শিশু মো. ইব্রাহিমের বয়স নয়। সরাইল থানা পুলিশের কর্মকর্তার বদৌলতে মারধোরের মামলার আসামি সে। বাবা-মা ও চাচীর সাথে কয়েকবার আদালতে গিয়েছে জামিন প্রার্থনায়। ওসি বলেন বিষয়টি ফালতু, তবে পুলিশের প্রতিবেদনে তার বয়স দেখানো হয়েছে ২২ বছর। শুধু তাই নয় এ.এস.আই মো. হেলাল চৌধুরী জেলে থাকা আবদুস সাত্তার আর তার ছেলে মো. জাবেদকেও আসামি করা হয়েছে। আবদুস সাত্তারের পুরো পরিবারকেই তদন্ত না করে আসামি বানিয়েছেন ওই দারোগা।
এ ঘটনায় এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২৩ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্র্রেট আদালতে মামলা (সিআর-৮৪/২০২০) দিয়েছেন আবদুস সাত্তার। এছাড়াও তার ছোট ভাইয়ের স্ত্রী শাহেনা বেগমকে আসামি করেন এ মামলায়। আদালত মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে।
মামলার আর্জিতে বলা হয়, আবদুস সাত্তারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৫ অক্টোবর সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে শাহেনা বেগম একটি মিথ্যা অভিযোগ দেন। থানায় পাঠালে ওসি তা ডায়েরিভূক্ত (নং ৬৮১/১৯) করে এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন।
অভিযোগটি যখন থানায় দেয়া হয় তখন জেলে ছিলেন আবদুস সাত্তার ও তার ছেলে জাবেদ। ওই থানার এসআই রফিকুল ইসলাম শাহেনার দায়ের করা আরেক মামলায় (সরাইল থানার মামলা নং-৩৩, তাং ২৮.০৯.২০১৯) তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে ৭অক্টোবর আদালতে সোপর্দ করেন। ২৪ অক্টোবর জামিনে মুক্তি পান তারা। আর্জিতে আরো বলেছেন, জেলে থাকার বিষয়টি এএসআই হেলালকে বারবার বলা হলেও সেটি তিনি শুনেননি। গালিগালাজ করেন। ২৫ নভেম্বর এএসআই হেলাল আদালতে অভিযোগটির একটি প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে হেলাল চৌধুরী বলেন, আদালতের অনুমতি পেয়ে অধিকতর তদন্ত করে শিশু ইব্রাহিমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে পেনাল কোডের ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধ করার সত্যতা পান। তাদের বিরুদ্ধে সরাইল থানায় নন এফ.আই.আর প্রসিকিউশন নং ৬৫/১৯,তাং ১৭/১১/২০১৯ইং দাখিল করেন।
জানা গেছে, ইউএনও’র কাছে অভিযোগকারী শাহেনা বেগম আবদুস সাত্তারের ছোট ভাই সউদী প্রবাসী ছায়েদ মিয়ার স্ত্রী। গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর নলকূপের পানি ব্যবহার করা নিয়ে শাহেনার সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হন তার জা আবদুস সাত্তারের স্ত্রী নূরজাহান বেগম। এ ঘটনায় শাহেনা ৯ জনকে এজাহারনামীসহ ২/৩জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ২৮ সেপ্টেম্বর একটি মামলা দেন। এতে আবদুস সাত্তারসহ তার পরিবারের ৮ জনকে আসামি করা হয়। এরা হচ্ছেন আবদুস সাত্তার, তার স্ত্রী নুরজাহান বেগম, ছেলে জাবেদ মিয়া, আজিজ মিয়া, ইয়াদুল, মেয়ে রোজিনা বেগম, আরজিনা বেগম, শারমিনা বেগম এবং আরেক ভাই আবুল কাসেমের স্ত্রী শমলা বেগমকে আসামি করা হয়। তাদের সবার বয়স বাড়িয়ে উল্লেখ করা হয় মামলায়। আবুল কাশেম ভাই সাত্তারের পক্ষ নেয়ায় তার বিরুদ্ধে ৯ নভেম্বর সরাইল থানায় শাহেনা বেগম ধর্ষণ চেষ্টার মামলা দায়ের করেন।
সরেজমিনে টিঘর গ্রামে গেলে গ্রামের লোকজন জানান, এসআই রফিকুল ইসলাম এবং এএসআই মো. হেলাল চৌধুরীর সঙ্গে শাহেনা বেগমের রয়েছে সখ্যতা। কর্মকর্তারা তার বাড়িতে আসা যাওয়া করেন। বাড়ি থেকে খাবার রান্না-বান্না করে থানায় নিয়ে যান। অভিযোগ এসআই ও এএসআই’র প্ররোচনাতে শাহেনা ধারাবাহিক মামলা দিতে থাকেন নিজের ভাসুর, জা ও তাদের সন্তানদের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে মামলা জালে পড়ে দরিদ্র ওই দুই পরিবারের লোকজন উপোসে দিন কাটাতে হচ্ছে। পুলিশের ভয়ে পরিবারের আয় রোজগারী লোকজন পালালে আহারের সংস্থান বন্ধ হয়ে যায় দুটি পরিবারের। আবদুস সাত্তার ১৭ থেকে ১৮ দিন জেল খাটেন। আবুল কাসেমের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর বাড়ি ছেড়ে পালায় সে।
তার স্ত্রী সমলা জানান, হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে বাড়িতে আসার পর শাহেনা পুলিশ নিয়ে আবার তাকে ধাওয়া দেয়। ৫ সন্তান নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে এখন তাদের। শাহেনার শাশুড়ী আলেয়া খাতুন বলেন, শাহানা আর নূরজাহানের মধ্যে চুলাচুলি অইছে। আর কেউ’র দোষ নাই। আমার ছেলে কাসেম মীমাংসা কইরা দিতে চাইছিন। এর লাইগা হের বিরুদ্ধে মামলা দিছে।
শাহেনা বেগম বলেন, তার মেয়ে সোমায়া ও আবদুস সাত্তারের মেয়ে আরজিনার মধ্যে ওজু করার সময় ঝগড়া হয় এবং হামলা চালানো হয়। শাহেনা মারধোরে জখমের কথা বললেও সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রের ডাক্তারী রিপোর্টে তার শরীরের মধ্যে আঘাতের কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছেনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এএসআই হেলালের বিরুদ্ধে এই ঘটনাটি ছাড়াও আছে আরো অনেক অভিযোগ।
এবিষয়ে এএসআই মো. হেলাল চৌধুরী সঙ্গে কথা বলার জন্যে তার মোবাইলে ০১৮৫২৬৩০০.. নম্বর একাধিকবার ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেন টিটো বলেন, বাদী-স্বাক্ষী যদি কোন ভুল তথ্য দেয়, আইও যদি সেটার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করে এটা কি মামলা হয় নাকি? এটা তো মামলা হওয়ার বিষয়ই না। ফালতু বিষয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন