বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সোনালি আসর

রোজার গল্প - দিপুর ভালো কাজ

প্রকাশের সময় : ২৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ফ জ লে রা ব্বী দ্বী ন

দিপুর বয়স ছয়। বয়সটা কম হলে কী হবে বুদ্ধিতে কিন্তু ভীষণ পাকা। দাদু বলে, ‘ওর আর আমার মধ্যে কোনো তফাৎ নেই। ওর বুদ্ধিটা আমার মতো বুড়ো বয়সের অভিজ্ঞতার সমান। তাছাড়া আরেকটা দিকে প্রচ- মিল রয়েছে।’
এ শুনে মা আর বসে থাকতে পারলেন না। সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন জুড়ে দিলেন। সেই মিলটা আবার কি? জানাটা খুব জরুরি না হলেও ইচ্ছাটা যে আর মানছে না।
দাদু মুখটা ঘুরিয়ে দিপুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মিল হচ্ছে একটা দাঁতের। দিপুর আর আমার সামনের একটা করে দাঁত চিলে উড়াল দিয়ে এসে নিয়ে গেছে।’
দাদুর কথা শুনে বাড়ির সবাই হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে শুরু করল। দিপু অবশ্য একটু লজ্জা পেয়েছিল। কেননা এত ছোট বয়সেই তার একটা দাঁত পড়ে গেছে। যদিও এখনও তার বয়স সাতে পড়েনি।
আজকাল দিনটা বেশ লম্বা। চারদিকে গরমের প্রচ- উত্তাপ। কোথাও যেন কোনো শান্তির দেখা নেই। চারদিকে বাজার হাটে বিশাল মানুষের সমাগম। ভীষণ হৈচৈও বটে। এসব দৃশ্য দেখে অনায়াসেই যে কেউ বলে ফেলতে পারবে, রমজান আমাদের নিকটে। রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের তিনটি উপাদান নিয়ে আমাদের মাঝে হাজির হচ্ছে।
তপুর মনে খুশির যেন শেষ নেই। এই প্রথমবার সে রোজা রাখবে। অনেক কষ্ট করে বাবাকে রাজি করিয়েছে। গতবার অবশ্য বাবার জন্যই রোজাগুলো তার রাখা হয়নি কিন্তু তারপরও তার মনে কোনো দুঃখ নেই। কেননা তখন সে অনেক ছোট ছিল।
‘এই বছরেই বা আর কত বড় হয়েছে!’ মায়ের কথায় মনটা ভেঙে যায় তপুর। মনের কষ্টে সোজা বাবার কাছে নালিশ করতে যায়। বাবা তাকে সান্ত¦না দেয় আর বলে, ‘মা সেটা এমনিই বলেছে’।
সন্ধ্যা প্রায় লেগে গেছে। আকাশে সুন্দর বাঁকা চাঁদ হাসছে। তপু তাই দেখে বাবাকে জোর গলায় ডাক দেয়। বাবা জলদি ঘর থেকে বেরিয়ে এসে তপুকে বলে, ‘ওটা হচ্ছে রমজানের চাঁদ। কাল থেকে আমাদের সবাইকে রোজা রাখতে হবে।’
প্রথম রোজা রাখার অভিজ্ঞতা অর্জন করে তপু। ইফতার খেয়ে শরীরটা তার ক্লান্তিতে ভরে ওঠে। এত ছোট বয়সে রোজা রেখেছে শুনে অনেকেই মাথায় হাত পর্যন্ত তুলেছে। সবার বিস্ময়তাকে কাটিয়ে দিয়ে তপু আবার পরদিন রোজা রাখে। সারা দিনে শরীরটা তার ক্লান্তিতে ভরে যায়। কেমন যেন অসুস্থ অনুভব করতে থাকে। ডাক্তারের সাথে গোপনে আলাপ করে তার বাবা জানতে পারে দিপুর রোজা রাখা ঠিক হচ্ছে না। কেননা এখনও সে অনেক ছোট। দিপুকে ডাক্তারের সাথে আলাপ করিয়ে দেওয়া হয়। ডাক্তার তাকে বলেছে এক দিনে তিনটা করে রোজা রাখতে। কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে যায় দিপু। তাহলে তো এক মাসে নব্বইটা রোজা হয়ে যায়! কিন্তু ডাক্তার যেহেতু বলেছে সেই কথা কি আর ফেলে দেওয়া যায়? তাই সে এখন দিনে তিনটা করেই রোজা রাখা শুরু করে দিয়েছে।
রমজানের প্রায় মাঝামাঝি সময়। তপু একদিন সন্ধ্যাবেলা হঠাৎ উধাও। সারা বাড়ি তন্ম তন্ম করে খোঁজা শেষ। কিন্তু কোথাও তপুর দেখা নেই। বাবার মাথা দিয়ে চিন্তায় আগুনের ধোঁয়া বের হচ্ছে। কোথায় গেল ছেলেটা? বাবা আর কোনো কিছু না ভাবতে পেরে সোজা ঘরের বাইরে খুঁজতে বের হয়ে গেল। চারদিকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একবার বটগাছের তলায় চোখ চলে গেল। তখন ঠিক ইফতারের সময়। অনেকগুলো ছোট ছোট ছেলেমেয়ের মাঝে দিপুকে দেখে হঠাৎ চমকে উঠল বাবা। দিপু ওখানে কী করছে? আরেকটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখল দিপুর সামনে সবাই গরিব নিঃস্ব ছোট ছোট ছেলেমেয়ে। এবং সবার মাঝেই ইফতারের খাবার বিলিয়ে দিচ্ছে দিপু। কিন্তু সে এতসব করছে কীভাবে? টাকাই বা পেল কোথায়?
বাবার প্রশ্নের উত্তর আর জানতে ইচ্ছা করল না। হয়তো দিপু তার টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে এসব করেছে আর না হয় মাটির ব্যাংকটা ভেঙে ফেলেছে। কথায় তো আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। দিপু সেই ইচ্ছাশক্তির বলেই মহৎ একটা কাজ নিজের হাতে করে চলেছে। গর্বে বুকটা ভরে উঠল বাবার। চোখ দিয়ে পানিও চলে এলো। মনের অজান্তেই দিপুর জন্য আল্লাহর কাছে হাত দুটি বাড়িয়ে দিল...।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (2)
মাহ্দী খান অয়ন ২৭ জুন, ২০১৬, ৪:২৬ পিএম says : 0
আসসালামু আলাইকুম। "দৈনিক ইনকিলাব"- এ লেখা পাঠাবোকিভাবে?বিস্তারিত জানালে উপকৃত হতাম।
Total Reply(1)
Admin ২৭ জুন, ২০১৬, ৪:৪৪ পিএম says : 4
আমাদের প্রিন্ট পত্রিকায় মেইল নাম্বার (sonaliasor1986@gmail.com) দেয়া আছে । ওখানে পাঠান
Shahriar Kabir ২৬ আগস্ট, ২০২১, ১২:১১ এএম says : 0
Good Story .Highly inspired.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন