বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সোনালি আসর

টইটম্বুর বর্ষায়

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

বা তে ন বা হা র
ফুলকি ঝরা প্রখর রৌদ্রে পাকা আমের মৌ মৌ গন্ধে যখন বাগ বন আর বাড়ির আঙিনা মধুময়। আনন্দানুভূতিতে ভরে ওঠে তখন দক্ষিণা বায়ের ডুলিতে চড়ে বর্ষার হওয়াই খবর ভাসে আকাশে বাতাসে। কালো মেঘের ঘনঘটায় বিজলি চমকায়। ঝিল্লিমুখর সন্ধ্যেবেলা কালো মেঘ কেঁদে কেঁদে আকাশ ভেজায়। ভেজা আকাশ থেকে কখনো টুপটাপ কখনো বা মুষলধারে বৃষ্টি ঝরে। বৃষ্টির শীতল জলে মাঠঘাট, নদীনালা বিলঝিল ভরে ওঠে। রাতের ব্যবধানে পাটের কচি সবুজ চারা আর আউসের ক্ষেত জলে ডুবে যায়। সবুজ তেপান্তরের বুকে ঘোলা জলের ঢেউ জাগে। রাতের কদম কেয়ার ডালে আশ্চর্য বিস্ময়ে দোল খায় সদ্য ফোটা কদম কেয়ার রূপসী মেয়েরা। কবি মনে দোলা জাগে। ভাবুকেরা ভাবের ভেলায় চড়ে ঘুরে বেড়ায় মন থেকে মনে, দিগন্তের সীমারেখা ছাড়িয়ে। নতুন এক আনন্দানুভূতি জাগে, শিশু-কিশোর-যুবক এবং বহুদর্শী মনের গভীরে।
টইটম্বুর বর্ষায় গাঁয়ের অধিকাংশ মাটির পথ জলের নিচে চলে যায়। কাদাজলে পথঘাট পিচ্ছিল হয়। পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডিঙি নাও আর দেশী নৌকার দাম বাড়তে থাকে। বেঁদে বহরে জাগে নতুন স্বপ্ন আর কর্ম প্রেরণা। বেঁদেরা বাড়ি বাড়ি নৌকা ভিড়িয়ে সাপের খেলা দেখায় আর বেঁদেনীরা চুড়ি, চুলের ফিতে, ক্লিপ ও অন্যান্য সামগ্রী বিক্রয় করে বাড়তি আয়ের সন্ধানে ব্যাপৃত হয়।
এ সময় দিনের সূর্য, রাতের তারা মেঘের আড়ালে পালিয়ে বেড়ায়। রাতের বাতাসে ভাসে ক্রন্দসিনীর করুণ কণ্ঠস্বর। ঘরের চার দেয়ালে চোখের দৃষ্টি থেমে থাকে। মন ছুটে বেড়ায় দূরের অজানা কোথাও। চোখের দৃষ্টি কানের উপর নির্ভরশীল হয়। তাই চোখ থেকে কানই প্রকৃতির রূপরস ধ্বনি আহরণে বেশি ব্যস্ত হয়। আর মুহূর্তের মধ্যেই কারা যেন কথা আর গানে মনের গভীরে ছবি এঁকে যায়। রঙ ধনুর সাতটি রঙ নতুন করে স্বপ্নের রঙিন সিঁড়ি পথ আঁকে মনের পরতে। যে সিঁড়ি পথে হেঁটে হেঁটে ভাবুক কবিরা নশ্বর থেকে অবিনশ্বর জগতে উল্কার মত ছুটে বেড়ায় নতুন কিছু আবিষ্কারের আশায়।
এ দিনে অতীত, বর্তমান আর ভবিষ্যতের সাঁকো পথে হেঁটে কখন বিকেল গিয়ে সন্ধ্যে- সন্ধ্যে মিলিয়ে নিশীথ আর নিশীথ গিয়ে রৌদ্রোজ্জ্বল ভোর আসে তা আঁচ করা কঠিন। কারণ বৃষ্টি শেষে বিজলীর আলোয় নীলাম্বরী পরা সিক্ত প্রকৃতিকে দেখে ভাবুক কবিরা সরস ভাবনার অতলে ডুবে থাকে। যে ভাবনার সরস ছবি কবি মনের নিখুঁত আল্পনাকেও হার মানায়। ভালোবাসার রঙে রঞ্জিত হয় প্রকৃতি এবং এর রূপ রস গন্ধ। যার তুলনা প্রকৃতি, প্রকৃতি এবং প্রকৃতি।
এ প্রকৃতির শাশ্বত আহ্বানে, রাতের দক্ষিণা বাতাসে তরুণদের গলায় জড়ানো গুল্মলতার হাত-পা নেড়ে কি জানি কি বলতে বলতে অপার আনন্দে মেতে উঠে। গুল্মলতার দোল দোলানিতে জড় অজড় হয়। আর অজড়েরা শীস দেয় বাতাসের কানে। বিমোহিত উল্লাসে নাচে বর্ষণমুখর দিনের ভেজা তরুলতা, ফুল-ফল, উচ্ছ্বল হাস্যরসে।
এ সময় মনের গভীরে এমন সব ভাবের উৎপত্তি হয় যা কেবল উপলব্ধি করা যায় কিন্তু প্রকাশ করা যায় না। কারণ ভাব প্রকাশের যোগ্য ভাষা হচ্ছে গদ্যময় অভিব্যক্তি আর অপ্রকাশ্য ভাব ও ভাষার ইঙ্গিত হলো কবিতা। তাই বর্ষার দিনে কবিতা লেখা যত সোজা প্রবন্ধ বা গল্প রচনা ততটাই কঠিন। কারণ বর্ষার স্বরূপ অঙ্কিত থাকে সৃষ্টি সুখের উল্লাস আর নান্দনিক উৎকর্ষতায়। যা মানব মনকে নতুন আলোকিত পথের সন্ধান দেয়। যে পথে হেঁটে ভাবুক কবিরা ভাবনার নতুন উচ্চতাকে স্পর্শ করতে সক্ষম হয়। যে উচ্চতা আর্থিক শৃঙ্খল মুক্ত। অথচ ভাব, ভাষা এবং সামাজিক আলোর লাইট পোস্ট হিসেবে যুগ থেকে যুগান্তরে, মন থেকে মনান্তরে আলোর বিচ্ছুরণ ঘটায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন