ডিটেনশন ক্যাম্প প্রসঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত রোববার দাবি করেছিলেন, ‘দেশে একটিও ডিটেনশন সেন্টার নেই। পুরোটাই মিথ্যা।’ কংগ্রেস এবং শহুরে মাওবাদীরা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক ভাবে প্রচার করছে বলে মন্তব্য করেছিলেন মোদি। তার দাবি যে মিথ্যা, ডিটেনশন ক্যাম্প নিয়ে তিনি যে নির্জলা মিথ্যা কথা বলেছেন, বৃহস্পতিবার তার প্রমাণ সবার সামনে তুলে ধরলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
রাহুল গান্ধী টুইটারে মোদির সেই মন্তব্যের ভিডিওর একটি অংশ এবং একটি আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন শেয়ার করেন। আসামের গোয়ালপাড়ার মাটিয়াতে যে ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে, প্রতিবেদনটি সেই সম্পর্কিত। রয়েছে মোদির বক্তব্যের ‘ঝুট, ঝুট, ঝুট’ অংশ। এই দুই বিপরীত ভিডিও মিলিয়ে রাহুল দেখাতে চেয়েছেন মোদি একদিকে ‘ডিটেনশন ক্যাম্প’ নেই বলে মিথ্যাচার করছেন, আর অন্য দিকে, ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হচ্ছে। সেই সঙ্গে রাহুল লিখেছেন, ‘আরএসএস-এর প্রধানমন্ত্রী ভারতমাতাকে মিথ্যে কথা বলছেন।’ তার সঙ্গে টুইটারে হ্যাশট্যাগ দিয়েছেন ‘ঝুট, ঝুট, ঝুট’।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, আসলে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহার করা শব্দবন্ধ দিয়েই তাকে উপহাস করেছেন রাহুল। মোদি যে পুরোটাই মিথ্যে কথা বলছেন, সেটাই প্রমাণ করতে চেয়েছেন এবং দুই ভিডিও দিয়ে সেটার অকাট্য প্রমাণও দেশবাসীর সামনে তুলে ধরতে চেয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, মোদির ওই মন্তব্য ক্রমেই বুমেরাং হয়ে উঠছে।
সিএএ-এনআরসি নিয়ে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ বিক্ষোভের মধ্যেই রোববার দিল্লির রামলীলা ময়দানে একটি দলীয় জনসভায় যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানেই তিনি ডিটেনশন সেন্টার সম্পর্কিত ওই দাবি করেন। অথচ রাহুলের টুইট করা ওই প্রতিবেদনই শুধু নয়, আরও অনেক সংবাদ মাধ্যমেই গোয়ালপাড়ায় নির্মীয়মাণ ডিটেনশন সেন্টারের খবর সামনে এসেছে। এ ছাড়া কর্নাটকের নীলামঙ্গলা শহরে ইতিমধ্যেই একটি ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়ে গিয়েছে।
আসামের প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গোয়ালপাড়ার এই ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছে ২০১৮ সালে। শেষ করার নির্ধারিত সময়সূচি ছিল এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য প্রায় দু’মাস কাজ বন্ধ থাকায় এবং আরও কিছু কারণে সেই সময়ের মধ্যে তা শেষ করা যাচ্ছে না। ৭০ শতাংশের মতো কাজ শেষ হয়েছে। কাজ শেষ হলে রাখা যাবে মোট ৩০০০ জনকে। বিশাল এলাকা জুড়ে তৈরি হচ্ছে চারতলা ১৫টি ভবন। তার মধ্যেই মহিলাদের রাখা হবে প্রাচীর দিয়ে ঘেরা আলাদা জায়গায়। এ ছাড়াও ক্যাম্পের ভিতরে গণ শৌচালয়, গণ রান্নাঘর ও খাবারের জায়গা তৈরি হচ্ছে। থাকবে প্রশাসনিক ভবন ও পুলিশ ব্যারাক, শিশুদের জন্য স্কুল ও হাসপাতাল। কিন্তু এত কিছুর পরেও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই বলে দাবি করায় প্রধানমন্ত্রীর ওই বক্তব্য প্রশ্নের মুখে পড়েছিল। শুরু হয়েছিল সমালোচনা। এ বার তাতে যোগ দিলেন রাহুলও।
যদিও পরে সাংবাদিক বৈঠক করে মোদির বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে বলে দাবি করেন বিজেপি নেতা সম্বিত পাত্র। তার দাবি, মোদি ওই দিন বলেছিলেন, দেশে এমন কোনও ডিটেনশন ক্যাম্প নেই, যেখানে এনআরসি থেকে বাদ পড়া মুসলিমদের রাখা হবে। কংগ্রেস এবং শহুরে মাওবাদীরা এই মিথ্যে প্রচার করছেন। পাশাপাশি একাধিক সরকারি নথি তুলে ধরে সম্বিত দাবি করেছেন, ২০১১ সালে কেন্দ্রে ইউপিএ এবং আসামে কংগ্রেস থাকার সময়েই ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। সূত্র: এবিপি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন