শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

অভিযানে ভাটা, অভিনব পন্থায় আসছে মাদক

কামাল আতাতুর্ক মিসেল, ভ্রাম্যমাণ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

মাদক বিরোধী অভিযানে ভাটা পড়ায় হঠাৎ করে বেড়েছে মাদকদ্রব্যের অবৈধ ব্যবসা। দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়াবার দাম এখন বিত্তহীনদের নাগালের মধ্যে এসেছে বলেই ব্যবহার বেড়েছে। গত বছর মোট মাদকসেবীর মধ্যে ইয়াবায় আসক্ত রোগীর সংখ্যা যা ছিল এক বছরে বেড়েছে চারগুণ।
সরকারি রিপোর্ট বলছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ১৫টি স্থান দিয়ে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকার ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ ঘোষণা করেছে। এ সত্তে¡ও মাদকের ব্যবহার আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সরকারের মাদক বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৪ সালে উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ছিল ৬৫ লাখ ১২ হাজার ৮৬৯। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৫ সালে উদ্ধারকৃত ইয়াবার সংখ্যা ২ কোটি ১ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮১। ২০১৬ ও ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ২ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার ১৮৭ এবং ৩ কোটি ৮০ লাখ ৯১ হাজার ৮৬৫। এ থেকেই অনুমান করা যায়, ইয়াবার মাদকাসক্তির করাল গ্রাস কত দ্রæত বিস্তৃত হচ্ছে।
ইয়াবার উৎসভ‚মি মিয়ানমার। মাদকের আদান-প্রদানেও নিত্যপরিবর্তন আসছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে রোহিঙ্গাদের কারণে কিছুটা কড়াকড়ির পর মিয়ানমারের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত হয়ে সীমান্তপথে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক বাংলাদেশে ঢুকছে। ভারত থেকে অভিনব পদ্ধতিতে পেঁয়াজের ভেতরে করে ইয়াবার চালান আনা হচ্ছে। স¤প্রতি কুমিল্লা সীমান্তে এমন চালান ধরা পড়েছে।

কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা ধরনের মৌসুমী ফল তরমুজ, কাঁঠাল, লাউ, কুমড়ার ভেতর ঢুকিয়ে ভারত থেকে আনা হচ্ছে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য। ছোট-বড় নানা যানবাহনে করেও বিভিন্ন কৌশলে ভারত থেকে মাদক আসছে, যা পরবর্তী সময় ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। কুমিল্লার এই রোডকে এখন সবচেয়ে নিরাপদ হিসেবে মনে করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কুমিল্লা সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল, ইয়াবা, বিয়ার, বিভিন্ন ধরনের মদ, রিকোডেক্স সিরাপ, সেনেগ্রাসহ নানা প্রকার মাদক ও যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট এবং বিভিন্ন ধরনের নেশাজাতীয় ইনজেকশন।
অভিযোগ রয়েছে গুটিকয়েক মুখোশধারী সমাজসেবীদের সহায়তায় সড়ক পথ দিয়ে মাদকের বড় বড় চালান কুমিল্লা শহরে প্রবেশ করেছে। আর প্রতিনিয়ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে শহরের প্রধান প্রধান ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছার পর তা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। খুচরা বিকিকিনি ও এক জেলা থেকে অন্য জেলায় এই মাদক বিক্রি ও সরবরাহ কাজে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে শিশু কিশোর ও নারীদের। অভাবী ঘরের এ মানুষ গুলো মাঝে মধ্যে ধরা পড়লেও প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীরা থেকে যাচ্ছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

দেশে মাদকদ্রব্যের অবৈধ অর্থনীতির আকার বেশ বড়। মাদকের বড় ব্যবসায়ী পাঁচ হাজারেরও ওপরে। তাদের মধ্যে প্রভাবশালী ব্যক্তিই বেশি। মাদকের ক্যারিয়ার বা খুচরা বিক্রেতা আছে কয়েক হাজার।
মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিউটের অধ্যাপক ডা. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রধান তিনটি কারণে বাংলাদেশে মাদক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে চাহিদার সঙ্গে পর্যাপ্ত জোগান, মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত, কৌত‚হল এবং হিরোইজম। সরবরাহ বন্ধ করতে না পারলে ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না।
বাংলাদেশে মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। এর বাইরে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং কোস্টগার্ড মাদক।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা পাচার শুরু ২০০৬ সাল থেকে। ২০১২ সালে চীন ও থাইল্যান্ডের মধ্যে চুক্তির পর মিয়ানমারের মাদক উৎপাদনকারীদের জন্য ওই সব দেশে পাচার কঠিন হয়ে পড়ে। তখন তারা বাংলাদেশকেই মাদক পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে। এছাড়া ভারত সীমান্ত থেকে ফেনসিডিল ও অন্যান্য মাদক পাচার হয়ে আসে।
এ বিষয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ মাঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, কিছুদিন আগেও ইয়াবা ট্যাবলেট মিয়ানমার থেকে কক্সবাজার হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হতো। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে সরাসরি ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লায় হয়ে দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে। আমরা এখন সাপ্লাই চেইন ধ্বংসের জন্য সমন্বিত অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু মাদকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবেও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (3)
মোঃ তোফায়েল হোসেন ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
বেড়ায় যদি খ্যাত িখাই তাহলে কি হবে।
Total Reply(0)
জাবের পিনটু ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
প্রশাসনের লোক এর সাথে জড়িত
Total Reply(0)
কাজী হাফিজ ১৭ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪১ এএম says : 0
কঠোর অভিযান চালানো হোক
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন