কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) নিজ দলের দুই নেতাকে সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে মারধর করে হল থেকে বের করে দিয়েছে শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। রোববার রাত নয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেশিয়ামে এ ঘটনা ঘটে। মারধরের শিকার দুই নেতা হলেন লোক প্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসাইন মাহী এবং একই বিভাগের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন শুভ। এদিকে মারধরের পর ভুক্তভোগীদের বিচার করতে উল্টো তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শাখা ছাত্রলীগ।
জানা যায়, রোববার সন্ধ্যার পর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই এলাহীর ফোন পেয়ে তার ভাইকে দেখতে বরুড়ায় তার বাড়িতে যান মমিন। এসময় মাহীসহ ৫-৬ জন নেতা-কর্মী সেখানে যান। গিয়ে দেখেন, রেজার ভাইয়ের সাথে এলাকায় একটি ঝামেলা চলছিলো। তবে ঝামেলার কথা শুনে চলে আসেন তারা। এদিকে বিষয়টি নিয়ে রাত নয়টার দিকে এ দুই নেতাকে জিমনেশিয়ামে ডাকেন শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদসহ অন্য নেতারা। সেখানে গেলে সভাপতি ও সম্পাদকের সামনেই এ দুই নেতাকে এলোপাথাড়ি চড়, লাত্থি, ঘুষি দিতে থাকেন নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক আশিক আব্দুল্লাহ, সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান পলাশ, শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের সাধারণ সম্পাদক রাফিউল আলম দীপ্ত, যুগ্ম সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ, ছাত্রলীগ নেতা মাসুম, ফিন্যান্স বিভাগের সালমান চৌধুরী, দত্ত হল ছাত্রলীগ কর্মী ও অর্থনীতি বিভাগের সিফাতসহ হল শাখার আরো ১০-১৫ জন নেতা-কর্মী। যাদের অনেকেই মারধরের শিকার শিক্ষার্থীদের জুনিয়র ছিলেন। এসময় জিমনেশিয়ামের যন্ত্র দিয়েও তাদের শরীরে আঘাত করে। এদিকে মারধরের পর এ দুই নেতাকে হল থেকে বের করে দেয় ছাত্রলীগ।
মারধরের শিকার ছাত্রলীগ নেতা মাহী বলেন, ‘বিকেলে মমিন আমাকে বলে যে ভাই বরুড়া যাব, চলেন। আমিও তার সাথে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি একটা ঝামেলা হচ্ছে। আমরা সে ঝামেলায় জড়াইনি। সেখান থেকে চলে আসি।’ মারধরের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
ছাত্রলীগ নেতা মমিন জানান, ‘রেজা ভাইয়ের পরিবারের সাথে আমার অনেক আগের সম্পর্ক। উনার ভাইয়ের সাথে ঝামেলা শুনে দেখতে যাই। সাথে মাহী ভাইসহ কয়েকজন আমার সাথে যায়। আমরা সেখানে গিয়ে তার ভাইকে দেখে চলে আসি। কিন্তু এখানে আসার পর কি থেকে কি হলো বুঝতে পারিনি। আমি শারীরিক ও মানসিকভাবে খুব অসুস্থ।’
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা-ই ইলাহী বলেন, ‘মমিনের সাথে আমার প্রায় ১০-১২ বছর ধরে সম্পর্ক পারিবারিকভাবে। আমার ভাইয়ের সাথেও খুব ভালো সম্পর্ক। তার বিপদের কথা শুনে ওরা দেখতে আসছিল। পরে চলে গেছে। কোন ঝামেলায় তারা জড়ায়নি। তাদের মারধর করা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ছাড়া কিছু না।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা বলেন, 'দুইজনকে প্রচুর মারধর করেছে কয়েকজন নেতা। হয়তো ভয়ে তারা কিছু বলবে না। বিষয়টি দুঃখজনক।’
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘তারা রেজার এলাকায় গিয়ে বাড়ি ঘর কোপাইসে। সংগঠনের অনুমতি ব্যাতীত তারা এলাকায় মারামারি করসে। ঐ এলাকার মানুষ আমাদের বলেছে। বিষয়টি নিয়ে পোলাপাইন ক্ষুব্ধ ছিল। এ কারণে মারসে। তবে তেমন মারে নি। পোলাপাইন যদি রাতে আবার হলে মারে এজন্য তাদেরকে আপাতত হলে না থাকার জন্য বলেছি। এছাড়া একজনের কাছে আমাদের সংগঠনেরই প্রায় হাজারখনেক স্ক্রীনশট আছে। এরা সংগঠনের ভিতর ঝামেলা করছে।’
শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মারধরের বিষয়টি স্বীকার করলেও সাধারণ সম্পাদক মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘কই, তাদেরকে তো কেউ মারে নি। মারার বিষয়টি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।’ তাহলে মারধর শেষে এক নেতার জামা কাপড় ছিড়ে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের সামনে ছিড়তে পারে না। নতুবা মানুষ আমাদের দোষ দিবে না?’ বিষয়টি বলে তিনি প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি এ বিষয়টি জানতাম না। এখন শুনেছি। কেউ অভিযোগ না করলে তো আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি না।’ ভয়ে যদি কেউ অভিযোগ না করে তাহলে কি প্রক্টরিয়াল বডি কোন ব্যবস্থা নিবে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ব্যবস্থা নেয়ার পর যদি তারা আবার অস্বীকার করে তাহলে আমরা কিভাবে ব্যবস্থা নিব। তবুও আমি বিষয়টি জেনে ব্যবস্থা নিব। আর ছাত্রলীগ তো কাউকে হল থেকে বের করে দিতে পারে না।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র জিমনেশিয়ামকে নিজেদের কার্যালয় হিসেবে ব্যাবহার করে আসছে শাখা ছাত্রলীগ। যার সবকটি চাবিই তাদের নেতা-কর্মীদের দখলে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছেও কোন চাবি নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা জিমনেশিয়াম ব্যাবহারের সুযোগ প্রায়ই পায় না। এ বিষয়ে বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলেও প্রশাসন এ নিয়ে কোন ব্যাবস্থা নেয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন