নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের মহাসড়ক জুড়েই রয়েছে চোরাই তেল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট। একটি খুপড়ি ঘরের সামনে কিছু তেলের ড্রাম আর পাইপ ঝুলানো দেখলেই চুরি করে তেল বিক্রি করে দেয় অসাধু চালক। এসব অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙিয়ে একটি চাঁদাবাজ চক্র।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের তারাবো পৌর এলাকায় হাটিপাড়া রোলিং মিলের সামনে কয়েকটি খুপড়ি ঘরে দেদারছে চলছে চোরাই তেল বাণিজ্য। এখানকার হোসেন মিয়া ও তার ছেলে স্বপন, মাহফুজ ও তার ছেলে আরিফ অবৈধ তেল ব্যবসার পসরা বসিয়েছে। স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি ও পুলিশকে ম্যানেজ করে চক্রটি দীর্ঘদিন ধরে চোরাই তেলের ব্যবসা চালাচ্ছে।
মাঝে মধ্যে থানার মাসোয়ারা দিতে দেরি হলেই বন্ধ করে দেয়া হয় এসব দোকান এমনটাই দাবি অবৈধ তেল ব্যবসায়ী হোসেনের। একই চিত্র মহাসড়কের রূপসী, বরপা, গোলাকান্দাইলসহ ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বিভিন্ন স্পটে। প্রতিটি স্পটে এসব কারবার চলে গোপন লেনদেনের অলিখিত অনুমোদনে।
সবচেয়ে ভয়াবহ পরিবেশ পূর্বাচলে। রাজউকের নির্মাণাধীন পূর্বাচল নতুন শহর সীমানায় রয়েছে ৩শ’ ফুট খ্যাত সড়ক এবং ঢাকা বাইপাস এশিয়ান মহাসড়ক। ঢাকা বাইপাস মহাসড়কের গোলাকান্দাইল মোড় থেকে কালীগঞ্জের উলুখোলা পর্যন্ত রয়েছে ২৪টি খুপড়ি ঘর। এছাড়াও ৩শ’ ফুট সড়কে রয়েছে আরো ১৭টি দোকান। এসব ঘরে একই কায়দায় বড় তেলবাহী গাড়ি থেকে নামানো হয় বিপুল পরিমাণ তেল।
প্রতি রাতেই নামে লাখ টাকা মূল্যের ব্যারেল ব্যারেল তেল। এসব তেল যায় স্থানীয় বাজারে পাইকারি দরে। ভোজ্য ও জ্বালানি উভয় তেল নামানো হয় এ রোডে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈধ তেল ব্যবসায়ীরা। তবে রহস্যজনক কারণে বৈধ ব্যবসায়ীরা এসব অবৈধ দোকান বন্ধের দাবি তুলছেন না।
৩শ’ ফুট ও এশিয়ান মহাসড়কে এমন চোরাই তেল ব্যবসায়ীর মধ্যে রয়েছে- সুরিয়াবো এলাকার চোরা নাজমুল, হাবিবনগর এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ফয়সাল, সুরিয়াবোর হুসেন, ওমর ফারুক, কাঞ্চনের সামসুলের মালিকানায় মায়ার বাড়ি ও পূর্বাচলের লালমাটি, হঠাৎ মার্কেটের খুকুমনি, লালমাটির সজীব, রাজীব, মাঝিপাড়ার সুমন, সোলাইমান, কালনী স্ট্যান্ড এলাকায় মুহম্মদ আলী, মফিজুল, নাজমুল, পলখানের শরীফ, সোলমান, রাকিব, নীলা মার্কেট এলাকায় রতন, কাশেম, হাতিম।
সকাল থেকে শুরু করে রাত পর্যন্ত চলে এসব দোকানে প্রকাশ্যে চোরাই তেল নামানোর কাজ। অন্যদিকে এসব দোকান থেকে স্থানীয় হাট-বাজারে সরবরাহের দৃশ্যও চোখে পড়ে প্রকাশ্যেই। রহস্যজনক কারণে প্রশাসন ব্যবস্থা না নেয়ায় চোরাই তেলের রমরমা বাণিজ্য আরো প্রসারিত হচ্ছে। শক্তিশালী হচ্ছে তাদের সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ, কতিপয় ডিবি পুলিশের অসাধু সদস্য, স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা এসব স্পট থেকে নিয়মিত চাঁদা তুলেন। আর এ কারণেই অবাধে চলে এমন চোরাই তেলের বাণিজ্য।
সূত্র জানায়, মালামাল পরিবহনের মহাসড়ক হিসেবে পরিচিত ঢাকা বাইপাস মহাসড়কে চোরাই তেল ছাড়াও অন্যান্য পণ্য চোরাই সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্র প্রশাসনের অসাধু সদস্যদের ম্যানেজ করেই এসব ব্যবসা চালিয়ে আসছেন।
অভিযুক্ত চোরাই তেল ব্যবসায়ী নাজমুল বলেন, মালবাহী ট্রাকের চালক ও আমাদের উভয় পক্ষের সমঝোতায় টাকা দিয়ে তেল ক্রয় করি। এখানে চোরাই বলে কিছু নাই। তেল বিক্রির অনুমোদন আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, পূর্বাচলে ইয়াসিনের ছাড়া কারোই লাইসেন্স নাই। ডিপো লাইসেন্স একমাত্র ইয়াসিনের আছে। মাঝে মধ্যে আমরাও ইয়াসিনের মাধ্যমে বৈধ তেল দোকানে রাখি। তবে এসব দোকান চালাতে গিয়ে অনেককেই খুশি করতে হয়।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-১ সিপিসি ৩ এর কমান্ডার মেজর আব্দুল্লাহ আল মেহেদী বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এসব চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের খুপড়ি ঘর উচ্ছেদে উদ্যোগ নিয়েছি। একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এদের কাছ থেকে ভোজ্য ও জ্বালানি তেল উদ্ধার এবং ২২ চোরাই তেল ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছি। সেসব মামলা চলমান।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতাজ বেগম বলেন, খুব শিগগিরই এসব অবৈধ চোরাই তেল ব্যবসায়ী ও খুপড়ি ঘর উচ্ছেদে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। রূপগঞ্জ থানার ওসি মাহমুদুল হাসান বলেন, মহাসড়কের আশপাশে ও পূর্বাচলে কিছু অবৈধ চোরাই তেল ব্যবসায়ী রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে পুনরায় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় তিনি দাবি করেন, চোরাই তেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে থানা প্রশাসন কোন প্রকার অবৈধ লেনদেনে জড়িত নয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন