এলাকায় ১৪ দশমিক ৩০ একর, সুত্রাপুর এলাকায় দেড় একর জমি অবৈধ দখলে রয়েছে। অবৈধ দখল উচ্ছেদে রেল কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে কানুনগো গোলাম নবী বলেন, থানায় ও কোর্টে মামলা চলমান রয়েছে । রেলের একমাত্র প্যানেল আইনজীবী চিত্তরঞ্জন বসাক বলেছেন, বগুড়ার আদালতে তিনি ৫টি মামলা পরিচালনা করছেন। তিনি বলেন, অবৈধ দখলদাররা আদালতে এসে শুধু সময় প্রার্থনা করেন আর আদালত তা’ মঞ্জুর করেন। এখানে আমার কি করার আছে ? তিনি আরও বলেন, রেলের আইনজীবী হিসেবে কেস প্রতি আমি মাত্র ৩২ টাকা ফি পাই। এতে কি কাজের প্রতি একাগ্রতা আসে ?
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অবৈধ দখলদাররা তাদের দখলী জমিতে বাড়িঘর দোকানপাট নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে, পজেশনও বিক্রি করেছে। জাহেদ মেটাল ইন্ডাস্ট্রিজ, রানার সিটি হাউজিং, এবিসি টাইলসসহ বেশ ক’টি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন প্রভাবশালীর দখলে রয়েছে বগুড়া রেলের বিপুল ভূ সম্পত্তি। বগুড়া সদরের জামিল নগরের ১৩ একর জমিতে যে হাউজিং গড়ে উঠেছে সেখানে বসবাসকারি প্রায় সবাই জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। এখানে বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাস রয়েছে সেগুলো পরিচালনা করে ইসলামী ছাত্র শিবির নেতারা । সে কারনে এই এলাকাটি পুলিশ, প্রশাসন এবং মানুষের কাছে জামায়াত পল্লী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানকার মূল দখলদাররাও সবাই প্রাক্তন ছাত্র শিবির ও বর্তমানে জামায়াতের রাজনীতির সাথে জড়িত। দখলদারদের কাছ থেকে দলীলমূলে যারা এ এলাকায় জমি কিনে বাড়িঘর, মাদ্রাসা, স্কুল, ছাত্রাবাস, দোকানপাট নির্মাণ করেছেন তাদের সবারই জমির খারিজ আটকে গেছে বলে এলাকার তহশীল অফিস থেকে তথ্য পাওয়া গেছে ।
জামায়াত নেতা ও সাবেক পৌর কাউন্সিলর এরশাদ হোসেন বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন বিধায় তার পরিবারের কেউ এ সংক্রান্ত ব্যাপারে মুখ খুলতে রাজি হননি। অন্যদিকে অপর জামায়াত নেতা এ্যাড. জহুরুলের বিরুদ্ধে তাঁত শিল্প মালিক সমিতির কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের মামলা থাকায় সব সময় মিডিয়া থেকে দূরে থাকেন বিধায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জামায়াত পল্লী গড়ে উঠেছিল ৪ দলীয় জোট সরকারের শাসনামলে । ওয়ান ইলেভেনের ২ বছরে জামায়াত পল্লীর বিকাশ ও দখল পাকাপোক্ত হয়। ওয়ান ইলেভেন পরবর্তি সময়ে আওয়ামী লীগের শাসন শুরুর পর জামায়াত পল্লীর ওই দখলদারদের সহযোগিতা ও পরামর্শে বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও প্রাক্তন ছাত্র লীগ নেতা বগুড়া রেল স্টেশনের আশপাশে বিপুল পরিমানে জায়গার দখল নিয়ে মামলার জটে ফেলে বেকায়দায় রেখেছেন রেল কর্তৃপক্ষকে। ফলে বড় দখলদাররা সব সময় বেঁচে যাচ্ছে উচ্ছেদ অভিযান থেকে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন