শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আন্তর্জাতিক সংবাদ

সীমান্ত হত্যা: ভারত-বাংলাদেশ পাল্টাপাল্টি দোষারোপ কেন করছে

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ১:৪৫ পিএম

২০২০ সালের প্রথম মাসেই ভারত বাংলাদেশ সীমান্তে ১২জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।

ভারতের পক্ষে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রতিশ্রুতি থাকলেও সেটি বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।

সীমান্ত হত্যা নিয়ে দুদেশের সরকারি পর্যায়ে শীর্ষ বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা এবং বিজিবি বিএসএফ সম্মেলনে বার বার আলোচনা হলেও সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না।

ভারতীয়দের পক্ষে সীমান্তে প্রাণঘাতী অস্ত্রের ব্যবহার এবং মৃত্যু বন্ধে প্রতিশ্রুতি রয়েছে।

ভারত সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকেও অঙ্গীকার করা হয়েছিল যে সীমান্ত হত্যা শূণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, "সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে যখন প্রতিশ্রুতি আসে তখন এটা প্রত্যাশিত যে প্রতিশ্রুতিটা কার্যক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হবে। কিন্তু আমরা যেটা দেখছি যে গত প্রায় ২০ বছর ধরে, এ জায়গাটাতে প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তবায়নের সামঞ্জস্য দেখা যাচ্ছে না।"

বিজিবি কিংবা সরকারি পর্যায়ে বাংলাদেশের প্রতিবাদ, উদ্বেগ বা অনুরোধ যে খুব কাজে আসছে না, সেটি অনেকটা স্পষ্ট।

বাংলাদেশ সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
সমালোচনা হয় সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতের ওপর কতটা চাপ সৃষ্টি করতে পারছে সেটি নিয়েও।

"বাংলাদেশের যেকোনো মানুষের সুরক্ষা দেয়ার দায়িত্ব সরকারের। এখানে আমাদের কণ্ঠটা একটু সোচ্চার হলে হয়তো ভারতও একটু সক্রিয় হতো", বলেন হুমায়ুন কবির।

এদিকে গত পাঁচ বছরের মধ্যে ২০১৮ সালে সীমান্ত হত্যা কিছুটা কমলেও সেটি তিনগুন বেড়েছে ২০১৯ সালে।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ২০১৮ সালে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা ১৪জন, যেটি ২০১৯ সালে বেড়ে হয়েছে ৪৩জনে।

সংস্থাটির আরেক পরিসংখ্যানে দেখা যায় ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সীমান্তে ১৫৮ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে।

এ হিসেবে গড়ে প্রতি ১২ দিনে একজন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সিনিয়র উপপরিচালক নীনা গোস্বামী বলেন, সীমান্তে কেউ অপরাধ করলেও হত্যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

"এটা (সীমান্ত হত্যা) অবশ্যই শূণ্যের কোঠায় নেমে আসা উচিৎ। আমরা দেখতে চাই বর্ডার কিলিং একটাও নাই, এমন একটা পরিবেশ এবং সেইরকম একটা সুসম্পর্ক আমাদের প্রতিবেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে তৈরি হয়েছে।"

'আত্মরক্ষা'র যুক্তি বিএসএফ'এর
সীমান্তে গুলি এবং মৃত্যুর প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিএসএফ-এর যুক্তি আত্মরক্ষার।

ভারত এই হত্যাকাণ্ডগুলো কীভাবে দেখছে এবং বাংলাদেশের তৎপরতায় বিএসএফ কতটা চাপের মধ্যে থাকে - এ প্রশ্নে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি সমীর মিত্র বলেন, তাদের ওপর তেমন কোনো চাপ নেই।

"আত্মরক্ষার অধিকার তো সবার আছে। আজকে আমি ইউনিফর্মে আছি বলে আমার কোনো অধিকার নেই, মানুষের এমন ধারণা হলে সেটাতো দুর্ভাগ্য।"

"আমিতো বর্ডারে রয়েছি। যেখানে আমার কাটাতারের বেড়া কাটার চেষ্টা চলছে, সেখানে আমি অ্যাকশন না নিলে কালকে আমার বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেবে আমার প্রশাসন।"


তবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয় সীমান্ত হত্যার ঘটনায় বিএসএফ এর যুক্তি গ্রহনযোগ্য নয়।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিজিবির এক কর্মকর্তা বলেন চলতি মাসে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বেড়ে যাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন এবং প্রতিটি হত্যার ক্ষেত্রেই জোরালো প্রতিবাদ করা হচ্ছে।

ভারত বাংলাদেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধাবস্থা নেই বরং দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি আর সুসম্পর্ক নিয়ে এখন গৌরব করা হয়। অথচ মৃত্যুর হিসেবে বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী সীমান্তের অন্যতম কেন ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত, প্রশ্নটা এখানেই।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
** হতদরিদ্র দীনমজুর কহে ** ৩১ জানুয়ারি, ২০২০, ২:১৩ পিএম says : 0
সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে সরকারের কঠোর পদখ্খেপ নিতে হবে।আমাদের দেশের নাগরিকদের হত্যা করেই যাচ্ছে।কোন প্রতিবাদ নাই।
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন