ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানীর ‘প্রত্যক্ষ মদদ ও হস্তক্ষেপেই’ ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে তার পদত্যাগ দাবি করেছেন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। গতকাল বেলা দুইটায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের বাইরে এক সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান এ দাবি জানান।
গত রোববার ডাকসু ভবনে ভিপি নুরুলের কক্ষে ঢুকে বাতি নিভিয়ে রড, বাঁশ ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালান ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতা-কর্মীরা। ওই ঘটনায় আহত অন্তত ২৪ জনের মধ্যে ৯ জন এখন ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি আছেন। এ ঘটনার পর ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে।
ডাকসু ভবনের বাইরে এবং ভেতরে মিলিয়ে মোট ৯টি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা আছে। ক্যামেরার ফুটেজগুলো ধারণ করা হতো ডাকসুর সিনিয়র অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার আবুল কালাম আজাদের কক্ষে। সেই কক্ষে একটি মনিটর ও একটি সিপিইউ ছিল। কিন্তু ডাকসু ভবনে নুরুল হকের ওপর হামলার ঘটনার পর সেই মনিটর এবং সিপিইউয়ের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে ভিপি নুরুল হকের সংগঠন সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান বলেন, প্রথম দফায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আমাদের ওপর হামলা করেছিল। এই ঘটনার পর আমি প্রক্টর স্যারকে অন্তত দশবার ফোন করি। এর মধ্যে তিনি তিনবার আমার ফোন ধরেছিলেন। তিনবারই তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছিলেন। একপর্যায়ে তিনি এও বলেছিলেন, ‘তুমি ডাকসুর কেউ না, ওখানে কেন গিয়েছ?’ আমি তাঁকে বলেছিলাম, শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো জায়গায় যাওয়ার অধিকার আমার আছে। এটি বলার পরও প্রক্টর আমাকে গালিগালাজ করেছিলেন। বারবার কাকুতি-মিনতি করার পরও তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি। আমাদের ওপর যখন দ্বিতীয় দফা হামলা হয়, তখন তিনি ঘটনাস্থলে আসেন। অর্থাৎ ইচ্ছাকৃতভাবেই তিনি আমাদের মার খাইয়েছেন। প্রথম দফা হামলার পর যদি প্রক্টর আমাদের উদ্ধার করতেন, তাহলে আজকে নির্মম নির্যাতনে আহত হয়ে আমাদের ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হতে হতো না। আমাদের ওপর যে হামলা হয়েছে, তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই দলকানা প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা গত রোববারের হামলায় অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন রাশেদ। তিনি বলেন, যারা আমাদের পিটিয়ে আহত করেছে, তাদের অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে। আমাদের অনেকেই এখনো হাসপাতালে ভর্তি আছে। যেহেতু প্রক্টরের দায়িত্বহীনতার কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন একটি কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে, তাই আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার দায়িত্ব সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
সনজিত ও সাদ্দামকে বাঁচাতেই ডাকসু ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন মুহাম্মদ রাশেদ খান। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের যৌথ উদ্যোগেই সিসিটিভি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা বিন ইয়ামিন মোল্লা, মাহফুজুর রহমান, মশিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এদিকে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুরের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। শারিরীকভাবে তিনি আগের চেয়ে ভালো আছেন বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম নাসির উদ্দিন। তিনি বলেন, নুর কথা বলছেন, হাঁটছেন। তিনি আশঙ্কামুক্ত। শিগগিরই নুরসহ অন্যদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি। তবে, হামলার ঘটনায় গুরুতর আহত এপিএম সুহেল এখনও নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
জানা যায়, মঙ্গলবার রাতে মাথায় সফল অস্ত্রোপচারের পর গুরুতর আহত এপিএম সুহেলকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। সেখানে তাকে আরও দুইদিন রাখা হবে বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ন আহবায়ক বিন ইয়ামিন মোল্লা বলেন, সুহেল এখনও আইসিইউতে আছে। ডাক্তার বলেছেন, তাকে আরও অন্তত দুইদিন আইসিইউতে রাখতে হবে। পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক ফারুক হাসান বলেন, সুহেল এখনও আইসিইউতে আছেন। তার মাথায় অস্ত্রোপচার ভালোভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত তার জ্ঞান ফেরেনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন