ইয়েমেনের যুদ্ধ, কাতার অবরোধ এবং গত বছর ইস্তাম্বুলে সউদী দূতাবাসে সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যার কারণে ওয়াশিংটনে সউদী আরবের গ্রহণযোগ্যতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল। কংগ্রেস এবং সরকারের অন্যান্য অংশে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ার পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গুরুত্বপূর্ণ আরব মিত্র এবং আমেরিকান অস্ত্রের নির্ভরযোগ্য ক্রেতা হিসাবে সউদীকে সমর্থন অব্যাহত রেখেছিলেন। তবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে সউদী কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারছিল যে, বেশিরভাগ ভোটারের সউদী বিরোধী মানসিকতার কারণে ট্রাম্প তার অবস্থান পরিবর্তন করতে পারেন এবং একজন নতুন প্রেসিডেন্ট সম্পূর্ণ ভিন্ন পন্থা গ্রহণ করতে পারেন।
সউদী তেলক্ষেত্রে হামলার পরে, ট্রাম্প ইরানের উপর বিমান হামলার আদেশ দিয়েও সঙ্গেই সঙ্গেই তা প্রত্যাহার করেছিলেন। তার বদলে তিনি প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য সউদীতে আরও কিছু সেনা প্রেরণ করেন, কিন্তু সউদীরা যুক্তরাষ্ট্রকে কাছের বন্ধু হিসাবে বিবেচনা করত এবং ইরানের বিরুদ্ধে তারা ট্রাম্পকে সমর্থন করেছিল, ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই নামমাত্র পদক্ষেপ তাদের আশাহত করে।
এ বিষয়ে ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের মধ্য প্রাচ্যে বিষয়ক বিশ্লেষক এমিল হোকাইম বলেন, ‘এমনকি ট্রাম্পের জন্যও প্রচারাভিযানের সময় সব ক্ষেত্রে সউদীকে রক্ষা করা কঠিন বিষয়। সুতরাং আমি মনে করি এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের কাছ থেকে যে বেশি কিছু আশা করা যায় না, সেটি বোঝার মত বুদ্ধি সউদী কর্তৃপক্ষের রয়েছে।’
নিকটতম আঞ্চলিক মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাতে সাথেও সউদীর সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। চলতি বছরের জুনে, আমিরাত ইয়েমেন থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করে এবং ভয়ঙ্কর যুদ্ধটির দায়ভার একা সউদীর উপরে ছেড়ে দেয়। জুলাই মাসে আমিরাত সমুদ্র সুরক্ষা নিয়ে ইরানের সাথে আলোচনার আয়োজন করেছিল। পারস্য উপসাগরে উত্তেজনা প্রশমিত করতে এবং ব্যবসায়ের নিরাপদ কেন্দ্র হিসাবে নিজেদের সুনাম রক্ষা করতে তারা এই বিরল পদক্ষেপ নিয়েছিল।
ফলে সউদী আরব ক‚টনৈতিকভাবে আঞ্চলিক সমস্যা সমাধানে উৎসাহিত হয়। ইয়েমেনে, উভয় পক্ষই শান্তির ইচ্ছা প্রদর্শনের জন্য ১০০ শতাধিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে এবং হুতিদের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণ ক্রমান্বয়ে কমে এসেছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে সউদী নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা ৮০ শতাংশ কমে গেছে বলে গত মাসে জানান ইয়েমেনে জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত মার্টিন গ্রিফিথস।
সউদী আরব এবং কাতারের মধ্যকার স্থবিরতার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি খুব কমই হয়েছে তবে দুই দেশের নেতাদের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনার ফলে সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কাতারে ভ্রমণকারী নাগরিকদের শাস্তি দেওয়ার অবস্থান থেকেও তারা সরে আসছে। এমনকি কাতারের রাজধানী দোহার টুর্নামেন্টে খেলতে তারা ফুটবল দলও পাঠিয়েছে। যদিও চলতি মাসে সউদী আরবে আঞ্চলিক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য বাদশাহ সালমানের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি কাতারের আমির, তবে কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিনি সেখানে পাঠিয়েছিলেন।
তবে এই ধরনের আলোচনা উত্তেজনা কতটা কমাবে তা এখনও স্পষ্ট নয়, বিশেষত যেহেতু ইরানের সাথে আলোচনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ভালোভাবে নাও নিতে পারে। কারণ, তিনি ইরানকে একঘরে করার মাধ্যমে শাস্তি দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এ বিষয়ে ওবামা প্রশাসনের কর্মকর্তা ম্যালি বলেন, ‘ট্রাম্প প্রশাসনের উপর পুরোপুরি বিশ্বাস না করা এক জিনিস। আর প্রকাশ্যে অস্বীকার করা আরেক বিষয়।’
সমস্ত বাধা মোকাবেলা করে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ সালমান বর্তমানের কঠিন পরিস্থিতি থেকে সউদী আরবকে কিভাবে রক্ষা করেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন