র হি মা আ ক্তা র মৌ
রোজার মাত্র চার দিন বাকি। নীলাঞ্জনা যাচ্ছে মায়ের বাড়ি। গ্যারেজে দাঁড়িয়ে আছে তুলতুলি। সেই একই কথা,,,
-- আফা কই যান?
-- মায়ের বাসায়। তুই যাবি?
-- না গো আফা। মায় কইছে আমারে বারি পাঠাইয়া দিব।
-- আরে দূর এমনিতেই বলেছে। আসলে পাঠাবে না। তুই দুষ্টামি করিস তাই বলে।
-- আফা আইবেন কহন।
-- বিকালেই আসব।তোর নানীকে বলবি সন্ধার পর আসতে।
-- ঠিক আছে আফা।
কথাটা বলেই তুলতুলি দৌড়ে চলে যায়। বিকেল গেলো, রাত গেলো, পরদিন পুরোটা গেলো। নীলাঞ্জনার কোন খবর নেই।এই ফাঁকে তুলতুলি আর ওর নানী কয়েকবার এসেও খোঁজ পায়নি।
সন্ধার ঠিক আগে আগে গাড়ি এসে গ্যারেজে থামে। তুলতুলি দৌড়ে আসে। কিন্তু গাড়ি থেকে নীলাঞ্জনা নামেনি। ফিরে যায় নানীর কাছে।
---নানী নানী গাড়ি তো আইল। কিন্তু আফাতো আইল না।
কিছুক্ষণ পর তুলতুলির নানী রাহেলা আসে নীলাঞ্জনার বাসায়। শুনতে পায় নীলাঞ্জনার দুর্ঘটনার খবর। নীলাঞ্জনা আসতে আসতে রাত দশটা বাজবে।
রাত দশটা ওকে বাসায় নিয়ে আসে। মিনিট পাঁচ/সাত এর মাথায় তুলতুলি নানীর হাত ধরে নীলাঞ্জনার বাসায় আসে। অসুস্থ নীলাকে দেখেই তুলতুলির মন খারাপ হয়ে যায়। ওর নানী কত কথা বলছে, ও কিছুই বলছে না। একেবারেই চুপ হয়ে আছে।
--কিরে আমি কাল আসিনি বলে চিন্তা করেছিস।
মুখটা পুরো অন্ধকার হয়ে আছে তুলতুলির। জবাব নেই।
--আরে মন খারাপ করিস না। আমি তো মায়ের কাছেই ছিলাম। এই যে চলে আসলাম। এবার একটু হাসি দে।
তাতেও কথা নেই তুলতুলির।
আঁখি নীলাঞ্জনার মায়ের বাসায় থাকে। মেয়ের এই অবস্থা দেখে আঁখিকে সাথে পাঠিয়ে দেয় মেয়ের সেবাযতœ করার জন্যে। এই ফাঁকে আঁখি রান্নার কাজ সেরে নেয়। নীলাঞ্জনার জন্যে প্লেটে করে খাবার আনে। বড় বোয়াল মাছ রান্না করেছে আজ।
---কিরে তুলতুলি ভাত খেয়েছিস।
তুলতুলির নানী বলে,,,
---এখনো খায়নি। খেতে বলেছি। কেবল বলে পরে খাব, পরে খাব।
নীলাঞ্জনা আঁখিকে ডাকে, বলে,,,,
--একটা ছোট বক্সে দুই পিস মাছ দাও তো।
আঁখি নিয়ে আসে। বক্সটা তুলতুলির নানীর হাতে দিয়ে বলে,,,
--যাও, ওকে ভাত খাওয়াও।
সামান্য কিছুক্ষণ থেকে তুলতুলি নানীর হাত ধরেই চলে যায়।
প্রতিদিন না আসলেও দু-তিন দিন পর আসে তুলতুলি, দেখে যায় ওর আফাকে। গতবছর রমজানের প্রথম সপ্তাহেই নীলাঞ্জনা তুলতুলি আর ওর ভাইদের জন্যে ঈদের পোশাক নিয়ে আসে। কিন্তু এবারতো তা হবে না। দুই-চার করে করে দশ রোজা চলে গেলো। নীলাঞ্জনা পুরো বিছানায়। কারো জন্যেই শপিং হয়নি। কবে হবে তাও কেউ জানে না।
তুলতুলি বাসায় এলে কিছুক্ষণ নীলাঞ্জনার পাশে বসে গল্প করে। কিছুক্ষণ টিভি দেখে চলে যায়।
--কিরে তুলতুলি ঈদ করবি কোথায়?
--নানী বলছে বাড়ি যাবে। আমায় নিয়ে যাবে।
--ঈদের জামা কিনেছিস।
তুলতুলি চুপ, কোন কথা নেই।
--কিরে মার্কেটে যাবি না। নতুন জামা কিনবি না।
--নানা কইছে দিব। মা কইছে ঈদের আগে আগে যাইব, আমি ও যামু।
--তাই, তাহলেতো ভালোই। আমারটা নিবি না।
--না, আফনে এবার অসুখ করছে। আফনে দিবেন কেমনে। যাবেন কেমনে।
--দূর, কে বলছে তোকে, মার্কেটে না গেলেও জামা কেনা যায়।
--হ আফা ঠিক কইছেন। ওই যে নতুন বারির ডাক্তার আফা আছে না। হেরে দেখছি ঘরে বইসাই কত্ত জামা কিনলো।
--তাই নাকি? এইতো তুই সব জানিস। শুন কালকেই তোর নানীর সাথে মার্কেটে যাবি। আমি টাকা দিব। নিজে পছন্দ করে জামা কিনবি। কি ঠিক আছে তো।
তুলতুলি চুপ। ওর নানী আসে রুমে।
--রাহেলা এই নাও টাকা। কাল মার্কেটে যাবে, তুলতুলি আর তোমার বাকি নাতীদের জন্যে ঈদের জন্যে নতুন জামা কিনবে। গতবার আমি ভালো ছিলাম, এবারতো আর তা হবে না। তুলতুলির জামাটা রঙ্গিন দেখে কিনবে কিন্তু ওর পছন্দেই কিনবে।
দুদিন পর সন্ধ্যায় তুলতুলি দুটো প্যাকেট নিয়ে আসে।
--আফা আফা, দেখেন আমার নতুন জামা।
--তোর পছন্দ হইছেরে তুলতুলি।
--হ আফা, আমি নিজেই পছন্দ করে কিনেছি। আফনারে একটু পইরা দেহাই।
--থাক থাক, আজ না, ঈদের দিন দেখব।
--আফা কন কি, আই তো নানীর লগে বারি যামু। আফনে দেকবেন কেমনে।
তুলতুলি নতুন জামাটা পড়ে দেখায়। ঘুরে ঘুরে আয়নার সামনে যায়। বারবার নিজেকে দেখে। নিজেকে দেখেই লজ্জা পায়। নীলাঞ্জনা বুঝে এ লজ্জা আসলে লজ্জা নয়। এ লজ্জা সুন্দরের লজ্জা। আয়নায় তুলতুলিকে অনেক সুন্দর দেখাচ্ছে। এখন তুলতুলির মুখে অন্ধকার ছাপটা নেই।
--কিরে তোর কি মন ভালো।
-- হ্যে, আমার মন সব সময় বালা।
--ঠিক আছে। জামাগুলো নিয়ে যা। তোর মাকে বলবি রেখে দিতে।
জামার প্যাকেট দুটা দুই হাতে নিয়ে ও নাচতে নাচতে যায় আর গান গায়,,,
ময়না রে ময়না রে,,,,,,,
নীলাঞ্জনার মুখে হাসি ভেসে উঠে, যাই হোক আর কারো হোক বা না হোক তুলতুলির তো মন খারাপ দূর হলো। এক জীবনে একটি মুখের হাসি কম কিসের।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন