ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সদ্য সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে ‘ধর্ষণে সহযোগিতার’ অভিযোগে রোববার মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। এই মামলার প্রতিবাদে সোমবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ। মিছিল ক্যাম্পাস থেকে মৎস্যভবনের সামনে গেলে বিক্ষোভে পুলিশের বাধা ও লাঠিপেটার অভিযোগ করা হয়। এরপরই নূরকে আটক করে পুলিশ ও পরবর্তীতে ছেড়ে দেয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে সোমবার রাতে আবারও নূরের বিরুদ্ধে একই ছাত্রী আরেকটি মামলা করে।
এবার মামলা করা হয়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। এদিকে নুরুল হক নূরের বিরুদ্ধে এসব মামলাকে মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে দাবি করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। একইভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও হচ্ছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। বিশেষ করে যেসব অভিযোগে ভিপি নূরের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে সেই অভিযোগকে অনেকেই হাস্যকর হিসেবে তুলে ধরেছেন ভার্চুয়াল জগতে। জানা যায়, রোববার রাতে লালবাগ থানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্রী নূরসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগে মামলা করেন। এর মধ্যে নূরের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি ধর্ষণে সহযোগিতা করেছেন এবং প্রেমিকের সাথে মীমাংসা করিয়ে দেয়ার পরিবর্তে হুমকি দিয়েছেন। এই মামলার পর সোমবার ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের শিক্ষার্থীরা। মিছিলে পুলিশের বাধা ও লাঠিপেটার অভিযোগ করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ওই বিক্ষোভের পর রাতেই নূরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর প্রথমে ডিবি কার্যালয়ে, অসুস্থ হয়ে পড়ছে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল এবং আবারও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে গেলে মুচলেকা দিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। একই রাতে (সোমবার) আবার রাজধানীর কোতোয়ালি থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নূরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে ওই ছাত্রী। এসব আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ অপহরণ, ধর্ষণ, ধর্ষণে সহযোগিতা এবং পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরিত্র হনন করেছে।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হাসান সোহাগ, আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, ইফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি নাজমুল হুদা এবং কর্মী আবদুল্লাহ হিল বাকিকে আসামী করা হয়েছে।
বাদীর ভাষ্য, একই বিভাগে পড়া এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের কাজে থাকার কারণে হাসান আল মামুনের সঙ্গে তার ‘প্রেমের সম্পর্ক’ গড়ে ওঠে। এর সুযোগ নিয়ে মামুন চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তার লালবাগের বাসায় নিয়ে তাকে ‘ধর্ষণ’ করেন। এ অভিযোগেই তিনি লালবাগ থানার মামলাটি দায়ের করেন। আর কোতোয়ালি থানার মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ধর্ষণের ওই ঘটনার পর ওই শিক্ষর্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে সোহাগ তাকে হাসপাতালে ভর্তি করান। সুস্থ হওয়ার পর মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দেন ওই তরুণী। তখন সোহাগ তাকে ‘সহযোগিতার আশ্বাস’ দেন এবং মামুনের সঙ্গে দেখা করানোর কথা বলে সদরঘাট হয়ে ‘লঞ্চে করে চাঁদপুরে’ নিয়ে যান। কিন্তু চাঁদপুরে মামুনকে না পেয়ে ওই ছাত্রীর সন্দেহ হয়। সেখান থেকে ফেরার পথে লঞ্চে সোহাগ তাকে ‘ধর্ষণ করেন’ বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।
এজাহারে আরও বলা হয়, এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে ওই তরুণী নূরের সঙ্গে দেখা করেন। নূর তাকে প্রথমে ‘মীমাংসা’ করে দেওয়ার আশ্বাস দিলেও পরে ‘বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে অপপ্রচার চালিয়ে সম্মানহানী করার’ হুমকি দেন। মামলার অপর তিন আসামী নানাভাবে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ওই তরুণীর বিরুদ্ধে ‘কুৎসা’ রটাতে শুরু করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে লালবাগ থানায় ধর্ষণের মামলা হওয়ার পর তা ‘ষড়যন্ত্রমূলক’ দাবি করে রোববার রাতে বিক্ষোভ করছিল ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। একইভাবে ছয়জনের বিরুদ্ধে ‘ষড়ন্ত্রমূলক’ মামলা ও মিছিলে পুলিশি ‘হামলার’ প্রতিবাদে গতকাল বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এদিন বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দোয়েল চত্বর হয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে সমাবেশ করে সংগঠনটির নেতা-কর্মীরা।
ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন বলেন, আমরা যখন মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করি, তখন একদল রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, আমাদের ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। আমাদের দমন করতে কাঠ, হকিস্টিক ও রড দিয়ে হামলা চালিয়েছে। ভিপি নূরসহ আমাদেরকে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কিন্তু আমরা দমে যাইনি, আমরা রাজপথে আছি, থাকব। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, হামলা-মামলার ভয় দেখিয়ে এদেশের মানুষকে দমন করা যাবে না।
সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি বিন ইয়ামীন মোল্লা বলেন, আমরা নাকি পুলিশের উপর আক্রমণ করেছি। অথচ আপনারা মিডিয়ার লোকজন দেখেছেন, কীভাবে আমাদের উপর সিনেমা স্টাইলে হামলা চালানো হয়েছিল। আমরা সন্দিহান, আদৌ তারা পুলিশ বাহিনী ছিলেন, নাকি ভাড়া করা সন্ত্রাসীদের দিয়ে আমাদের উপর ঘৃণ্য হামলা করা হয়েছিল। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলতে চাই, আমরা যদি অপরাধী হয়ে থাকি, আমরা স্বেচ্ছায় গ্রেপ্তার হতে রাজি আছি। গ্রেপ্তারের ভয় দেখাবেন না। তিনি বলেন, আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতে চাই, কী কারণে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নূরসহ আমাদের উপর হামলা করা হল? ছাত্র সমাজকে এই উত্তর আপনাকে দিতে হবে। তিনি অবিলম্বে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করার দাবি জানান।
ডাকসুর সাবেক সমাজ সেবা সম্পাদক আখতার হোসেন বলেন, হামলা-মামলা এই প্রথম নয়, আরও অসংখ্য বার এ ধরনের হামলা-মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে আমাদের। কিন্তু শত হামলা-মামলা করেও আমাদের দমিয়ে রাখা যায়নি। তবে সরকার আমাদের দাবায়ে রাখতে নীলনকশা তৈরি করেছে এটা স্পষ্ট।
এসময় পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক নাদিম হোসেনসহ শতাধিক নেতা-কর্মী সেখানে ছিলেন। পরে বেলা ১টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শাহবাগ চত্বরে এসে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া: ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নেটিজেনরা। নূরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগে মামলা করা হয়েছে সেটি হাস্যকর, অবাস্তব ও ষড়যন্ত্রমূলক হিসেবে মন্তব্য করেছেন তারাও। বিশেষ করে জানুয়ারিতে হওয়া ধর্ষণ মামলা সেপ্টেম্বরে করার বিষয়টি সমালোচনা করেন তারা।
মো. রিয়াজ মোল্লা নামে একজন লিখেছেন, যে মেয়েটি এই মামলাটি করেছে আমি তাকে বলব। ঐ মেয়ে তুমি কার এবং কিসের প্রলোভিত হয়ে, এতবড় জঘণ্য দিকটা বেছে নিলে। মনে রেখ মহান আল্লাহ যদি কাউকে উপরে উঠায় সবাই মিলে পা ধরে টানলেও নীচে নামাতে পারবে না। কারন ঐ সম্মান যিনি দিয়েছেন তিনিই রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ। ডাকসু ভিপি নুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ধর্ষণ মামলার নিন্দা জানাচ্ছি।
আবুল হাশেম নামে একজন লিখেছেন, ধর্ষণের সহযোগী মামলা হওয়ার কিছু সময়ের মধ্যেই পুলিশের নির্যাতনে ঢাকা মেডিক্যালে মুমুর্ষ অবস্থায় চিকিৎসা নিতে হয়! কিন্তু সুবর্ণচরে চার সন্তানের জননীকে ধর্ষণ করে হত্যাকারীরা বহাল তবিয়তে!
কামরুল হাসান নামে একজন লিখেছেন, ধর্ষণের সাড়ে আট মাস পর মামলা। মানুষরে কি বেকুব মনে করেছে? কিছু বলতে না পারলেও সব বুঝে।
আজিজুর রহমান মামুন লিখেছেন, একদিনে বাংলাদেশের আইন-শৃংখলার এত উন্নতি হবে ভাবতেই পারছিনা! যে দেশে ধর্ষণের হাজারো প্রমাণ থাকা সত্তে¡ও আসামিদের ধরানো যায়না! সেখানে ভিপি নুর এর বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট মামলায় প্রথম দিনেই আটক! বাহঃ#
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন