শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অভ্যন্তরীণ

ধান সংগ্রহ অভিযান শ্রীপুরে কৃষকদের লাভ মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে

প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শ্রীপুর (গাজীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা

গাজীপুরের শ্রীপুরে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযানে কৃষকদের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত করে ধান ক্রয়ের অভিযোগ উঠেছে। মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের পকেটে কৃষকদের লাভের টাকা। প্রকৃত ৩০ জন কৃষকও ন্যায্য দামে ধান বিক্রি করতে না পারলেও অর্ধ সহস্রাধিক কৃষকের জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড ব্যবহার করে ধান সংগ্রহের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট চক্র। সরকারি সুবিধাবঞ্চিত ইকবাল হোসেন, শেখ জামাল, জাকির হোসেন, শামসুল, জালাল, মোস্তফা, জানে আলম, রুবেল ফেরদৌস, আলাউদ্দিন, কবির হোসেন, মিয়ার উদ্দিন, রেশমাসহ কৃষকরা অভিযোগ করেন, চলতি অর্থবছরে সরকারিভাবে তাদের নিকট থেকে সরাসরি খাদ্যগুদামে ২৩ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ করা শুরু করলেও তারা খাদ্যগুদামে সরকারিভাবে ধান বিক্রয়ের প্রক্রিয়াটি ভালোভাবে জানেনই না। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে স্থানীয় কতিপয় অসাধু ধান ব্যবসায়ী ও ডিলাররা সিন্ডিকেট তৈরি করে সরকার কর্তৃক প্রদত্ত কৃষকদের লাভের টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে মধ্যস্বত্বভোগীরা কমিশনের শর্তে সংশ্লিষ্ট খাদ্য কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কৃষকের ধান কম মূল্যে ক্রয় করে। পরে ওই কৃষকদেরই জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড মধ্যস্বত্বভোগীরা ব্যবহার করে সরকারি খাদ্যগুদামে সরকারি মূল্যে ধান বিক্রি করে। এতে মণপ্রতি স্থানীয় মূল্যের চেয়ে সরকারি মূল্যে বিক্রির কারণে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৩শ’ টাকা হাতিয়ে নেয় সিন্ডিকেট চক্র। অভিযোগে আরো জানা যায়, এ বিষয়টি জানাজানি হলে স্বার্থান্বেষী মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেট চক্র স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে ধান ক্রয় বন্ধ করে অন্যান্য জেলা থেকে ধান সংগ্রহ করে স্থানীয় কৃষকদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও কৃষিকার্ড ব্যবহার করে পুনরায় ধান বিক্রি শুরু করে। কৃষকরা জানান, সরকার সরাসরি কৃষকের নিকট থেকে ধান ক্রয় করার কথা শুনে খাদ্য কর্মকর্তার দপ্তরে যোগাযোগ করলে ‘ধানে চিটা বেশি, প্রয়োজনমতো শুকানো হয় নাই, ধান ভালো না, ধানে পোকা আছে, ধানে ময়লা আছে’ ইত্যাদি বিভিন্ন অজুহাতে খাদ্য কর্মকর্তার লোকজন তাদেরকে ফিরিয়ে দেয়। ওই ধানই মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের কাছে নিয়ে গেলে খাদ্য বিভাগ কোনো কথা না বলে সংগ্রহ করে নেয়। অভিযোগ রয়েছে, ভুয়া কৃষকদের নাম ব্যবহার করে কয়েকশ’ টন ধান সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এ কারণে সরকারের কৃষক উন্নয়নের উদ্দেশ্য ভেস্তে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কৃষকরা অভিযোগ করেন, যাদের কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে তারা অনেকেই জানেন না তার নামে খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে শ্রীপুর খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক জানান, আমাদের ২৩ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে ১ হাজার ৭৯৩ টন। কিন্তু এ যাবৎ আমাদের সংগ্রহ হয়েছে ১ হাজার ৩১২ টন। একজন কৃষক একটি কৃষিকার্ডে সর্বোচ্চ ৭৫ মণ ধান বিক্রি করতে পারবেন। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ধান সংগ্রহের ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়েছে। এটা না করলে আমরা ধান সংগ্রহ করতে পারতাম না। তথাপি আমাদের দ্বারা কোনো কৃষক হয়রানির শিকার হননি। তিনি আরো জানান, এ যাবৎ ৪৫৩ জন কৃষক ধান বিক্রি করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সবাই তো আর ধান বিক্রি করেনি; আইনগত কারণেই অনেকের কার্ড রাখতে হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে সরকারি দলের লোকদের সাথে সম্পর্ক রেখেই ধান ক্রয় করতে হয়েছে।’

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন