ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংবাদদাতা
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে দালাল ও সিন্ডিকেটের কবলে কৃষকের ধান সংগ্রহে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরাই এখন কৃষক। ২০১৪ সালের কৃষি উপকরণ বিতরণের কার্ডেই চলছে কৃষক সিলেকশন। এ তথ্য স্থানীয় কৃষি অফিসের। কৃষক-শূন্য গুদামে সারাদিন আনাগোনা চোখে পড়ে দালালদের। অভিযান শুরুর আগেই গোপনে গুদামে কয়েক টন ধান উঠানোর বিষয়টি চাউর হচ্ছে। ফলে এ অভিযানে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয় কৃষকরা। কিছু অনিয়মের কথা স্বীকারও করেছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা। ভেস্তে যেতে বসেছে সরকারের মহৎ উদ্যোগ। খাদ্য গুদাম সূত্রে জানা যায়, এবার ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ২ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন। উদ্বোধন করা হয়েছে ১৯ মে। চলবে আগামি ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। এ ধান দিবে শুধু স্থানীয় প্রকৃত কৃষকরা। সমগ্র উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৮৪ জন কৃষকের তালিকাও করা হয়েছে। তালিকা হাতে নিয়ে দেখা যায় রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, ফসলি জমি না থাকলেও স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ও কতিপয় চাতাল ব্যবসায়ী সেজে বসেছেন কৃষক। প্রকৃত কৃষকের কোন কদর নেই গুদামে। নিয়মের বেড়াজালে কৃষকদের নাভিশ^াস উঠছে। এভাবেই চলছে সরাইলের ধান সংগ্রহ অভিযান। স্থানীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে তৈরি ‘কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড’ধারী কৃষকদের তালিকা থেকে ১৯শ’ কৃষকের নামের তালিকা প্রেরণ করা হয় খাদ্য গুদামে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে গুদাম সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, কৃষকদের কার্ড সংগ্রহ করে কিছু চাতাল ব্যবসায়ি কৌশলে গুদামে ধান দিচ্ছেন। আর মাঝখানে রয়েছে প্রভাবশালী কিছু দালাল। যাদের মাঠে কোন জমি নেই। নেই ধান উৎপাদনের কোন উৎস। তারাই কোন রকমে কৌশলে একটি কৃষিকার্ড সংগ্রহ করে গুদামে প্রবেশ করেছেন। পরে প্রত্যেক এলাকায় কার্ড সংগ্রহে নেমে পড়ে দালাল চক্র। প্রত্যেকে ৫০ থেকে ২শ’ পর্যন্ত কার্ড হাতিয়ে নেয়। নাম শুধু কৃষকের। কামাই করছে দালাল চক্র। ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনেও চলছে নানা কারিশমা। সিন্ডিকেটের সদস্যরা গ্রামের কৃষকের কাছ থেকে ৫৫০ টাকা মণ দরে ধান ক্রয় করছে। আর গুদামে বিক্রি করছে ৯২০ টাকায়। এ অনিয়মকে জায়েজ করতে টন প্রতি কর্মকর্তাকে দেয়া হচ্ছে ২ হাজার টাকা। তার টার্গেট ৪২ লাখ ১০ হাজার টাকা। আর দালালদের কামাইও সমপরিমাণ। কেজি প্রতি ২৩ টাকার মধ্যে কৃষকের হিসাবে জমা হচ্ছে ১৯ টাকা। সেটাও ঠিক মত পাচ্ছে না তারা। ডান-বাম হাতের স্বাক্ষর চলছে গুদামের ব্যাংকে। করাতকান্দি গ্রামের কৃষক মুছা মিয়া বলেন, ৩শ’ মণের উপরে ধান পেয়েছি। আমরা গুদামের কাছেও যেতে পারি না। সরকার নিচ্ছে ৯২০ টাকা মণ। আমরা আঃ বাছির নামের দালালকে মণ প্রতি ১০ টাকা দিয়ে মাত্র ৫শ’ টাকা দরে বিক্রি করছি। কৃষি অফিসের কোন লোক আমাদের কাছে আসে না। বড়বুল্লা গ্রামের কৃষক কালাম মিয়া বলেন, ১শ’ মণ ধান পেয়েছি। কৃষি কার্ডের খবর আমাদের কেউ দেয়নি। অনেকে এসে কার্ড জমা নিয়েছে। খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহাদাত হোসেন ভূইয়া অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তালিকা তো আমরা করিনি। আত্মীয়-স্বজনের কার্ড জমা করে অনেক সময় পরিবার প্রধান ধান নিয়ে আসেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাধন কুমার গুহ মজুমদার বলেন, কিছু অনিয়ম হতে পারে। কৃষকদের আরো সচেতন হতে হবে। আস্তে আস্তে স্বচ্ছতা আসবে। উপজেলা ক্রয় কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মাইনুল আবেদীন বলেন, এখনই খোঁজ-খবর নিয়ে দেখছি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন