শনিবার সউদী রাজ পরিবারের ৪র্থ প্রবীণ সদস্য এবং সউদী সিংহাসনের প্রাক্তন দাবিদার যুবরাজ আহমেদেকে আটকের মধ্য দিয়ে সউদী রাজপরিবারে আটকাভিযান সম্প্রসারিত হয়েছে বলে জানিয়েছে নিউইয়র্ক টাইম্স। যুবরাজ আহমেদ বিদেশে পাখি শিকারের প্রমোদ ভ্রমন থেকে ফিরে আসার ঠিক কয়েকদিন পরেই এই সপ্তাহে নতুন আটকাভিযানের ধাক্কা আসে। এ সময় তার পুত্র যুবরাজ নায়েফ তার সাথে ছিলেন বলে পরিবারের এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি শনিবার জানান।
সউদী সিংহাসনের অন্যতম প্রাক্তন দাবিদার এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার সাথে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপনকারী সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন নায়েফকেও শুক্রবার আটক করা হয়। ২০১৭ সালে যুবরজ সালমান তাকে পূর্বের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরে বিন নায়েফকে গৃহবন্দি করা হয়। তার ছোট ভাই যুবরাজ নওয়াফ বিন নায়েফকেও নিরাপত্তারক্ষীরা আটক করে। পরিবারের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মতে, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইতিমধ্যে তার বৃদ্ধ পিতা বাদশাহ সালমানের নামে রাজ্যের ভারপ্রাপ্ত শাসক হিসাবে তার ক্ষমতা একীভ‚ত করছেন। তবে নতুন আটকাভিযান প্রমান করেছে যে যুবরাজ মোহাম্মদ বাদশাহ হওয়ার পথে সম্ভাব্য বাধা নির্মূলে কতোটা কঠোরভাবে ত্রাসের সৃষ্টি করতে পারেন।
পরিবারের আটককৃত সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ প্রিন্স আহমেদ বিন আব্দুল আজিজ, যুবরাজ নায়েফের পিতা এবং বাদশাহ সালমানের সর্বশেষ জীবিত আপন ভাই। পিতা ও পুত্র উভয়ের গ্রেপ্তারই রাজপরিবারকে হতবাক করেছে কারণ যুবরাজ আহমেদের সাথে বাদশাহের এতদিনের ঘনিষ্ঠতা তাকে পরিবারের সদস্যদের প্রতি যুবরাজের রোষ থেকে রক্ষা করে আসছিল।
একের পর এক আটকের ঘটনা রাজপরিবারের মধ্য থেকে সিংহাসন দখলের ষড়যন্ত্রের বিষয়ে যুবরাজ মোহাম্মদের ভয়কে স্পষ্ট করে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তিনি সম্ভবত তার পিতার কাছ থেকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা অধিগ্রহনের পথে সমস্ত বিরোধীদের নির্মূল করার পাঁয়তারা করছেন।
রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ দুই সউদী জানিয়েছেন, যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার বিরুদ্ধাচারণের গুজব পর্যন্ত মুছে দিতে সংকল্পবদ্ধ। তারা জোর দিয়ে বলেন যে, যুবরাজ মোহাম্মদ তার বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের খুব একটা ভয় পান না কারণ তিনি ইতিমধ্যে সামরিক, অভ্যন্তরীণ সুরক্ষা বাহিনী এবং জাতীয় রক্ষী সহ রাজ্যের অভ্যন্তরের সমস্ত ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করেন।
ওয়াশিংটনের ডিসির আরব গাল্ফ স্টেটস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টিন স্মিথ দিওয়ান বলেছেন, অবাক হওয়ার বিষয় যে বাদশাহ থাকতেও তিনি যুবরাজ আহমেদের বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন।
তবে, রাজদরবারের নিকটে থাকা যুবরাজ মোহাম্মদের দু’জন সমর্থক শনিবার জোর দিয়ে বলেন যে, তিনি পরিবারের দীর্ঘদিন ধরে অবিশ্বস্ত থাকা সদস্যদের প্রতি ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছেনে।
‘দেখে মনে হচ্ছে এমবিএস সমস্ত প্রতি›দ্বীকে নির্মূল করে দিচ্ছে’, হবু সউদী বাদশাহের নামের সংক্ষিপ্ত অংশ ব্যবহার করে মন্তব্য করেন রয়েল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ মাইকেল স্টিফেনস। তিনি বলেন, ‘তবে বিশ্বের কাছে তার কার্যকলাপের যথার্থতা প্রমাণ করা কঠিন হতে পারে।’ ‘সমস্যাটি হ›ল খাশোগি হত্যাকান্ডের পর থেকে সউদী আরব রাজ্যের প্রতি আস্থা খুব কম। সরকারী বর্ণনা কেউ বিশ্বাস করবে না।’
এর আগে, সিংহাসনের উপর নিজের দখল পোক্ত করার জন্য যুবরাজ মোহাম্মদ বিশাল রাজপরিবারে একাধিবার তার বিশেষাধিকার বলে ফাটল ধরিয়েছেন এবং তিনি রাজ্যের আধুনিক ইতিহাসে নজিরবিহীন ও নির্মম পদক্ষেপের একটি অব্যাহত উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেছেন।
২০১৬ সালে যুবরাজ ঘোষণার পর থেকে মোহাম্মদ বিন সালমানকে অঘোষিত শাসক বলে মনে করা হয়। ২০১৭ সালে সউদী রাজপরিবারের অনেক সদস্য, মন্ত্রী এবং ব্যবসায়ীকে রিয়াদের রিৎস-কার্লটন হোটেলে আটকে রাখা হয়, কারণ সউদী যুবরাজ তাদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থার অংশ হিসাবে তারা তাদের অধিকৃত বিশাল সম্পদের অর্থ ফেরত দেবে।
এছাড়াও, তিনি ইয়েমেনে পাঁচ বছরের সামরিক হস্তক্ষেপের নেতৃত্বও দিয়েছিলেন যা কোনও বিজয়ের রেশ ছাড়াই বিশ্বের সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করে। সউদী আরবের বাইরে, যুবরাজ ২০১৮ সালে ইস্তাম্বুলের সউদী কনস্যুলেটে সউদী এজেন্টদের দ্বারা জামাল খাশোগি নামে একজন বিরোধীতাকারী এবং ওয়াশিংটন পোস্ট কলামিস্টকে হত্যার সাথে সম্পৃক্ততার জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন