মঙ্গলবার ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৬ ভাদ্র ১৪৩১, ০৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সোনালি আসর

ঈদ ও বোধ

প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্বা ধী ন পা র ভে জ
ছোট্ট ফাইজার কাজ কারবার দেখে তাকে হিংসুটি মেয়ে বলা যেতেই পারে। কিপটুসও বটে! নিজের কোন খাবার কারো সাথে ভাগ করে খাবেনা সে। জামা কাপড়ও ছুতে দেবেনা কাউকে, এমনকি এত্তোগুলো খেলনা পাতি নিয়ে যখন বাড়ীর সকল বাচ্চারা উঠানের এক কোনে পেয়ারা গাছের ছায়ায় বসে খেলা করে তখনও অন্য বাচ্চাদের তার কোন জিনিষে হাত দেয়া নিষেধ। বোঝ ব্যাপারটা! কি দজ্জাল মেয়ে সে। এ নিয়ে ফাইজার আম্মু কি তাকে কম বকেছে? পিটুনিও দিয়েছে দু‘একবার। তবু সে বিরত থাকেনি এসব হিংসুটেপনা থেকে। এমনই পচাঁ তার স্বভাব।
সাতাশ রোজার দিনে বাড়ীর সকলের রাত জেগে জেগে ইবাদত বন্দেগী করার ধুম দেখে ফাইজাও মেতে উঠেছিলো অজানা আনন্দে। সেদিনের ইফতারীতে অন্য সকলের সাথে সে নিজেও বসে পড়েছিল একথালা বাহারী ইফতারী সামনে নিয়ে। বড়রা যা নিয়েছিল তার থেকেও বেশি খাবার নিজের প্লেটে তুলে নিয়েছিল সে। কিন্তু মাগরীব আজানের পর খাওয়া শেষ করে সবাই নামাজ পড়তে উঠে গেলেও অবশিষ্ট অনেক খানি খাবার নিয়ে সেখানেই বসে রইল ফাইজা। তার প্লেটে তখনও অনেকখানি খাবার রয়ে গেছে। কিন্তু ওর ছোট্ট পেটটিতে তো আর জায়গা নেই এতটুকুও, ফুলে ফেপে টনটন করছে সেটি। কিছুতেই আর খেতে পারছিলোনা সে। রাগে দুঃখে তার কান্না চলে এলো। বড়রা সবাই যে যার মতো করে চেটে পুটে খেয়ে উঠে চলে গেছে আর সে কিনা এত্তোগুলো খাবার নিয়ে একলা একা বোকার মত বসে আছে?
কি করবে সে ভেবেই পাচ্ছিলোনা যেন।
এমন সময় হঠাৎ তার নজরে পড়লো বাড়ীর কাজের মহিলা রাশেদা এবাড়ীর ইফতারীর কাজকর্ম শেষ করে তার ছোট্ট মেয়ে আফসানা কে কোলে নিয়ে নিজ বাড়ীতে ফিরে যাচ্ছে। উপায়ন্ত না দেখে সে রাশেদাকে ডাক দিল। ওরা কাছে আসলে সে আফসানাকে তার প্লেটের বাকী ইফতারী টুকু খাওয়ার আমন্ত্রণ জানালো। তার কথা শুনে তো আফসানা মহাখুশি! আনন্দে মেয়েটির দু‘চোখ চিকচিক করে উঠলো। মায়ের গা বেয়ে হুড়মুড় করে নিচে নেমে এসে ছুটে গিয়ে ফাইজার পাশে দাঁড়ালো সে। মেয়েটির খুশি দেখে ফাইজা তো হতবাক! এইটুকুন উচ্ছিষ্ট খাবার পেয়েও মানুষ এতোবেশি আনন্দিত হতে পারে? সে একমনে বসে বসে মেয়েটির খাওয়া দেখলো। প্রতিটা খাবার মুখে দিচ্ছিল আর অপার আনন্দে টুইটম্বুর হয়ে উঠছিলো আফসানার মুখ।
সবটা খাওয়া শেষে মেয়েটি যে কি দারুণ সন্তুষ্ট আর কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল ফাইজার দিকে! ফাইজা এর আগে এতো সুন্দর করে কাউকে তাকাতেই দেখেনি। সত্যিই। ফাইজা মুগ্ধ হয়ে গেল। আনন্দে মন ভরে সেখানেই গুমমেরে বসে থাকলো অনেক্ষন।
সেদিন রাতেই ছোটমামা এসেছিল ওর জন্য দারুন একসেট রঙ্গীন পোষাক নিয়ে। ঈদের কাপড় তো তাকে বাবাও দিয়েছিল। আরেক সেট কিনে দিয়েছিল দাদু। সব মিলে তার তিন তিন সেট নতুন কাপড় জমে গেল। অন্যদিন হলে সে খুশিতে ফেটে পড়ত। কাউকে ছুতেও দিতোনা এগুলো। কিন্তু সেদিন ফাইজা এতো খুশির মধ্যেও আপন মনে কি যেন ভাবছিল। খুউব ভাবছিল।
ভেবে ভেবে অবশেষে মায়ের কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে কোমরে হাত দিয়ে বেশ পাকা পাকা ভঙ্গিতে বলেছিল- আম্মুগো শুনো, আমার তো এত্তোগুলো কাপড় চোপড়। আব্বু কিনেছে, দাদু দিয়েছেন, আবার মামাও এনেছেন। এতো কাপড় জমিয়ে না রেখে এখান থেকে একটা কাপড় আফসানাকে দিয়ে দিই? দেখবে ও কত্তো খুশি হবে।
মেয়ের কথা শুনে ফাইজার মা তো তখন একদম তাজ্জব বনে গিয়েছিল। অনেক্ষণ তো অবিশ্বাসী ভঙ্গিতে তাকিয়েই ছিলেন এক দৃষ্টিতে। তারপর ঘোর কেটে গেলে ছুটে এসে মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে একশো একটা চুমু খেয়েছিলো। অনেক আদর করেছিলো।
ফাইজার তখন কি যে ভাল লাগছিল! সেই খুশিটা তো ও বলেই বোঝাতে পারবেনা।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন