নেত্রকোনায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হলেও ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষকদের মাঝে চরম হতাশা দেখা দিয়েছে।
কৃষকরা যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পায় তার জন্য সরকার ২০ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করার ঘোষনা প্রদান করেন। কিন্তু দুঃখ জনক হলেও সত্য নির্ধারিত সময়ের এক মাস চলে গেলেও নেত্রকোনায় ১০টি উপজেলার মধ্যে ছয়টিতে এখনো সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়নি। মঙ্গলবার পর্যন্ত কৃষকদের তালিকাই চূড়ান্ত করতে পারেনি সংশি¬ষ্ট উপজেলাগুলোর কৃষি বিভাগ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি আমন মওসুমে জেলার ১০টি উপজেলার ১৩টি খাদ্য গুদামে ১৩ হাজার ৫২ মেট্রিক টন আমন ধান সংগ্রহের কথা রয়েছে। এ ছাড়াও ১১ হাজার ৫ শত ৮৯ মেট্রিক টন সিদ্ধ চাল ও ২ শত ৩১ মেট্রিক টন আতপ চাল সংগ্রহ করার কথা। গত ২০ নভেম্বর থেকে ধান সংগ্রহের অভিযান শুরুর কথা থাকলেও মঙ্গলবার পর্যন্ত পূর্বধলা উপজেলায় মাত্র ৪ মেট্রিক টন ও কেন্দুয়া উপজেলায় ১ মেট্রিক টন ধান ক্রয় করা হয়েছে। জেলার পূর্বধলা, কেন্দুয়া, বারহাট্টা ও মোহনগঞ্জ উপজেলায় ধান সংগ্রহ অভিযান আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হলেও এখনও বেশীরভাগ উপজেলায় কৃষকের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় কৃষকরা সরাসরি খাদ্য গুদামে ধান বিক্রি করতে পারছে না। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক কৃষকরা। তারা স্থানীয় হাট-বাজারে ও মহাজনদের কাছে কম মূল্যে ধান বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, এবার ব্রি-৩২ ধান ৪৮০/৫০০ টাকায়, ব্রি-৪৯ ধান ৫৬০/৫৮০টাকায় এবং বিনা-৭ ধান ৫৮০/৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
দুর্গাপুর উপজেলার কাপাসাটিয়া গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া বলেন, এখন কৃষকের কাছে ধান আছে। কিন্তু আর কয়েক দিন পর এই ধান তাদের হাতে থাকবে না। ধান চলে যাবে মধ্যস্বত্বভোগী ফড়িয়াদের হাতে। কারণ প্রান্তিক কৃষকেরা মহাজনসহ বিভিন্নভাবে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। তারা মৌসুমের শুরুতেই ঋণ পরিশোধের জন্য ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন। তাই তারা এখন কম দামেই তাদের হাতে থাকা ধান বিক্রি করে দিচ্ছে।’
কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ী গ্রামের কৃষক মতি মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে মাথার ঘাঁম পায়ে ফেলে জমি চাষাবাদ করে ধান ফলাই, কিন্তু ধানের ন্যায্য মূল্য পাই না। এখন সরকার লটারীতে কৃষকের ভাগ্য নির্ধারণ করছেন। একটি গ্রামে দুইশো জন কৃষক থাকলেও লটারিতে মাত্র পাঁচ থেকে দশ জন কৃষক সরকারী নির্ধারিত মূল্যে ধান বিক্রি করতে পারে। বাকিরা তাহলে কি করবে? কৃষি কাজ করে কোনো লাভ নেই।
দুর্গাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবু বক্কর সিদ্দিক, মদন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইলিয়াস আহম্মেদ ও সদর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জয়নাল আবেদিন জানান, ‘কৃষি বিভাগ লটারির মাধ্যমে যে দিন চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুুত করে খাদ্য বিভাগকে হস্তান্তর করবে সে দিন বা তার পর দিন থেকে কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় সম্ভব হবে।’
এ ব্যাপারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ হাবিবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি সংশি¬ষ্ট উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলেন, কৃষকদের তালিকা প্রায় শেষের দিকে। দ্রুতই সেই তালিকা খাদ্য বিভাগকে হস্তান্তর করা হবে। চলতি মওসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ১ শত ৪৯ হেক্টর জমি। শেষ পর্যন্ত আবাদ হয়েছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ৬ শত ২৫ হেক্টর। জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় মোট ৩ লক্ষ ১৯ হাজার ৭৯ মেট্রিক টন চাল উৎপাদিত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুরাইয়া খাতুনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, কৃষকের তালিকা চূড়ান্ত না হওয়ায় বেশ কয়েকটি উপজেলায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যায়নি। জেলায় এবার প্রায় ১২ হাজারের মতো কৃষকের কাছ থেকে সরকারিভাবে ধান ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।’
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন