ফিটনেস নাই তবুও রাজপথে। চলার যোগ্য নয় তারপরেও চলছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলরত লক্কর-ঝক্কর এসব গাড়ি দিয়ে চুটিয়ে ব্যবসা করছেন এক শ্রেণির পরিবহন মালিক। আর এসব গাড়ির চালকের সিটে বসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালায় অপ্রাপ্ত বয়সের কিশোররা। সেবা তো দূরের কথা যাত্রীরা নিরাপদ নয় এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনে।
ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলাচলের কারণে শুধু দুর্ভোগই নয়, ক্ষতির মুখে পড়ছে মহাসড়কের পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্যও। ভুক্তভোগী যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রাফিক পুলিশের সামনেই অবাধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চললেও নেওয়া হচ্ছে না যথাযথ ব্যবস্থা। হাইকোর্ট যখন ফিটনেসবিহীন মোটরযান চলাচল বন্ধের জন্য সরকারকে নির্দেশ দেন তখন ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে বিআরটিএ। মাসখানেক এই অভিযানে গতি থাকলেও পরবর্তীতে তা ঝিমিয়ে পড়ে।
জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজি অটোরিক্সা বন্ধ করে দেয়ার পর লক্কর ঝক্কর পুরনো গাড়ি দিয়ে কুমিল্লা ক্যন্টারমেন্ট-চান্দিনা-মাধাইয়া-ইলিয়টগঞ্জ ও গৌরীপুর লেগুনা ও মেসি-মারতি সেইফ লাইন নামে শত শত গাড়ি মহাসড়কে চলাচল করছে। কোনো ধরনের প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যাত্রীবোঝাই চার চাকার মেসি-মারতি (মিনি মাইক্রোবাস) গাড়ি নিয়ে ছুটছেন অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অদক্ষ চালকরা। এই চালকদের অনেকেরই নেই ড্রাইভিং লাইসেন্স। কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নয়, ওস্তাদরাই প্রশিক্ষণ দিয়ে চালক তৈরি করছেন ব্যস্ত রাজপথে। আর এ ভুয়া লাইসেন্সধারী চালকদের দৌরাত্ম্যের খেসারত দিচ্ছেন মহাসড়কে চলাচল করা মানুষ। অদক্ষ হাতে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহত হচ্ছেন অনেকেই। অথচ সারাদেশে শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক চাই অন্দোলনের পরও এসব অপ্রাপ্তবয়স্ক ও অদক্ষ চালকদের টনক নড়েনি।
মালিকরা বলেন, চালক সঙ্কটের কারণে কেউ কেউ অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিতে বাধ্য হন। এক্ষেত্রে চালক সংগঠনের কর্তৃপক্ষের কাছে মালিকরা অসহায় বলে অভিযোগ করেছে একাধিক মালিক সমিতি। আব্দুর রহমান নামের এক যাত্রী বলেন, গাড়িতে ওঠার সময় চালকের দিকে তাকাননি। সামনে পেয়েছেন, তাই গাড়িতে উঠে পড়েছেন। এই সড়কে ১৩-১৪ বছর বয়সী অনেক চালক আছে। যানবাহনের সঙ্কটের কারণে ঝুঁকি আছে জেনেও তারা এসব গাড়িতে উঠতে বাধ্য হচ্ছেন।
চান্দিনার ব্যবসায়ী কাইয়ুম বলেন, সড়কে লেগুনা-মেসি-মারতি সেইফ লাইন পরিবহনের অনেক চালক কিশোর। তারা এখনো অদক্ষ ও অপরিপক্ক। তারা অনেক দ্রæত বেগে গাড়ি চালায়। সড়কে দাঁড়ানো যাত্রী তুলতে হঠাৎ ব্রেক দেয়। এতে অনেক যাত্রীর সমস্যা হয়। এছাড়া অনেক সময় গাড়ি খালি থাকলে উল্টো পথের যাত্রী নিতে এদিক ওদিক না তাকিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে দেয়।
সাদ্দাম নামে এক যাত্রী বলেন, মোবাইলে কথা বলতে বলতে গাড়ি চালান অনেক চালক। এটিও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন চালককে এ নিয়ে শাস্তি দেয়া হয়েছে দেখিনি। লাইসেন্সপ্রাপ্ত একাধিক চালক অভিযোগ করে বলেন, ঢাকা-চটগ্রাম মহাসড়কের মত গুরুত্ব সড়কে লক্কর, ঝক্কর পুরনো গাড়ি দিয়ে কিশোর বয়সী চালকরা মালিকদেরকে দৈনিক জমার টাকা বেশি দেয় বলে মালিকরা তাদেরকেই গাড়ি দিয়ে থাকে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, লাইসেন্সবিহীন চালকদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করছে হাইওয়ে পুলিশ। কিশোর চালকদের হাতে গাড়ি না দিতে তারা বিভিন্ন সময়ে মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে সচেতনতামূলক সভা করেছেন। কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভা করেও সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন