শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ধর্ম দর্শন

কবিতা প্রসঙ্গে রাসূল (সা:)

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০২ এএম

পূর্ব প্রকাশিতের পর

‘মহানবী (সাঃ) বলেছেন, ‘কবিদের আর্থিক সহযোগিতা দান করা পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার সমতুল্য।’
রাসূল (সাঃ) নিজেও কখনো কখনো দু’এটা টুকরো মিসরা বানিয়ে আবৃত্তি করে উঠতেন। খন্দকের যুদ্ধে সাহাবীদের সাথে পরীখা খনন করতে করতে রাসূল (সাঃ) গেয়েছিলেন ঃ

“আল্লাহর নামে শুরু করি এই কাজ/যাঁর ওছিলায় পেলাম পথের দিশা/করি যদি কেউ অন্যের ইবাদত/দুর্ভাগ্যের ভাগী হবো নিশ্চয়/প্রভু আমাদের কত যে মহামহিম/আমাদের দীন কতো উত্তম দীন।”

ওহুদের যুদ্ধের এক পর্যায়ে রাসূল (সাঃ) একটি গুহায় আশ্রয় নিলেন। একখন্ড পাথরের আঘাতে তাঁর আঙুল থেকে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকলে তিনি আবৃত্তি করেন এ পংক্তি কয়টি ঃ

‘হে অঙ্গুলী! তুমি তো একটা আঙুল বৈ কিছুই নও।
সুতরাং যা কিছু হয়েছে, তাতো আল্লাহর রাস্তায় হয়েছে,তাই এতে অনুশোচনা ও দুঃখ কিসের’? রাসূল (সাঃ) বক্তৃতা দেবার সময় ও কখনো কখনো সাহাবী কবিদের কবিতার উদ্বৃতি দিতেন।

তিরমিযী শরীফের বর্ণনা ঃ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) কে প্রশ্ন করা হলো, ‘মহানবী (সাঃ) কি তাঁর বক্তৃতায় কখনো কবিতার উদাহরণ নিয়ে আসতেন? হরযত আয়েশা (রাঃ) উত্তর দিলেন, হাঁ উদাহরণ দিতেন বৈ কি। তিনি কবি ইবনু রাওয়াহার কবিতা দিয়ে উদাহরণ টানতেন। কখনো বা উপমা দিতেন তারাফ বিন আবাদ এর কবিতা দিয়ে ঃ

‘অনাগত কাল জানাবে তোমায় তুমি যা জানতে না,
কী নিয়ে আসবে খবর যা তুমি শোন নাই।’

রাসূল (সাঃ) তার মুখে এ কবিতা শুনে বলেন, এতো নবীদের কথা’। হযরত কা’ব বিন যুহায়র (রাঃ) আল্লাহর নবী (সাঃ) ও ইসলামের বিরুদ্ধে কাব্য রচনা করে কুৎসা ও বিদ্বেষ প্রচারে লিপ্ত থাকলে, রাসূল (সাঃ) তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদÐ জারি করেন। কিছুদিন পর তিনি নিজ ভুল বুঝতে পেরে ছদ্মবেশে মদীনায় এসে রাসুল (সাঃ) এর পদ প্রান্তে নিজেকে নিবেদন করে সওগাত রূপে যে কবিতা আবৃত্তি করেন তারই একটি পংক্তির দু’টি আদ্যাক্ষর নিয়ে ‘বা’নাত সুআদ’ এই নামকরণ হয়। রাসূল (সাঃ) এর মহান দরবারে কবিতাটির আবৃত্তিকালে, কা’ব যখন বললেন,
‘আমাকে সংবাদ দেয়া হয়েছে যে, নিশ্চয় আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাকে ভয় প্রদর্শন করেছেন কিন্তু আল্লাহর প্রেরিত মহাপুরুষের কাছে ক্ষমা আশা করা যায়।’ (৩৯ শ্লোক) তখন রাসুল (সাঃ) সংশোধন করলেন, ‘বরং আল্লাহর কাছে ক্ষমা।’ কা’ব পুনরায় উচ্চারণ করলেন; ‘নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এমন এক জ্যোতি যে, তা থেকে আলোক (নূর) প্রার্থনা করা হয়। তিনি হিন্দুস্তানের তরবারীদের মাঝে এক কোষমুক্ত তীক্ষ্ণ তরবারী।’ (৫২ শ্লোক) পুণরায় রাসূল (সাঃ) সংশোধন করে বললেন, ‘বরং আল্লাহর তরবারীগুলোর মাঝে।’ কবিতা পড়া হয়ে গেলে নবী করীম (সাঃ) আপন চাঁদর খুলে তাঁকে দান করলেন। রাসূল (সাঃ) যখন হিজরত করে মক্কা ছেড়ে মদীনা যান তখন তাঁকে স্বাগত জানায়ে মদীনার নারী ও শিশুরা আনন্দে কাব্যের সুরে গেয়েছিল ‘তালাআল বাদরু আলাইনা, মিনসানি ইয়াতিল বিদায়ী,/ওয়াজা বাশ শুকরু আলাইনা মাদা আ লিল্লাহি দায়ী’। রাসূল (সাঃ) এর দুনিয়াবী জীবন ছিল দুঃখ-কষ্ট ও যুদ্ধের মধ্যে জড়িত। তাঁর সুন্দর ও পবিত্রজীবন কাব্যময় ছিল না এর অবকাশ ও ছিল না। তবুও ক্ষনীকের জন্য হলেও তিনি কাবিতার প্রতি অনুরাগি ছিলেন। এর জন্য কিছু সময় ব্যয় করতেন। খেলোফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবীগণ ও কবিতা আবৃত্তি এবং কবিতার চর্চা করতেন।

তাই আমরা বলতে পারি আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) ছিলেন সর্বমানবীয় গুণাবলীর অপূর্ব সমাহার। তিনি কবি ছিলেন না, কিন্তু ছিলেন ভাল কবিতার গুণগ্রাহী সমঝদার। বারো শরীফের মহান ইমাম সূফী সাধক হযরত শাহ সূফী মীর মাস্উদ হেলাল (রঃ) ছিলেন, শিল্প, সাহিত্য ও সৌন্দর্যের গুণগ্রাহী সমঝদার। ১৯৫৮ সালে কবিতা আবৃত্তি করে প্রথম পুরস্কার পান। আমি মাঝে মধ্যে কবিতা লিখে উনাকে দিতাম। উনি পড়ে বলতেন সুন্দর হয়েছে। তারপর উনার খাদেম শরীফ ভাইকে বলতেন যেখানে চিঠিপত্র ও প্রয়োজনীয় কাগজ থাকে সেখানে রাখো। আর হাতে নিয়ে পবিত্র শাহাদ্ত আঙ্গুল দিয়ে ছুয়ে মুখে আঙ্গুলি চুম্বন দিতেন। ৪-৩-৮ ই তারিখে এ কবিতাটি উনাকে পড়ে শুনায়। শুনে কবিতাটির পঞ্চম লাইনে ‘মনবিনায়’ এর স্থানে ‘মন মন্দিরে বসে’, ষ্টষ্ঠ-লাইনে মনোহরণ করা সুর এর স্থানে ‘মন’ সুর বাসাতে বলেন।

কবিতাটি ঃ ‘ওগো! বলো ভুলি কেমনে তারে/যেজন মম্ মন মন্দিরে/বেঁধেছে বাসা/সে যে কেড়েছে মোর হৃদয় মন প্রাণ।/থেকে থেকে যখন সে মন মন্দিরে বসে/বাজায় মনো হরণ করা মনো সুর/বলো ওগো তখন কেমনে থাকি, আমি বসে/পারি না আমি এসব ছেড়ে চলে যেতে/যেখানে গিয়েছে সে সূর/ওগো বলো! ভুলি কেমনে তারে/যে প্রেমের তারে ধাধা এ বিশ্বের প্রতি অনুকনা/সেই (মোহাম্মদ সাঃ) প্রেমর মানুষেরে যে কেড়েছে মোর হিয়া”।

বলেছিলেন, সাহিত্য আমাদের দরকার। সেটা হতে হবে সুন্দর ও রুচি সম্পন্ন। শেখ সাদী (রঃ) এক জায়গায় বলেছেন, “কবির কবিতা ওহির অর্ধেক।’ কবিতা মনের খুরাক।

তিনি পবিত্র-ঈদে মিলাদুন্নবীর মিলাদ মাহ্ফিলের অনুষ্ঠানে ‘ফাতেহা-দোয়াজদহ্ম’ কবিতা আবৃত্তি করার নিয়ম করে গেছেন। আরও একটি কবিতা পরে যোগ করেন সেটা হল সোমালী কবি মোঃ আবুল হাসান লিখিত, সৈয়দ আলী হাসান অনুদিত কবিতা ঃ ‘হে পরমাশ্চর্য পুরুষ।”

লেখক : অবসর প্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন