পানি, পয়ঃনিষ্কাশন ও রাস্তাঘাটের অভাবে বরিশাল সরকারি হাউজিং এস্টেটের অন্তত ২৫ হাজার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিগত তিন দশকেও এ হাউজিংয়ের উন্নয়নে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ বাস্তবসম্মত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। ফলে এ হাউজিং এলাকাটি কবে বসবাসের আদর্শ পল্লীর রূপ লাভ করবে তা বলতে পারছেন না কেউ। তবে নানা অজুহাতে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জমির মালিকদের বিভিন্ন ফি বৃদ্ধি করে চলেছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনও নূন্যতম কোন নাগরিক সুবিধা সৃষ্টি না করেও কর বৃদ্ধির রেকর্ড গড়ছে।
বরিশালে আদর্শ আবাসিক এলাকা তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭৯-৮০ সালে সরকার ভ‚মি হুকুম দখল ও তা উন্নয়নে প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় তৎকালীন বরিশাল পৌরসভার বাইরে সাগরদী এলাকার রূপাতলী মৌজায় ৫০ একর নিচু জমি হুকুম দখল করে তা উন্নয়ন করে গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ। ১৯৮৫-৮৬ সালের দিকে আবেদনকারীদের মধ্যে ২ কাঠা, সাড়ে ৩ কাঠা ও ৫ কাঠার ৪৭০টি প্লট বরাদ্ধ দেয়া হয়। কিন্তু পৌর এলাকার বাইরে এ আবাসিক পল্লীতে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের পানির লাইন, পাম্প হাউজ এবং ওভার হেড ট্যাঙ্ক নির্মাণ করেনি। পয়ঃনিষ্কাশনের জন্যও কোন ড্রেন নির্মাণ করেনি। এমনকি ২৫ ফুট ও ৩০ ফুট প্রশস্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তাও নির্মাণ করা হয় যেনতেনভাবে। নির্মাণ করা হয়নি কোন বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনও।
২০০২ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন গঠনের সময় এ হাউজিং এস্টেটসহ বিশাল এলাকা আওতাভুক্ত হয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান সেখানের আবাসন খাতে ঋণ মঞ্জুরি শুরু করে। ইতোমধ্যে ৯০ ভাগ ভ‚মি মালিক বাড়ি-ঘর নির্মাণও শুরু করেছে। তার অন্তত পঞ্চাশ ভাগে বসবাসও শুরু হয়েছে।
কিন্তু এরপরেই শুরু হয়েছে চরম বিপত্তি। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার অভাবে পুরো এলাকাটি ক্রমশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। বেশিরভাগ রাস্তাই সামান্য বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে যায়। যদিও সম্প্রতি সোয়া কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু সে কাজের মান নিয়ে প্লট মালিকদের অসন্তোষ রয়েছে। প্লট মালিকরা নিজেদের প্রয়োজনে গভীর নলকুপ খননের ফলে পুরো এলাকায় পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে এলাকার ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমশ নিচে নেমে যাওয়ায় আগামী দিনে ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের যে অফিসটি রয়েছে, সেখানে একজন উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী তার তেমন কোন ক্ষমতা নেই। বরিশাল ও খুলনা বিভাগ এবং ফরিদপুর অঞ্চলসহ ২১টি জেলা নিয়ে গঠিত গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের একমাত্র নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিসটি খুলনাতে। তহবিল সঙ্কটসহ গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের তেমন কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা না থাকায় বরিশালের এ হাউজিং এস্টেটের কোন উন্নয়ন লক্ষ্যও নেই।
এসব বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরিশাল হাউজিং এস্টেটের বাসিন্দারা। তাদের মতে হাউজিং কর্তৃপক্ষ নানা অজুহাতে ফি বৃদ্ধি করছেন অথচ নাগরিক সুবিধার দিকে নূন্যতম নজরও দিচ্ছেন না। এমনকি গত এক বছরে ভ‚মি হস্তান্তর ফি ১০ গুন বৃদ্ধি করা হয়েছে। অপরদিকে সিটি কর্পোরেশন এ হাউজিং থেকে বছরে অন্তত ৫০ লাখ টাকা কর আদায় করলেও এখানের রাস্তাঘাট, পয়ঃনিষ্কাশন ও বাতির বিষয়ে কোন নজর নেই বলেও অভিযোগ করেন একাধিক বাসিন্দা।
এসব বিষয়ে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের খুলনা-বরিশাল অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ ভূমি উন্নয়ন করে বরাদ্ধ দিয়ে থাকে। এরপরে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা কর আদায় ও তার নাগরিক সুবিধাসমূহ দেখভাল করার দায়িত্বে থাকে। বরিশাল হাউজিং এস্টেটে নতুন করে কর্তৃপক্ষের তেমন কিছু করণীয় নেই বলেও জানান তিনি। তবে বরিশাল হাউজিং এস্টেটে পানির লাইন ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কেন নির্মাণ করা হয়নি, তা তিনি বলতে পারেননি। প্রকল্পটি অনেক পুরানো বিধায় বিষয়টি সম্পর্কে তার দফতর অবহিত নয় বলেও জানান তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন