একের পর এক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির মহোৎসবের তথ্য প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু প্রতিটি ঘটনায় নির্বিকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি মন্ত্রণালয়। বঙ্গবন্ধুর ছবি টিস্যু বক্সে ছাপিয়ে এবং স্কুল নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণে শত শত কোটি টাকা লোপাট হলেও এখনো বহাল তবিয়তে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। শিক্ষা কর্মকর্তাদের অভিযোগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ মহলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এসব কর্মকর্তা দুর্নীতি, অনিয়ম করেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন। তথ্য-প্রমাণসহ সবকিছু প্রকাশ হলেও এখনো তদন্ত কমিটি পর্যন্ত গঠন করেনি মন্ত্রণালয়। উল্টো দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রথম কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে গত ২৯ ফেব্রুয়ারি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতির মুখোশ পরে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে বরণ করে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রীকে বরণ করে নেয়ার এমন ছবি গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে সমালোচনার ঝড় শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী সভার বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর এমন অনুষ্ঠানে বিরক্ত ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এর পরেই গত ৫ মার্চ টিস্যুবক্সে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। এই ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করার ঘোষণা দিলেও ৪ দিনেও কমিটি করেনি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই মাঝে আবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতির পুকুর চুরির তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। রাজধানীর আশপাশে ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় নির্মাণে দুর্নীতির মহোৎসব হয়েছে। ৬৭৩ কোটি টাকায় রাজধানীর আশপাশের ১০টি স্কুল নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। চলতি বছর প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ১ ভাগও কাজ হয়নি। অথচ ব্যয় বাড়ানো হয়েছে আরও ৫০০ কোটি টাকা। শত শত কোটি টাকা যাচ্ছে কোথায়? অনুসন্ধানে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণ করার নামে আর গাছ কেনার নামে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। যেখানে, ২১টি নারকেল গাছের দাম ১৩ কোটি টাকা, একটি কলাগাছের দাম ৬ লাখ টাকা, দুটি টিনের ছাপড়ার দাম ৬ কোটি টাকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের স্কুল নির্মাণ প্রকল্পে এভাবেই চলছে দুর্নীতির মহোৎসব। এই প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক আমিরুল ইসলাম। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আমিরুল ইসলাম একাই এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেনি। এর সাথে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের লোকজনও জড়িত রয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের একজনের ভাইয়ের মাধ্যমে ভাগাভাগি হয়েছে লুটপাটের অর্থ। একারণে দুর্নীতির সমুদ্র চুরির তথ্য প্রকাশ পাওয়ার পরও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং বহাল তবিয়তেই অফিস করছেন আমিরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার এলাকার বিলাবাড়িয়া মৌজায় একটি স্কুলের জায়গা অধিগ্রহণের জন্য দেখানো হয়েছে ৮১ কোটি ৮২ লাখ ৭৮ হাজার ৬৮ টাকা। এর মধ্যে গাছপালা ও অবকাঠামোর দাম দেখানো হয়েছে ১৩ কোটি টাকা। তবে সেখানে নেই কোন অবকাঠামো। যেসব নারকেল গাছ রয়েছে সেগুলোর দাম ১৩ কোটি টাকা। একেকটি গাছের দাম পড়েছে ৬১ লাখ ৯০ হাজার ৪৭৬ টাকা। প্রকল্পের আরেকটি স্কুল হবে আশুলিয়ার পাথালিয়া ও বাশবাড়ি মৌজায়। সেটি স্থাপনের জন্য জমির ওপর নির্মিত অবকাঠামোর দাম ধরা হয়েছে ৬ কোটি টাকা। অথচ বাস্তবে অবকাঠামো বলতে সেখানে আছে শুধু দুটি টিনের ছাপড়া। বাড্ডা এলাকার জেয়ার-সাহারা এলাকায় একটি স্কুল জমি অধিগ্রহণের জন্য ব্যয় দেখানো হয়েছে ৩৬৫ কোটি ৭৩ লাখ ৭৩ হাজার ২০০ টাকা। গাছপালা ও অবকাঠামো বাবদ ব্যয় ৬০ কোটি টাকা। অথচ ওই স্থানটিতে অবকাঠামো বলতে শুধু ১৫টি কড়ই গাছ রয়েছে। ১৫টি কড়ই কাছের মূল ৬০ কোটি টাকা। প্রতিটি কড়ই গাছ ৪ কোটি টাকা। ধামরাইয়ের লাকুরিয়াপাড়া মৌজাতে একটি স্কুল। জমি কেনা ও অবকাঠামো বাবদ ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা। জমির গাছপালা ও অবকাঠামো বাবদ ব্যয় ৪ কোটি টাকা। সেখানে কয়েকটি টিনের ছাউনি ছাড়া কোন গাছ নেই। এগুলোর দামই ৪ কোটি টাকা। এই সময়ে প্রকল্প পরিচালক আমিরুল ইসলাম প্রকল্প ব্যয় বাড়িয়ে করেছেন বাড়ি, গাড়ি, প্লট। ১২টি প্লট ও তার ওপর কয়েকটি বাড়ি। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান। #
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন