শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ইসলামী জীবন

মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা দেশের ভাবমুর্তি উজ্জ্বল করছে

ইসমাইল মাহমুদ | প্রকাশের সময় : ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২০, ১২:০৩ এএম

মাদরাসা শিক্ষা সমাজ সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। মাদরাসায় লেখাপড়া শেষান্তে বা মাদরাসা শিক্ষা শেষ করে সরকারি বা বেসরকারি চাকুরীতে যোগদান করে ঘুষ-দুর্নীতির সাথে কেউ জড়িত হয়েছেন এমন রেকর্ড খুব একটা নেই। কিন্তু সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় ভুরিভুরি। এরপরও মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ বা না জানা ব্যক্তিদের অভিযোগ অনেক। এসব অজ্ঞ ব্যক্তিদের প্রধান প্রধান অভিযোগগুলো হলো মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা নাকি অনেকাংশে বেকার; মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয়; মাদরাসা পড়–য়া শিক্ষার্থীরা ইংরেজি ভাষায় দুর্বল, মাদরাসায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর শিশুরা বা গরীবরা পড়ালেখা করেন ইত্যাদি। মাদরাসা শিক্ষা বা মাদরাসার শিক্ষার্থীদের সম্পর্কে এ ধরণের মন্তব্য যিনি বা যারা করেন তারা কার্যত মুর্খ।

পৃথিবী সৃষ্টির পর প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থা যে পাঠশালার মাধ্যমে দ্বারদ্ঘোটন হয়েছিল সেটিই হলো মাদরাসা। মহানবী হজরত মোহাম্মদ (সা.) পৃথিবীতে আদর্শ সমাজ গঠনের লক্ষ্যে মাদরাসা শিক্ষার মাধ্যমে উত্তম চরিত্রের দেশপ্রেমিক জনগণ তৈরির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সে সময় থেকে অধ্যাবদি মাদরাসার সুশিক্ষা আদর্শ ও উত্তম চরিত্রবান মানুষ তৈরির ক্ষেত্রে অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। আমাদের দেশ ও মুসলিম বিশ্বের সাধারণ মানুষের মধ্যে অধিকাংশই সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত। তথাপি সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত মানুষও মাদরাসা শিক্ষায় সহায়তার হাত প্রসারিত করতে পিছু পা হন না। মাদক, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, অনাচার, অনিয়ম প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী মাদরাসা শিক্ষায় সাধারণ মানুষ অর্থায়ন এবং মাদরাসা তৈরি করে চলেছেন।
এবার আশা যাক দেশের বেকারত্ব সম্পর্কে। মাদরাসা শিক্ষা সম্পর্কে অজ্ঞ ব্যক্তিদেও অভিযোগগুলোর মধ্যে একটি হলো মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিতরা অনেকাংশে বেকার। আসলেই কি তাই? জেনে নেই বাস্তবতা কি বলে। এ বিষয়ে ২০১৪ সালের ৩ মার্চ জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকীয়’র প্রতি দৃষ্টি ফেরাতে চাই। ওইদিন পত্রিকাটির সম্পাদকীয়’র শিরোনাম ছিল ‘শিক্ষার নামে বেকার তৈরি’। এটির মূল বক্তব্য ছিল, ‘সাধারণ শিক্ষা অর্থাৎ কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়–য়া শিক্ষার্থীদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শিক্ষা জীবন শেষ করার পর বেকার থাকছে। আলোচ্য সম্পাদকীয়তে মাদরাসাকে বেকার তৈরির কারখানা বলা হয়নি। বলা হয়েছে সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার নামে বেকার তৈরি করে। ব্রিটেনের সাময়িকী ‘ইকোনমিস্ট’র এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতি ১০০ জন স্নাতক ডিগ্রিধারীর মধ্যে ৪৭ জনই বেকার। এছাড়া ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, বেকারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন চিকিৎসক ও প্রকৌশলী। এ দুই শিক্ষায় শিক্ষিত বেকারের হার ১৪.২৭ শতাংশ।
অন্যদিকে বিভিন্ন সংস্থার গবেষণা বলছে, সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে বেকারত্বের গ্লানি টানতে টানতে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ-তরুণী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ প্রচ্যের অক্সফোর্ড নামে খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে স্নাতকোত্তর পাস করে চাকরি না পেয়ে আত্মহনন করেছিলেন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার একতারপুর গ্রামের আব্দুল খালেকের ছেলে তারেক আজিজ। এ ঘটনা সে সময়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। এ বিষয়ে ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি জাতীয় দৈনিক আমাদের সময়’র একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল ‘২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাস করে করে চাকরী না পেয়ে ১৪ জন ছাত্র-ছাত্রী আত্মহত্যা করেছেন। এসব তথ্য-উপাত্ত্ব সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের নিয়ে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে মাদরাসা থেকে কামিল কিংবা দাওরায়ে হাদিস পাস করে চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করছেন কোন শিক্ষার্থী এমন নজির আজ পর্যন্ত নেই। মাদরাসা থেকে কামিল কিংবা দাওরায়ে হাদিস পাস করা ব্যক্তিরা ব্যাংকসহ নানা প্রতিষ্ঠানে সাফল্যের সাথে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। এছাড়া মাদরাসায় শিক্ষকতা, মসজিদের ইমাম বা মুয়াজ্জিন হিসেবে চাকরী করে কিংবা বৈধভাবে ব্যবসা করে সংসার চালিয়ে আসছেন। সামান্য উপর্জনেই তাঁরা চরম তৃপ্ত। কারণ মাদরাসায় পড়–য়ারা ছোটবেলা থেকেই সৎ ও মিতব্যয়ী জীবনযাপনে নিজেদের তৈরি করে নিচ্ছে।
মাদরাসায় জঙ্গি তৈরি হয় বা জঙ্গিবাদকে উস্কে দিচ্ছে এমন কথা প্রায়ই আমাদের শুনতে হয়। মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থ সম্পর্কে যারা অজ্ঞ তারা এসব কথা ছড়িয়ে নিজেদের বুদ্ধিজীবি হিসেবে জাহিরের চেষ্টা করেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে জঙ্গিবাদের সাথে মাদরাসা শিক্ষার ন্যূনতম সম্পর্ক নেই। ইতোমধ্যে দেশে যতগুলো জঙ্গি হামলা হয়েছে এবং যারা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে আটক হয়েছে তাদের কেউই মাদরাসার শিক্ষার্থী ছিলো না। সকলেই ছিলো সাধারণ শিক্ষায় উচ্চ শিক্ষিত এবং ধর্ণাঢ্য পরিবারের সন্তান। যারা জঙ্গি হিসেবে আটক বা নিহত হয়েছেন তারা প্রায় সকলেই লেখাপড়া করেছেন দেশে-বিদেশের নামিদামি স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে। হলি আর্টিজেন ও শোলাকিয়া ঈদগাঁহ হামলাকারী জঙ্গিরা ছিলো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তাদের কেউই মাদরাসা শিক্ষার্থী ছিলো না। তারপরও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে কেউ কেউ মুখে খই ফুটিয়েছেন।
মাদক আমাদের দেশের একটি বড় সমস্যা। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক ব্যবসা ও মাদকসেবীদের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। আমাদের দেশে মাদকসেবীদের শতকরা ৭৫ শতাংশই কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বাকিরা অশিক্ষিত বা স্বল্প শিক্ষিত। অতি সম্প্রতি কক্সবাজারে ছেলে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী মাত্রাতিরিক্ত ইয়াবা সেবনে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ ধরণের অসংখ্য ঘটনা আমাদের দেশে ঘটেই চলেছে প্রতি বছর।
২০১৭ সালের ৪ নভেম্বর একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘ঢাবি-বুয়েট মাদকের আখড়া’। ওই বছরের ১৬ মার্চ অপর একটি জাতীয় দৈনিকের একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, ‘দেশের মোট ইয়াবা আসক্তদেও ৪০ শতাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ১০ হাজার নারী শিক্ষার্থীসহ দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থী ইয়াবা সেবন করেন। এঁদের প্রায় ৭০ শতাংশই উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান।’ কিন্তু আজ পর্যন্ত মাদকের বিষাক্ত ছায়া মাদরাসায় পৌছতে পারেনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
Md. Shafiqul Islam ৪ মার্চ, ২০২০, ৪:১৬ পিএম says : 0
100% Right
Total Reply(0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন