হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এমন এক অপ্রতিদ্বন্ধি ও অদ্বিতীয় মহান সত্ত্বা যার কোন বিকল্প নেই, ছিল না ও হবে না। কেহ যদি মনে করে থাকেন যে, রাসূল কে আমি বই-কিতাব পড়ে ভালভাবে জেনেছি; এটা তার ভুল করা হবে। কারণ, রাসূল হলেন এমন একজন নবী ও রাসূল ও শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি এবং মারিফাত এর জনক তাঁকে বই-কিতাব পড়ে কোন দিন জানা যাবে না তো বটেই; পৃথিবীর কোন নবী রাসূল ও ওলী তাঁকে পরিপূর্র্ণরুপে জানাও তাঁর রহস্য উদ্ঘাটিত করতে সক্ষম হবেন না। আর দ্বিতীয়তঃ তাঁকে ইব্রাহিমী দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। তৃতীয়তঃ সৌদী ওহাবিরা তাঁকে তাদের মত মানুষ ও মৃত যার কোন শক্তি নাই প্রচার করে থাকে।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “জানো হে আবু বকর; আমার রহস্য এক আল্লাহ ছাড়া কেহ জানে না।” আরও বলেছেন, “আল্লাহর সাথে আমার এমন এক গোপন সম্পর্ক আছে, যেখানে কোন উচ্চস্তরের ফেরেশ্তা ও নবীর প্রবেশাধিকার নেই।” তাই বারো শরীফের মহান ইমাম শাহ সূফী মাস্উদ হেলাল (রঃ) বলেছিলেন, “মোহাম্মদ (সাঃ) যে কি তা যদি জানতে চাও তো, আল্লাহ ওলীকে জিজ্ঞাসা কর।” আল্লাহ্ বলেছেন; “যদি তুমি সৃষ্টি না হতে তাহলে; আমি আস্মান সমূহ করতাম না এবং আমার প্রভুত্ব প্রকাশ করতাম না।” (হাদীসে কুদসী) হযরত শেখ সাদী (রঃ) ও এ হাদীস বর্ণনা করেছেন ঃ বলেছেন, “হে রাসূল! আপনার সম্মান ও ইজ্জত বুঝে নেবার জন্য ‘লওলাকা’ বলাই যথেষ্ঠ। অর্থাৎ আল্লাহ তা’য়ালা বলেছিলেন-হে হাবীব! আপনি যদি সৃষ্টি না হতেন তবে আমি কোন কিছুই সৃষ্টি করতাম না। আপনাকে সৃষ্টি করার কারণেই সমস্ত বিশ্ব জগত সৃষ্টি করেছি। পবিত্র কোরআনে-তাঁহা ও ইয়াসিন প্রভৃতি সূরা গুলো আপনার নাম যোগে আরম্ভ করার মাধ্যমে আপনার সর্বশ্রেষ্ঠ প্রশংসা জেনে নেবার জন্য যথেষ্ট।”
রাসূল (সাঃ কে পর্যবেক্ষন করার দু’টি দিক রয়েছে-একটি জাহেরী বা প্রকাশ্য অপরটি বাতেনী বা অপ্রকাশ্য। যে ব্যক্তি উভয় দিক হতে তাঁকে প্রত্যক্ষ করতে সক্ষম হবেন তাঁর তো আর কোন কিছুরই প্রয়োজন বাকি থাকবে না; কারণ তার নিকট দুইজন মোহাম্মদ (সাঃ) উদ্ভাসিত হবে-একজন জাহেরী মোহাম্মদ (সাঃ) অপরজন বাতেনী মোহাম্মদ (সাঃ)। তিনি লাভ করবেন মোহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি দুইটি ঈমান, দুইটি দৃঢ় প্রত্যয়। এমন অবস্থায় পৌঁছালে তার হৃদয়ে হযরতের প্রতি যে ঈমান বা প্রত্যয় থাকবে তাতে কোন দিক হতে দূর্বলতা বা সন্দেহ স্পর্শ করতে পারবে না। মোহাম্মদ (সাঃ) কে জানতে ও ভালবাসতে যে বিষয়টা জরুরী তা হলো ঃ তাঁর জাতিসত্তা বাচক নাম মোহাম্মদ ও আহ্মদ এর মারিফাত জানা। অর্থাৎ “মিম’-হে ‘মিম’ দাল” এর হাকিকত মারিফাত মহব্বত ও সুগন্ধী জানা ও উপলব্ধি করা। তাঁর সাথে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবার সৌভাগ্য নসীব হওয়া।
প্রেমিক কবি নজরুল কত সুন্দর বলেছেন- “কহিলেন প্রভূ; ভয় নেই, দিনু আমার প্রিয়তম/তোমার মাঝারে জ্বলবে সে জ্যোতি তোমাতে আমারি সম।” এখানে কবি স্রষ্টা কর্তৃক বিশ্বে আদি মানব আদম (আঃ) সৃষ্টি এবং তার ভিতরে মোহাম্মদ (সাঃ) এর রূপ ও আলো প্রদানের কথা বলেছেন। “মোহাম্মদ” নামে কোন নুক্তা নেই; বিন্দু নেই দাগ নেই। “মোহাম্মদ” মানে বারবার প্রশংসা করেও যার প্রশংসা শেষ হবে না। আল্লাহ তাঁর প্রশংসা করেন, সমগ্র সৃষ্টি জগৎ যার প্রশংসা করে। আর এক নাম আহ্মদ। উর্দ্ধ জগতে এই নামে পরিচিত। ‘আহ্মদ’ মানে অধিক প্রশংসাকারী; অধিক এবাদতকারি। আল্লাহ জানাতে চাচ্ছেন আমার হাবীবের নামের মধ্যে যেমন বিন্দু নেই, দাগ নেই; ঠিক তেমনি তাঁর পবিত্র চরিত্রের মধ্যে কোন দাগ নেই; কলঙ্ক নেই। লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বাক্যে ১২টি অক্ষর; আবার মোহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ লিখতে ১৩টি অক্ষর। এ সকল অক্ষরের কোন নোক্তা নেই। এটাই মোহাম্মদ নামের গৌরব ও বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন ঃ আমার সম্মান ও পরাক্রমের শপথ, মোহাম্মদ নামে যারা নিজের নাম রাখবে তাদের আমি কোন রকম শাস্তি দেব না। আহমাদ নামে যারা নাম রাখবে তাদেরও শাস্তি দেয়া হবে না।” ইনাকে আমাদের ভালবাসতে হবে। আর কেনই বা ভালবাসবো না। তিনি যে, মোমেনদের জন্য দয়াপরবশও পরম দয়ালু। অর্থাৎ বিল মোমেনিনা রাউফুর রাহীম (সূরাঃ তওবাহ) ইমাম (রঃ) এর কথায় “দয়ার সাগর।”
আজকের এ পবিত্র দিনের সম্মানে একটি কবিতা ঃ
“এ মহামানবের এ মহা মিলন তীর্থে / আজ এ বাৎসরিক মহা মিলনের দিনে / হে রাসূল! হে দয়ার সাগর / আমরা এসেছি আপনারই দয়া প্রার্থী হয়ে / পাপে তাপে জর্জরিত এ হৃদয় / মুক্তির উপায় আপনি ছাড়া কেই নাই / একদিকে সংসারের মায়া / অন্যদিকে নাফসের তাড়না / বড় দুঃখজনক কষ্টকর / আমরা আজকের এ অবস্থায় / এই নিয়ে এসেছি আপনার মহান দরবারে / দয় ক্ষমার বড় আশা নিয়ে / অন্ততঃ আজকের এ দিনের তরে যেন কেউ ফিরে না খালি হাতে / হে দয়ার সাগর / আপনার এ দয়ার দরবার হতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন